দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে তোলা হচ্ছে তলিয়ে যাওয়া ছাত্রদের মধ্যে এক জনের দেহ। ছবি: বিকাশ মশান।
চোখের সামনে তলিয়ে যাচ্ছিল সহপাঠী। দেখে ব্যারাজের জলে ঝাঁপ দেন তিন ছাত্র। বন্ধুকে টেনে পাড়ের দিকে ঠেলেও নিজেরা আর টাল সামলাতে পারেননি। তলিয়ে গেলেন তিন জনই।
দুর্গাপুর ব্যারাজে রবিবার দুপুরে এই ঘটনার ঘণ্টা চারেকের মধ্যে এক এক করে উদ্ধার হয় ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পড়ুয়া নীতীশ কুমার (২২), আদিত্য রাজ (২২) ও চন্দ্রজিৎ কুমারের (২২) দেহ। যে বন্ধুকে বাঁচিয়ে তাঁরা ডুবে যান, হাসপাতালে মৃত্যু হয় শুভম পঙ্কজ (২২) নামে সেই ছাত্রেরও।
দুর্গাপুরের বি সি রায় ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের বি-টেক চতুর্থ বর্ষের পড়ুয়া শুভমের বাড়ি ঝাড়খণ্ডের পাকুড়ে। নীতীশ বিহারের কাটিহার, আদিত্য গয়া এবং চন্দ্রজিৎ পূর্ণিয়ার বাসিন্দা। ওই কলেজের চেয়ারম্যান দুলাল মিত্র বলেন, “মর্মান্তিক ঘটনা। ওই ছাত্রদের বাড়িতে খবর পাঠানো হয়েছে।” মৃতদের স্বজনেরা দুর্গাপুরের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন বলে জানান তিনি।
দুর্গাপুরের ফুলঝোড়ে এক সঙ্গে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতেন ওই কলেজের ১১ জন ছাত্র। সকলেই ভিন্ রাজ্যের বাসিন্দা। বিবেকানন্দ ঝা, রাজকুমার জায়সবাল, নিশান সৌরভেরা জানান, ভোটের জন্য পরীক্ষা পিছিয়েছে। পরীক্ষা শেষে জুনের প্রথম সপ্তাহে তাঁদের সকলের বাড়ি ফিরে যাওয়ার কথা। এ দিন ছুটির দুপুরে দু’টি অটো ভাড়া করে তাঁরা ব্যারাজে যান। কেউই সাঁতার জানতেন না। তবে গরমে ব্যারাজের জল তেমন গভীর হবে না বলে আশা করেছিলেন তাঁরা।
রাজকুমারদের কথায়, “ব্যারাজের ৪ নম্বর লকগেটের কাছে পৌঁছে সবার আগে জলে নেমে পড়ে শুভম। খানিকটা এগিয়েই ও তলিয়ে যেতে থাকে। তা দেখে জলে ঝাঁপ দেয় নীতীশ, আদিত্য ও চন্দ্রজিৎ। ওরা কোনও রকমে শুভমকে টেনে ধরে। পাড়ের দিকে কিছুটা ঠেলে দিলে উপর থেকে আমরা তাকে তুলে নিই। কিন্তু এরই মধ্যে আবার ওরা তিন জন তলিয়ে যায়।” তা দেখে বাকিরা কেউ আর জলে নামার সাহস পাননি।
চেঁচামেচি শুনে আশপাশের লোক জড়ো হন। শুভমকে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়। খবর যায় বড়জোড়া থানায়। ওই কলেজের ক্যাম্পাস অ্যাডমিনিস্ট্রেটর কর্নেল সমীর গঙ্গোপাধ্যায় ঘটনাস্থলে পৌঁছন। স্থানীয় বীরভানপুর গ্রামের কয়েক জন যুবক নৌকায় করে উদ্ধারকাজে নেমে পড়েন। জাল পেতে তল্লাশি চালিয়ে বিকেল ৪টে নাগাদ পরপর নীতিশ ও আদিত্যের দেহ মেলে। ঘণ্টাখানেক পরে চন্দ্রজিতের দেহ উদ্ধার হয়। পুলিশ তিনটি দেহ ময়না-তদন্তের জন্য বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজে পাঠায়। তার মধ্যে দুর্গাপুর হাসপাতালে মৃত্যু হয় শুভমেরও।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ব্যারাজের লকগেট থেকে জল দ্রুত বেগে নীচে আছড়ে পড়ার দরুণ বালি সরে গিয়ে গর্ত তৈরি হয়। ওই সব জায়গায় ব্যারাজের গভীরতা বেশি। যাঁরা নিয়মিত সেখানে নামেন, তাঁরা জলের রং দেখে বুঝতে পারেন, কোথায় কত গভীরতা। কিন্তু অন্য কারও পক্ষে তা বোঝা মুশকিল। প্রশাসন সতর্কতামূলক বোর্ড দিলেও তা ভ্রূক্ষেপ না করে অনেকেই স্নান করতে নেমে পড়েন। প্রশাসনের তরফেও নজরদারির ব্যবস্থা নেই। ফলে, মাঝে-মধ্যেই তলিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। যেমন ঘটল রবিবার। চলে গেল চারটি তাজা প্রাণ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy