Advertisement
E-Paper

কটূক্তি বা ব্যাগে টান, পথেই বিপদ

স্কুলে আসার পথে ব্যাগ টানাটানি। ফেরার পথে মোটরবাইকে পিছু নেওয়া, কখনও কটূক্তি— বর্ধমান শহরের বহু ছাত্রীকেই রোজকার যাতায়াত করতে হয় এ ভাবে।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৬ ০১:৪০
অঙ্কন: মনীশ মৈত্র।

অঙ্কন: মনীশ মৈত্র।

স্কুলে আসার পথে ব্যাগ টানাটানি। ফেরার পথে মোটরবাইকে পিছু নেওয়া, কখনও কটূক্তি— বর্ধমান শহরের বহু ছাত্রীকেই রোজকার যাতায়াত করতে হয় এ ভাবে।

‘রোমিও’দের সাহস আরও একটু বাড়লে ছাত্রীদের কেউ ভয়ে রাস্তার পাশের দোকানে ঢুকে পড়ে, কেউ উর্দ্ধশ্বাসে দৌড়ে হাঁফাতে হাঁফাতে বাড়ি পৌঁছয়। এমনকী ‘রোমিও’দের জ্বালায় পুলিশও ডাকতে হয়েছে অনেক স্কুল কর্তৃপক্ষকে।

মাসখানেক আগেই বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের তারাবাগ ক্যাম্পাসের হস্টেলে থাকা ছাত্রীরা যাতায়াতের পথে কয়েকজন যুবকের নিয়মিত অভব্যতার অভিযোগ তুলেছিলেন। ছাত্রীদের দাবি, ক্যাম্পাসে ঢোকা বা বেরোনোর মুখে তাঁদের ওড়না ধরে টানা, কটূক্তি করা, পিঠে চড় মারা নিয়মিত হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কোনও ভাবেই তা বন্ধ করা যায়নি। অগত্যা জোট বেঁধে যাতায়াত করে সমাধান খুঁজেছিলেন তাঁরা। দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার ও নিরাপত্তার দাবিতে মিছিল করে গিয়ে থানায় স্মারকলিপিও দেন। আপাতত ক্যাম্পাসে ঢোকার মুখে পুলিশের একটি পোস্ট বসেছে।

ছাত্রীদের অভিযোগ, তাহলে কী বড় ঘটনা না ঘটলে বা শহরকে জানিয়ে প্রতিবাদ না করলে হুঁশ ফিরবে না পুলিশের। একই প্রশ্ন তুলছেন ভুক্তভোগী স্কুল ছাত্রীদের বাবা-মায়েরাও। তাঁদেরও প্রশ্ন, ওই ছাত্রীদের মতো পথে না নামলে বা জোট বেঁধে হাতে গাছের ডাল নিয়ে না ঘুরলে কী ব্যবস্থা নেবে না পুলিশ। তাঁরাই জানান, কয়েক মাস আগে স্কুলে আসার পথে দশম শ্রেণির এক ছাত্রীর ব্যাগ ধরে টানাটানি করছিল কয়েকজন যুবক। স্কুল ছুটির পরে ওই ছাত্রীর পিছু নেয় মোটরবাইকে থাকা তিন যুবক। উড়ে আসে কটূক্তি। ভয়ে ওই স্কুল ছাত্রী একটি দোকানে ঢুকে পড়ে। বাড়িতে ফোন করে বিষয়টি জানান ওই দোকানের মালিক। তারপর বাড়ির লোকেরা এসে নিয়ে যান মেয়েটিকে। এই ঘটনার পর স্কুলে প্রায় দু’সপ্তাহ পা রাখেনি ওই ছাত্রী। এখনও স্কুলে কিংবা টিউশনে অভিভাবকদের সঙ্গেই যাতায়াত করে সে।

বর্ধমান শহরের পাশাপাশি কাটোয়া, কালনাতেও এমন অভিযোগ শোনা যায়। বিভিন্ন গ্রাম থেকে কালনার স্কুলে পড়তে আসে অসংখ্য ছাত্রী। তাদের একটা বড় অংশ আসে ট্রেনে। তাঁদের কথায়, ট্রেনে মহিলা কামরায় না উঠলেও নানা স্টেশনে, স্টেশন থেকে স্কুলে যাওয়ার রাস্তায় দেখা মেলে ‘রোমিও’দের। ওই যুবকদের কেউ স্টেশন থেকে কয়েক হাত দূরে মোটরবাইকের উপর বসে চুল ঠিক করতে করতে বা কখনও সানগ্লাসটা নাকের উপর রেখে নানা রকম মন্তব্য ছুঁড়তে থাকে। কারও কারও পিছু নিয়ে নানা ভাবে উত্যক্তও করে। কালনার এক ছাত্রী বলে, “একা স্কুল বা কলেজ আসার সাহস এখনও আমরা করতে পারি না। দল বেঁধে এলেও বিরক্ত করে, তবে তুলনায় অনেকটা কম।’’ বছর খানেক আগে কাটোয়ার এক স্কুলের অভিভাবকেরা প্রশাসনের কাছে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছিলেন, স্কুলের সামনে এবং পিছনের রাস্তায় একদল যুবক দাঁড়িয়ে থাকে। যাতায়াতের পথে ছাত্রীদের অশালীন মন্তব্য করে। পুলিশ কিছুদিন দৌড়ঝাঁপ করলেও পরিস্থিতি এখনও বিশেষ বদলায়নি। তবে কাটোয়া-কালনার চেয়ে বর্ধমান শহরের পরিস্থিতি অনেকটাই উদ্বেগের—বিভিন্ন মহিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষিকাদের কথাতেই বোঝা যায়।

শহরের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা কৃষ্ণা সাহা বলেন, “ওই সব যুবকদের জন্য স্কুলে পড়াশুনো ব্যাহত হয়। অনেক সময় পুলিশ ডাকতে হয়। স্থানীয় বাসিন্দারাও ওই সব যুবকদের তাড়িয়ে দেন। আমাদেরও স্কুল থেকে বেড়িয়ে যুবকদের তাড়াতে হয়।’’ তবে, এলাকার মানুষজন সচেতন থাকলে ওই যব যুবকেরা দাঁড়ানোর সাহস পাবে না বলেও তাঁর মত। আর এক স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা স্বাগতা মণ্ডলের দাবি, “শুধু ছাত্রীরা নয়, শিক্ষিকারাও এই সমস্যায় আক্রান্ত। শুধু পুলিশ দিয়ে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। এর জন্য কুইক রেসপন্স টিম তৈরি করতে হবে। একটা ইউনিক নম্বর দিতে হবে। যাতে ফোন করলেই দ্রুত ওই টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারে।”

পুলিশের দাবি, তারাবাগের ক্ষেত্রে পুলিশ পোস্ট করে দেওয়া হয়েছে। অন্য জায়গাতেও বিষয়টি নজরে রাখা হবে।

harassment roadside-goons
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy