Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ছড়া শেখার সময়ে বোমা, রক্ষা শিশুদের

গ্রামের শেষ প্রান্তে থাকা ওই কেন্দ্রের কর্মী ফিরোজা খাতুন বলেন, ‘‘সকাল তখন পৌনে ১১টা। পড়াচ্ছিলাম। দেখি, পাশের মদনপুরের শ’খানেক লোক গ্রামের দিকে আসছে। প্রথমে ওরা ঢিল ছুড়়ছিল। আচমকা, বাচ্চারা যেখানে প়়ড়ছিল, তার থেকে মাত্র ৩০-৪০ ফুট দূরে একটা বোমা ফাটে।’’

এই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রেই বোমাবাজি হয়। —নিজস্ব চিত্র

এই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রেই বোমাবাজি হয়। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বারাবনি শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:০৭
Share: Save:

শীতের মরসুমে রোদ পোহাতে পোহাতে ‘দিদিমণি’ বলছেন, ‘এক এক্কে এক...।’ গলা মেলাচ্ছে সামনে থাকা ৪০ জন খুদে।

আচমকা ছন্দপতন! বোমা এসে পড়ল শিশুদের কাছেই। ঘটনাস্থল, পশ্চিম বর্ধমানের বারাবনির খোসনগর গ্রামের একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। শুক্রবার ওই কেন্দ্রের কর্মীদেরই তৎপরতায় রক্ষা পেয়েছে শিশুরা। তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্ব ও গ্রামবাসীর অভিযোগ, অবৈধ কয়লার কারবারকে কেন্দ্র করেই এই ঘটনা।

গ্রামের শেষ প্রান্তে থাকা ওই কেন্দ্রের কর্মী ফিরোজা খাতুন বলেন, ‘‘সকাল তখন পৌনে ১১টা। পড়াচ্ছিলাম। দেখি, পাশের মদনপুরের শ’খানেক লোক গ্রামের দিকে আসছে। প্রথমে ওরা ঢিল ছুড়়ছিল। আচমকা, বাচ্চারা যেখানে প়়ড়ছিল, তার থেকে মাত্র ৩০-৪০ ফুট দূরে একটা বোমা ফাটে।’’

শিশুরা ছোটাছুটি শুরু করে। ফিরোজা জানান, তিনি ও তাঁর দুই সহকর্মী বুলু বাউরি ও বিকিন মুর্মু শিশুদের নিয়ে দ্রুত কেন্দ্রেরই ঘরে ঢুকে দরজা-জানলা আটকে দেন। বিকিনরা জানান, বন্ধ ঘর থেকেই বাইরে আরও অন্তত তিনটি বোমা ফাটার আওয়াজ শোনা যায়। ‘‘প্রায় আধ ঘণ্টা বাদে গ্রামের লোকজনের গলা শুনি,’’ বলেন বুলুদেবী। আপাতত থামে গোলমালও।

শিশুদের সঙ্গে নিয়ে ফিরোজারা বাইরে আসেন। দেখেন, মাটিতে পড়ে বাচ্চাদের জন্য তৈরি খিচুড়ি। ফিরোজাদের দেখে ছুটে আসেন বাইরে জড়ো হওয়া অভিভাবকেরা ও গ্রামবাসী। খোসনগরের বাসিন্দা শেখ দিলদার, শেখ রসিদদের কথায়, ‘‘দিদিমণিরা না থাকলে বড় বিপদ ঘটে যেত।’’ ফিরোজাদের বক্তব্য, ‘‘বাচ্চাদের বাড়ি পাঠাতে গেলে বিপদ আরও বাড়ত। ওদের বাঁচানোটাই মূল লক্ষ্য ছিল।’’ অভিযোগ, একই চত্বরে থাকা একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও ঢিল

ছোড়া হয়েছিল।

কিন্তু কেন এই ঘটনা? খোসনগরের তৃণমূল নেতা শেখ রুস্তমের অভিযোগ, ‘‘কয়লা চুরিকে কেন্দ্র করেই গোলমাল। তা হয়েছে বারাবনি থানার পুলিশের সামনেই।’’ মদনপুরের তৃণমূল নেতা যাদব সাজির অভিযোগ, ‘‘এ দিন সকালে কয়লা-কারবার নিয়ে গোলমাল বাধে। আমাদের গ্রামের দুই পড়ুয়া-সহ তিন জনকে পুলিশের সামনেই মারধর করেন খোসনগরের লোকজন।’’

পরে আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এডিসিপি (পশ্চিম) অনমিত্র দাসের নেতৃত্বে বাহিনী ঘটনাস্থলে যায়। অনমিত্রবাবু বলেন, ‘‘খোসনগর ও মদনপুরের বাসিন্দাদের মধ্যে প্রায়ই গোলমাল হয়। আজ সকালেও মারামারি হয়েছে। তাই হয়তো এই ঘটনা। তদন্ত চলছে।’’

ঘটনার সঙ্গে কয়লা-চুরির কোনও যোগ রয়েছে কি না, সে বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে জেলাশাসক শশাঙ্ক শেঠি ও পুলিশ কমিশনার লক্ষ্মীনারায়ণ মিনাকে ফোন করা হলেও যোগাযোগ করা যায়নি। উত্তর মেলেনি এসএমএস-এর।

নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ। রাত পর্যন্ত কোনও পক্ষই অভিযোগও করেনি।

তবে এ সব গোলমালের পরেও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র তারা খুলবেনই, জানিয়ে দিলেন কর্মীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Barabani Bombing
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE