নিজস্ব চিত্র।
অতিমারি পরিস্থিতি এবং অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া। খুচরো বাজারে তেলের দাম তরতরিয়ে বাড়ছে। এই অবস্থার মধ্যেও এক টাকায় চপ আর তেলেভাজা বেচে স্বাচ্ছন্দ্যেই রয়েছেন পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের পাঁচড়ার হিমাংশু সেন।
পাঁচড়া গ্রামের দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা হিমাংশু। বাড়ির পাশেই রয়েছে তাঁর তেলেভাজার দোকান। ফুলুড়ি, শিঙাড়া, আলুর চপ, ভেজিটেবল চপ— মোটামুটি সবই পাওয়া যায় তাঁর দোকানে। আগে শুধু এই চপ, তেলেভাজাই বেচতেন হিমাংশু। ধীরে ধীরে ব্যবসা মাথা তুলে দাঁড়াতেই এখন দু’টাকায় ঘুগনিও বেচা শুরু করেছেন তিনি। আজকাল রসগোল্লা, পান্তুয়া, ল্যাংচা, মাখা সন্দেশও অল্পস্বল্প রাখছেন দোকানে। যদি তেলেভাজা খাওয়ার পর কারও একটু মিষ্টি খেতে ইচ্ছে করে, সেই ভেবে।
দোকান সামলান মূলত হিমাংশুর স্ত্রী বন্দনা, ছেলে কাশিনাথ ও পুত্রবধূ শম্পা। প্রতিদিন নিয়ম মেনে দুপুর তিনটেয় দোকান খোলে। তার পর থেকেই ক্রেতাদের আসা-যাওয়া লেগেই থাকে। রাত ৯টা পর্যন্ত এক মুহূর্তও ফুরসত পান না কেউ। এই ব্যবসা গত ৩০ বছর ধরে চালাচ্ছেন হিমাংশু। প্রবল অর্থকষ্টের মুখে এই দোকান খুলেছিলেন তাঁর বাবা বিশ্বনাথ সেন। শুরুতে ৮০ পয়সায় চপ বেচা শুরু করেছিলেন বিশ্বনাথ। তার বেশ কয়েক বছর ২০ পয়সা দাম বাড়িয়ে চপের দাম ১ টাকা করেছিলেন হিমাংশু। সেই থেকেই এই দামে চপ বিক্রি করছে সেন পরিবার।
হিমাংশু জানিয়েছেন, সাধারণত গরিব, নিম্নবিত্তরাই তাঁর দোকানে আসেন। তাঁরা ওই এক টাকার চপ আর দু’টাকার ঘুগনি পেলেই খুশি। মাঝে মাঝে দূরের লোকজনও আসেন তাঁর দোকানে। প্রত্যেক দিন প্রায় ১০ কেজি ময়দার চপ, তেলেভাজা তৈরি হয়। এর সঙ্গে লাগে এক বস্তা আলু, ৫ কেজি মটর, হাজার টাকার সর্ষের তেল। সব মিলিয়ে হিমাংশুর দিনে খরচ হয় সাড়ে তিন হাজার টাকার মতো। আর চপ, তেলেভাজা, ঘুগনি বেচে তাঁর দিনের শেষে লাভ হয় ৫০০-৭০০ টাকা। তাই দিয়েই মোটামুটি আরামে চলে যাচ্ছে হিমাংশু-বন্দনাদের।
এখন জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় খানিক সমস্যা হলেও এই বিষয়টি নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামাতে চাইছেন না হিমাংশু। অতিমারি সঙ্কটেও লড়ে যাচ্ছেন তাঁরা। বেকার যুবক-যুবতীদের জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে তাঁরা দেখিয়ে দিচ্ছেন, এক টাকায় চপ বেচেও অর্থকষ্ট দূর করা যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy