Advertisement
২২ মার্চ ২০২৩
Purba Bardhaman

বাংলাদেশি সন্দেহে শিশু-সহ গ্রেফতার বর্ধমানের দম্পতি, মমতার হস্তক্ষেপ চান পরিবারের লোকেরা

অনুপ্রবেশকারী অভিযোগে বেঙ্গালুরুর জেলে দিন কাটছে বাংলার দম্পতি ও তাঁদের শিশুপুত্রের। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আবেদন জানাচ্ছে দম্পতির পরিবার।

বেঙ্গালুরুর জেলে বন্দি পূর্ব বর্ধমানের দম্পতি।

বেঙ্গালুরুর জেলে বন্দি পূর্ব বর্ধমানের দম্পতি। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জামালপুর শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০২২ ১৬:৩৪
Share: Save:

কাজ নিয়ে ভিন্‌রাজ্যে গিয়ে জেলে দিন কাটাচ্ছেন বাংলার এক দম্পতি। বন্দি দেড় বছর বয়সি তাঁদের শিশুপুত্রও। অভিযোগ, বাংলাভাষী ওই দম্পতিকে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী সন্দেহে গ্রেফতার করেছে কর্ণাটকের বেঙ্গালুরু পুলিশ। প্রায় তিন মাস ধরে একরত্তি শিশু আদিকে সঙ্গে নিয়ে বেঙ্গালুরুর একটি জেলে দিন কাটাচ্ছেন পলাশ অধিকারী ও শুক্লা অধিকারী। খবর পেয়ে বেঙ্গালুরু গিয়েছেন পলাশের বাবা পঙ্কজ অধিকারী এবং মা সবিতা অধিকারী। পুলিশকে ছেলে এবং বৌমার ভারতীয় নাগরিকত্বের সমস্ত প্রমাণপত্র দেখান। কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি বলে অভিযোগ করছেন তাঁরা। এই পরিস্থিতিতে ছেলে, বৌমা এবং নাতিকে ভিন্‌রাজ্যের জেল থেকে মুক্তির জন্য বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপের আবেদন করেছেন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা।

Advertisement

পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার জৌগ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার তেলে গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা পলাশরা। দুই কুঠুরি ভাঙাচোরা বাড়ি দেখলেই বোঝা যায় দারিদ্র ওই পরিবারের নিত্যসঙ্গী। বস্তুত, ওই এলাকার বেশির ভাগ মানুষই শ্রমিকের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। কেউ কেউ লেপ-তোশক তৈরি করেন। কেউ বিড়ি বাঁধার কাজ করে উপার্জন করেন। এমনই এলাকার বাসিন্দা পলাশ বাড়তি রোজগারের আশায় স্ত্রী-পুত্রকে নিয়ে বেঙ্গালুরু গিয়েছিলেন। সপরিবার এবং প্রতিবেশী সুনীল অধিকারীর সঙ্গে বেঙ্গালুরুর মারাথাল্লা মহকুমার ভাথুর থানার সুলিবেলা এলাকায় একটি বাড়িতে থাকতেন পলাশরা। দৈনিক ৩০০-৪০০ টাকা মজুরিতে তাঁরা এক জনের অধীনে কাজ করা শুরু করেন। হোটেল, রেস্তরাঁ, সিনেমা হল-সহ বিভিন্ন জায়গায় পড়ে থাকা বর্জ্যবস্তু, প্লাস্টিক ইত্যাদি কুড়িয়ে একটি জায়গায় জমা করতেন তাঁরা। সূত্রের খবর, গত ২৭ জুলাই পলাশদের বাড়িতে হানা দেয় পুলিশ। সেখানে বাংলাভাষী যাঁরা ছিলেন, সবাই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী, এই অভিযোগে পলাশ-সহ মোট ৭ জনকে পাকড়াও করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।

পলাশরা নিজেদের ভারতীয় বলে দাবি করেন। নিজেদের আধার কার্ড, প্যান কার্ড, ভোটার কার্ড দেখান। সে সব দেখে সেখানকার পুলিশ পলাশের বৃদ্ধ বাবা-মা ও প্রতিবেশীকে ছেড়ে দিলেও পলাশ এবং তাঁর স্ত্রীকে গ্রেফতার করে। পলাশের বৃদ্ধ বাবা-মায়ের দাবি, ভাষার সমস্যার জন্যই হয়তো ছেলে ও বৌমাকে আটকে রেখেছে পুলিশ। পলাশের বাবার কথায়, ‘‘ওখানকার পুলিশের সঙ্গে আমাদের কথা বলার ক্ষেত্রে ভাষাগত সমস্যা হচ্ছিল। ওরা আমাদের কথা যেমন বুঝতে পারছিল না, তেমনই আমরা ওদের কথা কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। তবুও বার বার বলে যাই যে, আমরা ভারতীয়। আদতে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের বাসিন্দা।’’

হুগলির বৈঁচিগ্রামের বাসিন্দা সুজন হালদার পলাশের আত্মীয়। তিনি বলেন,“পলাশ, ওর স্ত্রী এবং সন্তানের এমন করুণ অবস্থার কথা জেনে বেঙ্গালুরু যাই। কিন্তু কোন ভাবেই কিছু সুরাহা করতে পারছি না। যে আইনজীবীকে ওরা নিযুক্ত করেছে, তাঁর কাছ থেকেও সে ভাবে সহযোগিতা মিলছে না।

Advertisement

এ বিষয়ে জামালপুরের বিডিও জামালপুর শুভঙ্কর মজুমদার বলেন,“এমন একটা ঘটনার কথা আমি শুনেছি। বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। এসডিও (বর্ধমান দক্ষিণ) বিষয়টি দেখছেন।’’ জামালপুর বিধানসভার বিধায়ক অলোক মাজি বলেন, ‘‘পলাশ ও তাঁর পরিবার আমার বিধানসভা এলাকার তেলে গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা এবং ভোটার। ভারতীয় নাগরিকত্বের সমস্ত প্রামাণপত্রও তাঁদের কাছে রয়েছে। তা সত্ত্বেও কোন যুক্তিতে বেঙ্গালুরু পুলিশ ওঁদের আটকে রেখেছে সেটাই আশ্চর্যের।’’ তিনি জানান, কালীপুজো মিটলেই এই বিষয়টি নিয়ে জেলাশাসকের মাধ্যমে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.