Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

চার বার দাঁড়িয়েও হারলেন অসিত, কমল ভোট

২০১১ সালে নির্দল প্রার্থী হয়ে পেয়েছিলেন ৫২,২৬৫টি ভোট। আর এ বার কংগ্রেসের টিকিটে দাঁড়িয়ে জোরদার প্রচারের পরেও জামানত বাজেয়াপ্ত হল অসিত মজুমদারের। তবে পরাজয়ের অভিজ্ঞতা নতুন নয় অসিতবাবুর কাছে। এর আগেও বার তিনেক বিধানসভা ভোটে দাঁড়িয়ে হেরেছেন তিনি। তবু ভোটে জেতার স্বপ্ন যায়নি। এমনকী, ২০১১ সালে জোটের প্রার্থীর বিরুদ্ধেই নির্দল হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন।

গণনাকেন্দ্রের বাইরে কড়া নজরদারি।

গণনাকেন্দ্রের বাইরে কড়া নজরদারি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বসিরহাট শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৩৩
Share: Save:

২০১১ সালে নির্দল প্রার্থী হয়ে পেয়েছিলেন ৫২,২৬৫টি ভোট। আর এ বার কংগ্রেসের টিকিটে দাঁড়িয়ে জোরদার প্রচারের পরেও জামানত বাজেয়াপ্ত হল অসিত মজুমদারের।

তবে পরাজয়ের অভিজ্ঞতা নতুন নয় অসিতবাবুর কাছে। এর আগেও বার তিনেক বিধানসভা ভোটে দাঁড়িয়ে হেরেছেন তিনি। তবু ভোটে জেতার স্বপ্ন যায়নি। এমনকী, ২০১১ সালে জোটের প্রার্থীর বিরুদ্ধেই নির্দল হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন। ভোটের টিকিট না পেয়ে তিনি দল ছাড়তে পারেন, এমন হুমকিও দিয়ে রেখেছিলেন বর্ষীয়ান এই নেতা। রবীন্দ্রভবনে রীতিমতো সভা করে সে কথা জানিয়ে দেন।

এ হেন অসিতবাবুর ভোটের ফল যে মারকাটারি হবে না, তা যেন এক রকম পূর্ব নির্ধারিতই ছিল। কারণ, তাঁর বিরুদ্ধে দলের একাংশই বার বার নানা অভিযোগ তুলেছে। সিপিএম নেতা গৌতম দেবের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত ‘হৃদ্যতা’ নিয়ে নানা গুঞ্জন ঘোরে বসিরহাটের বাতাসে। সেই সম্পর্ক নাকি বসিরহাট দক্ষিণ কেন্দ্রে সিপিএম প্রার্থী নারায়ণ মুখোপাধ্যায়ের বার বার জেতার পিছনে অনেক সময়ে বড় কারণ হয়েছে, এমন অভিযোগও উঠেছে। সে সব স্বভাবতই মানতে চান না অসিতবাবু। কিন্তু এর আগেও বসিরহাটের বিধানসভা ভোটে দলের প্রার্থী মনোমত না হওয়ায় নানা ভাবে গোঁসা দেখিয়েছেন তিনি। এক বার তো বকলমে এক নির্দল প্রার্থী দাঁড় করিয়ে দেওয়ারও অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। ভোট কাটাকাটিতে জয়ী হন সেই নারায়ণ মুখোপাধ্যায়ই।

এ বারও ভোটে অসিতবাবু পুরোদমে প্রচারে নেমেছিলেন বলে মানতে নারাজ তাঁরই দলের একাংশ। যে কারণে অসিতবাবুুর ভোট কমেছে বলে মনে করেন ওই নেতা-কর্মীরা। সেই ভোট আবার বিজেপির ঘরে গিয়েছে বলে দাবি তৃণমূলের। সব মিলিয়ে জয়ী হয়েছেন বিজেপি প্রার্থী শমীক ভট্টাচার্য। যদিও অসিতবাবু মনে করেন, ভোট বরং এ বার কমেছে বিজেপির। তুলনায় বেড়েছে তৃণমূলের। সে ক্ষেত্রে কংগ্রেসের ভোট কেটে কোন পক্ষে গিয়েছে, তা খতিয়ে দেখা দরকার।

অসিতবাবু থাকেন বসিরহাটের সাঁইপালায়। ডাকসাইটে এমন নেতার নিজের এলাকাতেও এ বার ‘লিড’ নিয়েছে বিজেপি। যা দেখেশুনে চোখ কপালে উঠছে অনেকেরই। অসিতবাবু গ্রামীণ এলাকাতেও প্রচারে পুরোপুরি গা ঘামাননি বলে ইতিমধ্যেই গুঞ্জন শুরু হয়েছে নানা মহলে। সে সব কথা অস্বীকার করে অসিতবাবু বলেন, “ভোট এ বার গ্রাম আর শহর ভাগ হয়ে গিয়েছে। সম্প্রদায়গত ভাবে ভোট হয়েছে। সে কারণেই আমাদের এই ফল। তা ছাড়া, তৃণমূলের চাপা সন্ত্রাস তো ছিলই।”

অসিতবাবুর বিরুদ্ধে নানা সময়ে পরিবারতন্ত্রের অভিযোগও উঠেছে। পুরসভায় নিজের আসনটি মহিলা সংরক্ষিত হয়ে যাওয়ায় তিনি স্ত্রী কৃষ্ণাদেবীকে ভোটে দাঁড় করিয়েছেন। জয়ী হয়ে পুরপ্রধানও হয়েছেন তিনি। অসিতবাবুর এক ভাই প্রাক্তন কাউন্সিলর। সেই আসনটি মহিলা সংরক্ষিত হওয়ায় ভাইয়ের স্ত্রী কাউন্সিলর হয়েছেন। এত সবের পরেও অবশ্য বসিরহাট পুর এলাকায় দীর্ঘ দিন ক্ষমতায় থেকে কংগ্রেস উন্নয়নের কাজ বিশেষ করে উঠতে পারেনি বলে অভিযোগ। কিছু দিন আগে আবার তিন বাম কাউন্সিলরের সহযোগিতায় বোর্ড ওল্টায় তৃণমূল।

বসিরহাটে একাধিক বার এসেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। এসেছেন মানস ভুঁইঞা, প্রদীপ ভট্টাচার্যের মতো রাজ্য স্তরের নেতারা। প্রচারে এসে তৃণমূল-বিজেপির-বামেদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেছেন তাঁরা। কিন্তু তাতে আখেরে বিশেষ সুবিধা হয়নি কংগ্রেসের।

কংগ্রেসের এক পুরনো কর্মীর টিপ্পনি, “চার বার হল। এখনও কী শখ মেটেনি অসিতবাবুর?”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE