হাসপাতালে এক খনিকর্তা। —নিজস্ব চিত্র।
অবৈধ সংযোগের চাপ সামলাতে না পেরে বিকল হয়ে গিয়েছে কোলিয়ারি আবাসনের ট্রান্সফর্মার। উচ্চ ক্ষমতার ট্রান্সফর্মার বসাতে হবে, এই দাবিতে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে খনির আধিকারিকদের মারধর করে অফিসে বন্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠল অন্ডালে। স্থানীয় এক তৃণমূল নেতা সোমবার সকালে এই ঘটনায় নেতৃত্ব দেন বলে অভিযোগ খনি কর্তৃপক্ষের।
মারধরে জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ইসিএলের কেন্দা এরিয়ার ছোড়া ৭/৯ নম্বর পিটের এজেন্ট অজয় সিংহ ও অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার সুভাষ রায়চৌধুরী। তাঁরা স্থানীয় তৃণমূল নেতা মিরাজ খান-সহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে পুলিশে মারধর ও হেনস্থার অভিযোগ করেছেন। অভিযুক্তদের মধ্যে দু’জন খনিকর্মী। এডিসিপি (পূর্ব) সুনীল যাদব জানান, যে পাঁচ জনের নামে অভিযোগ দায়ের হয়েছে, তাদের খোঁজ চলছে।
কোলিয়ারি সূত্রে জানা গিয়েছে, ছোড়া পঞ্চায়েতের কামারডাঙা এলাকায় খনিকর্মী আবাসনে ৪৮টি পরিবার বাস করে। সেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ৫০ কেভি-র একটি ট্রান্সফর্মার রয়েছে। এ ছাড়া আশপাশের শ’খানেক বাসিন্দা অবৈধ ভাবে সংযোগ নিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন। সেই সংযোগে গম ভাঙানোর যন্ত্র, মোটরবাইকে গ্যারাজ-সহ নানা দোকানপাটও চলে। বছরখানেক আগে ইসিএল অবৈধ সংযোগগুলি ছিন্ন করে দিয়েছিল। কিন্তু পঞ্চায়েত ভোটের পরপরই ফের তা জুড়ে নেন এলাকাবাসী। শীতের সময়ে কোনও সমস্যা হয়নি। কিন্তু গরমে বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়তেই ট্রান্সফর্মার বিকল হয়ে গিয়েছে। ফলে, খনি আবাসন-সহ আশপাশের এলাকা বিদ্যুৎহীন।
খনি কর্তৃপক্ষ জানান, এ দিন সকাল ৯টা নাগাদ তৃণমূল নেতা মিরাজ খানের নেতৃত্বে শ’খানেক লোক কোলিয়ারিতে পৌঁছন। তাঁদের মধ্যে জনা কয়েক খনিকর্মীও ছিলেন। তাঁরা ডুলি ওঠানামা বন্ধ করে দেওয়ায় উৎপাদন থেমে যায়। খবর পেয়ে সেখানে যান এজেন্ট অজয়বাবু ও অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার সুভাষবাবু। বিক্ষোভকারীরা তাঁদের ঘিরে ধরে দাবি জানান, ১০০ কেভি ক্ষমতার ট্রান্সফর্মারের ব্যবস্থা করতে হবে। অজয়বাবু জানিয়ে দেন, পুরনো ট্রান্সফর্মারটি সারাতে দেওয়া হচ্ছে। দিন পাঁচেকের মধ্যে বিদ্যুৎ মিলবে। কিন্তু উচ্চ ক্ষমতার ট্রান্সফর্মার বসানো তাঁদের এক্তিয়ারের বাইরে। এই দাবি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে।
এ নিয়ে বচসা চলাকালীন ঘটনাস্থলে পৌঁছন পিটের ম্যানেজার অসিতবরণ পাল। তিনিও জানিয়ে দেন, এই দাবি মেটানো তাঁদের ক্ষমতার বাইরে। অসিতবাবুর অভিযোগ, “মিরাজ এ কথা কিছুতেই মানতে চাইছিলেন না। তিনি বারবার দাবি করেন, ১০০ কেভি ট্রান্সফর্মার বসানোর লিখিত প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। অজয়বাবু তা সম্ভব নয় জানালে মিরাজ তাঁকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। এর পরে সুভাষবাবুকে চড়-লাথি মারা হয়। আমার মুখেও ঘুষি মারে ওরা। তার পরে আমাদের অফিসঘরে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে ছিটকিনি তুলে চলে যায়।”
অসিতবাবু জানান, মিনিট ৪৫ পরে পুলিশ এসে তাঁদের বের করে। অজয়বাবু ও সুভাষবাবুকে ইসিএলের ছোড়া হাসপাতালে পাঠানো হয়। অসিতবাবু বলেন, “দোষীদের দ্রুত ধরার দাবি জানিয়েছি পুলিশকে।” ইসিএল অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক দামোদর বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “অভিযুক্তদের ধরা না হলে আমরা আন্দোলনে নামব।”
তৃণমূল নেতা মিরাজ খান অবশ্য অভিযোগ মানেননি। তাঁর দাবি, “এলাকায় বিদ্যুৎ ও জল সরবরাহ করার কথা ইসিএলের। বিদ্যুৎ না মেলায় এলাকাবাসীর সঙ্গে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়েছিলাম। কিন্তু মারধরের কোনও ঘটনা ঘটেনি।” তিনি দলের যে নেতার ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত, পাণ্ডবেশ্বরের সেই জেলা পরিষদ সদস্য নরেন চক্রবর্তী বলেন, “মিরাজ আমাদের পুরনো কর্মী। সে এমন ঘটাবে বলে মনে করি না। কী হয়েছে খোঁজ নেব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy