ভিন্ রাজ্য পেরিয়ে অস্ত্র ঢুকছে, ভোটের আগেই সে খবর পেয়ে নড়চড়ে বসছিল পুলিশ-প্রশাসন। সেই দুষ্কর্মে যে ভাটা পড়েনি, নানা অপরাধে অভিযুক্ত দু’জনকে পুলিশ গ্রেফতার করার পরে তা সামনে এসে গিয়েছে। শুধু অস্ত্র বেচাকেনা নয়, অপরাধ করে সীমানা পেরিয়ে গা ঢাকা দেওয়া যে বন্ধ হয়নি, পরিষ্কার হয়েছে তা-ও।
সম্প্রতি কুলটির বড়িরা গ্রামের কাছে এক জঙ্গল থেকে গ্রেফতার করা হয় ওসমান মিঞা ও অ্যাঙ্কর দাস নামে দু’জনকে। ধৃতদের জেরা করে বহু তথ্য মিলেছে বলে পুলিশ জানায়। পুলিশের দাবি, ওসমান অস্ত্রের পুরনো কারবারি। বিহারের মুঙ্গেরে একটি বন্দুক তৈরির কারখানায় তার প্রথম হাতেখড়ি। বছরখানেক গ্রামে ফিরে নিজেই একটা অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের কারখানা খুলে বসে বিহারের দেওঘরের মার্গেমুন্ডা থানার কিসুনপুরের বাসিন্দা ওসমান। শুধু কারখানা গড়া নয়, আশপাশের এলাকায় বেশ কারবারিকে আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি করা শিখিয়ে পাণ্ডা হয়ে বসে সে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অবৈধ অস্ত্র ছাড়াও জালনোট তৈরি, মোটরবাইক চুরি, লুঠ, খুনের মতো নানা অভিযোগ রয়েছে ওসমানের বিরুদ্ধে। অ্যাঙ্কার দাস তার সঙ্গী। পুলিশের দাবি, ওসমান নিজের কারখানায় তৈরি অস্ত্রগুলি বিহার, উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড এবং এ রাজ্যে বিক্রি করে। মাসখানেক আগে বিহারের মধুপুরে একটি পেট্রোল পাম্পে লুঠপাট চালিয়ে দু’জনকে খুন করেছে বলে স্বীকার করেছে জেরায়, দাবি পুলিশের। সেই ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্র ওসমানেরই তৈরি বলে জেনেছে পুলিশ।
বিহার পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মাস কয়েক আগে মধুপুর স্টেশন থেকে বেশ কিছু আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়। সেগুলি সবও ওসমানের তৈরি। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কিসুনপুর গ্রামে এ পর্যন্ত বার তিনেক অভিযান চালিয়ে পুলিশ ওসমানের হেফাজতে থাকা বহু ওস্ত্র বাজেয়াপ্ত করেছে। সে মোটরবাইক চুরির কারবারেও জড়িত বলে দাবি পুলিশের। চোরাই মোটরবাইকগুলি সে বিভিন্ন অপরাধের ঘটনায় ব্যবহার করত।
ওসমানের সঙ্গে ধৃত অ্যাঙ্কারও দাগি অপরাধী বলে কুলটি পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। সে গত তিন মাস ধরে হিরাপুরের বাবুয়াতলাও এলাকায় থাকছিল। বিহার, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশের পাশাপাশি সে নিয়মিত এ রাজ্যে নানা অপরাধমূলক কাজকর্ম করতে যাতায়াত করত বলে জেনেছে পুলিশ। সম্প্রতি সে রকম উদ্দেশ্যেই কুলটিতে জড়ো হয়েছিল বলে পুলিশের দাবি। বিহার পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শার্প শ্যুটার বলে পরিচিত অ্যাঙ্কারের বাড়ি আদতে মার্গেমুন্ডার ফুলচি গ্রামে। পুলিশের দাবি, সে বিহার, ঝাড়খণ্ড ও বাংলা সীমানা এলাকায় নানা লুঠ, খুন-জখমের ঘটনায় জড়িত।
কমিশনারেট সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দু’জনের কাছে বেশ কিছু জালনোট বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, ধৃতদের জেরা করে জানা গিয়েছে, উত্তরবঙ্গের নানা অঞ্চল দিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে সেগুলি এ রাজ্যে ঢুকছে। তাদের থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কুলটি থানা এলাকা থেকে সমীর বাউড়ি নামে এক ব্যক্তিকে জালনোট কারবারের অভিযোগে গ্রেফতারও করা হয়েছে। ওসমান, অ্যাঙ্কর পুরুলিয়ার এক ব্যবসায়ীকে অপহরণের ছক কষে এসেছিল বলে জেরায় জানা গিয়েছে, দাবি পুলিশের। কমিশনারেটের এডিসিপি (পশ্চিম) বিশ্বজিৎ মাহাতা বলেন, ‘‘ধৃতদের জেরা করে বিহার, ঝাড়খণ্ডে নানা অপরাধে জড়িত থাকার হদিস মিলেছে।’’ গ্রেফতার হওয়ার পরে বিহার পুলিশ ধৃতদের ট্রানজিট রিমান্ডেও নিয়েছে।
তবে এ ভাবে অহরহ সীমানা পেরিয়ে দুষ্কর্ম করে যাওয়ার নমুনা পেয়ে পুলিশ কর্তারাও চিন্তায়। ভোটের সময়ে সীমানা এলাকায় আনাগোনা নজরে রাখতে নানা ব্যবস্থা হয়েছিল। কিন্তু এখন তা আবার খানিকটা ঢিলেঢালা হয়ে গিয়েছে বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। কমিশনারেটের এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘রাজ্যের সীমানায় টহল আরও কড়া করা হবে। দুষ্কৃতী আনাগোনা বন্ধ করতে পার্শ্ববর্তী রাজ্যের পুলিশের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy