Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

ঘুড়ি ধরতে ছুট, তারে পা জড়িয়ে মৃত্যু

রেলের উড়ালপুলে ঝালাইয়ের কাজ চলার জন্য বর্ধমান-কাটোয়া রাস্তার পাশ থেকে ইলেকট্রিকের একটি বোর্ডের মাধ্যমে বিদ্যুতের তার নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

অনিমেষের (ইনসেটে) মৃত্যুর পরে শোকস্তব্ধ পরিজনেরা। —নিজস্ব চিত্র।

অনিমেষের (ইনসেটে) মৃত্যুর পরে শোকস্তব্ধ পরিজনেরা। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান ও কাঁকসা শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:০৩
Share: Save:

কাটা ঘুড়ির পিছু নিয়েছিল সে। যেমন বাচ্চারা নেয়। কিন্তু পথেই পড়েছিল বিদ্যুৎবাহী তার, যা কাজে লাগানো হচ্ছে বর্ধমান স্টেশনের রেল উড়ালপুলের ঝালাইয়ে। তারে পা জড়াতেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ঢলে পড়ে অনিমেষ ঘোষ (১০)। মঙ্গলবার দুপুরে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে বর্ধমান শহরের বাজেপ্রতাপপুর শিবতলায়। কাছেই বাড়ি অনিমেষের। এ দিনই কাঁকসার একটি আবাসনে কাজ করতে গিয়ে খোলা তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন মহিলা-শ্রমিক মুরলি মুর্মু (৪২)। পরে ডাক্তারেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

রেলের উড়ালপুলে ঝালাইয়ের কাজ চলার জন্য বর্ধমান-কাটোয়া রাস্তার পাশ থেকে ইলেকট্রিকের একটি বোর্ডের মাধ্যমে বিদ্যুতের তার নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এ দিন সকালে শিবতলা এলাকায় বন্ধুদের সঙ্গে খেলছিল অনিমেষ। তখনই রাস্তায় কেটে পড়ছিল একটি ঘুড়ি। স্থানীয়দের অভিযোগ, ঘুড়ি ধরতে গিয়ে বিদ্যুতের তারে পা জড়িয়ে যায় অনিমেষের। সে রাস্তায় পড়ে যায়। স্থানীয় এক বধূ রাস্তার ধারে টিউবওয়েলে জল নিতে গিয়ে অনিমেষকে ওই অবস্থায় দেখে বাঁচাতে গেলে তিনিও জখম হন। চিৎকার শুনে এলাকাবাসী ওই দু’জনকে উদ্ধার করে বর্ধমান মেডিক্যালে নিয়ে যান। মহিলাকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হলেও, ডাক্তারেরা অনিমেষকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

বালকের মৃত্যুসংবাদ ছড়াতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাদের একটা বড় অংশের বক্তব্য, এর আগেও উড়ালপুলের কাজের সময় বর্ধমান স্টেশনের কাছে লোহার পাত পড়ে এক মহিলা পথচারী জখম হন। তারপরে এলাকা জাল দিয়ে ঘিরে কাজ হচ্ছিল। কিন্তু সব রকম সতর্কতা নেওয়া হলে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটত না। নিরাপত্তা রক্ষী বা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা ছাড়াই কাজ চলছে বলে অঘটনের সম্ভাবনা বাড়ছে। অনিমেষের বাবা বিকাশ ঘোষের কথায়, ‘‘উড়ালপুল তৈরির লোকজন সতর্ক থাকলে হয়তো এমন ঘটনা ঘটত না। আমার ছেলের মৃত্যুর পরে নিশ্চয় কর্তৃপক্ষের টনক নড়বে।’’

যদিও নির্মাণ সংস্থার আধিকারিক চিন্ময় ঘোষ অভিযোগ মানতে নারাজ। তাঁর দাবি, তাঁরা ওই এলাকায় টিনের ব্যারিকেড দিয়ে কাজ করছিলেন। কিন্তু স্থানীয় একটি মন্দিরে যাতায়াতের অসুবিধা হওয়ার যুক্তিতে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ প্রথম ব্যারিকেড তৈরিতে বাধা দেন। পরে ব্যারিকেড সরিয়ে তাঁরা শিবমন্দিরে যাওয়ার রাস্তা করে নেন। কোনও ভাবে সে দিক দিয়েই ছেলেটি কাজের জায়গায় চলে গিয়েছিল বলে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। বর্ধমান পুরসভার কাউন্সিলর মহম্মদ আলি বলেন, “উড়ালপুলের ঠিকাদার গোষ্ঠীকে আরও সতর্ক হয়ে কাজ করার জন্য বলা হয়েছে।’’ যুক্তি-তর্ক শোনার অবস্থায় ছিলেন না অনিমেষের মা অণিমা ঘোষ। বারবারই বলছিলেন, ‘‘ছেলেকে ওই দিকে যেতে নিষেধ করেছিলাম। কথা শুনল না। বিপদ আমার ঘরেই এল!’’

বিদ্যুতস্পৃষ্ট হয়ে প্রাণহানির অন্য ঘটনাটি কাঁকসার বামুনাড়া এলাকার একটি বহুতল আবাসনের। সে চত্বরে এ দিন মাটি কাটার কাজ করছিলেন মুরলিদেবী-সহ দু’জন। সহকর্মী লছমি মুর্মুর দাবি, দুপুরে খাওয়াদাওয়ার পরে আবাসনের পিছন দিকে একটি জায়গায় হাত, মুখ ধুতে গিয়ে পড়ে থাকা তারে পা দিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন মুরলি। চিৎকার শুনে তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন লছমিও। পরে তাঁর চিৎকার শুনে লোকজন এসে দু’জনকে উদ্ধার করে। কিন্তু হাসপাতালে ডাক্তারেরা মুরলিকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে এ দিন দেখা যায়, মুরলিদেবীর টিফিন-বক্স তখনও পড়ে রয়েছে রডের উপরে। আবাসনের বাসিন্দারা জানান, দীর্ঘদিন ধরেই সেখানে রডগুলি রাখা রয়েছে। যত্রতত্র পড়ে রয়েছে বিদ্যুতের তারও। আগেও সেখানে বেশ কয়েকজন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছেন। তবে কোনও ঘটনাই প্রাণঘাতী হয়নি। পুলিশ মৃতদেহ ময়না-তদন্তে পাঠিয়েছে। কী ভাবে দুর্ঘটনা ঘটল, দেখছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE