Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ব্যবসার ফাঁদে প্রতারণা, ধৃত ভুয়ো অফিসার

চার জনের একটি দল। এক জন দালাল, এক জন কাস্টমস অফিসার, বাকি দু’জন আর্দালি ও গাড়ির চালক। পুরোটাই ভুয়ো। ব্যবসায়ীদের কম দামে কাঁচামাল পাইয়ে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে লক্ষ-লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়াই ছিল তাদের কারবার। তবে শেষ রক্ষা হয়নি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:৪৪
Share: Save:

চার জনের একটি দল। এক জন দালাল, এক জন কাস্টমস অফিসার, বাকি দু’জন আর্দালি ও গাড়ির চালক। পুরোটাই ভুয়ো। ব্যবসায়ীদের কম দামে কাঁচামাল পাইয়ে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে লক্ষ-লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়াই ছিল তাদের কারবার। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের গোয়েন্দা বিভাগের হাতে ধরা পড়ে গেল চার জনই।

উত্তরপ্রদেশের লখনউ থেকে ধরা পড়েছে রঞ্জিৎ সিংহ। তার বাড়ি বিহারের পটনার বঙ্কিপুরে। বাকি তিন জন চুঁচুড়ার মানসপুরের মিহির পাল, খানাকুলের নন্দনপুরের প্রদীপ মাইতি ও চন্দননগরের অহীন্দ্র রায়। পুলিশ জানায়, অহীন্দ্র কাস্টমস অফিসার সাজত। ব্যবসায়ীদের টোপ দেখিয়ে যোগাযোগের কাজ করত রঞ্জিত। বাকি দু’জনের এক জন আর্দালি, এক জন গাড়ি চালক।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার সূত্রপাত ১৫ অগস্ট। সে দিনই প্রথম দুর্গাপুরে এসেছিলেন মুম্বইয়ের ব্যবসায়ী নরেন্দ্র সোমানি। লোহা, তামার ‘স্ক্র্যাপ’ কেনাবেচার বড় ব্যবসা আছে তাঁর। দালালদের মাধ্যমে তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় রঞ্জিত সিংহের সঙ্গে। রঞ্জিত তাঁকে জানায়, তার সঙ্গে কাস্টমস অফিসারের যোগসাজশ আছে। কম দামে কাস্টমসের নিলামের জিনিস পাইয়ে দেওয়ার ক্ষমতা আছে তার। রঞ্জিতের পাতা ফাঁদে পা বাড়ান নরেন্দ্র। দুর্গাপুরে জাতীয় সড়কের ধারে একটি শপিংমলের হোটেলে বেশ কয়েক বার বৈঠক হয়। সঙ্গে ছিল অঢেল খাওয়াদাওয়ার আয়োজন। খরচ জুগিয়েছিলেন নরেন্দ্র। কারণ, তখন তিনি ব্যবসায় চড়া মুনাফা দেখছেন।

দু’দিনেই নরেন্দ্র বিশ্বাস করে ফেলেন রঞ্জিত। সেটা বুঝেই কাজ হাসিলের ছক কষে নেয় সে। রঞ্জিত জানায়, নরেন্দ্রবাবু যে বড় ব্যবসায়ী, তাঁর যে জিনিস কেনার মতো টাকা আছে সে ব্যাপারে কাস্টমস অফিসারের বিশ্বাস অর্জন করতে হবে। সে জন্য নমুনা হিসেবে কিছু টাকা জমা দিতে হবে তাদের কাছে। তবে টাকার ব্যাগ রাখা থাকবে নরেন্দ্রের কাছেই। শুধু ব্যাগের চাবিটি থাকবে তাদের কাছে। ব্যবসায়িক লেনদেন সম্পূর্ণ হলে চাবিটি তাঁকে দিয়ে দেওয়া হবে। এর পরে চার জনের সঙ্গে একটি গাড়িতে চড়েন নরেন্দ্রবাবু। সেখানে তাঁর কাছ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা নিয়ে একটি ব্যাগে ঢোকাতে শুরু করে রঞ্জিত। বাকিরা তখন নরেন্দ্রবাবুর সঙ্গে গল্পে মশগুল। কিছুক্ষণের মধ্যেই ব্যাগটি নরেন্দ্রেবাবুর হাতে তুলে দিয়ে চাবিটি নিজেদের কাছে রেখে দেয়। টাকার ব্যাগ নিজের হেফাজতে থাকায় ঘুণাক্ষরেও সন্দেহ করেননি নরেন্দ্র।

১৭ অগস্ট সকালে নির্দিষ্ট ঠিকানায় তামার স্ক্র্যাপ পৌঁছনোর কথা ছিল। কিন্তু দুপুর গড়িয়ে যাওয়ার পরেও তা আসেনি। ফোন করে নরেন্দ্র দেখেন, সব মোবাইল বন্ধ। এর পরেই সন্দেহ হওয়ায় তিনি ব্যাগের তালা ভেঙে ফেলেন। দেখেন, ব্যাগে টাকা নেই। টাকার মাপে কাগজ কেটে ব্যাগ ভরে দেওয়া হয়েছে। সে দিনই দুর্গাপুর থানায় অভিযোগ করেন তিনি। কমিশনারেটের গোয়েন্দা বিভাগ তদন্ত শুরু করে। মোবাইলের সূত্র ধরে একে একে চার জনেরই হদিস মেলে। এসিপি (গোয়েন্দা বিভাগ) কল্যাণ রায় বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়ে নানা জায়গা থেকে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে আনা হয়েছে।’’ ধৃতদের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, প্রতারণা, বিশ্বাসভঙ্গ করে অপরাধের মামলা রুজু হয়েছে। বুধবার ধৃতদের দুর্গাপুর আদালতে তোলা হলে ১৪ দিন জেল-হাজতে পাঠানো হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

fraudery imposter
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE