Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

খোসবাগানে ভুল বুঝিয়ে ছানি কাটা, নালিশ বৃদ্ধের

‘স্বাস্থ্যবীমা’র কার্ড থেকে টাকা তুলতে ‘ভুল বুঝিয়ে’ ছানি অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। অস্ত্রোপচারের তিন দিন পরেও চোখের দৃষ্টি আসেনি।— বর্ধমানের খোসবাগানের একটি পলিক্লিনিকের বিরুদ্ধে এমনটাই অভিযোগ করেছেন মঙ্গলকোটের চৈতন্যপুরের বাসিন্দা, বৃদ্ধ শান্তিরাম মাঝি।

শান্তিরাম মাঝি। নিজস্ব চিত্র

শান্তিরাম মাঝি। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:৩৪
Share: Save:

‘স্বাস্থ্যবীমা’র কার্ড থেকে টাকা তুলতে ‘ভুল বুঝিয়ে’ ছানি অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। অস্ত্রোপচারের তিন দিন পরেও চোখের দৃষ্টি আসেনি।— বর্ধমানের খোসবাগানের একটি পলিক্লিনিকের বিরুদ্ধে এমনটাই অভিযোগ করেছেন মঙ্গলকোটের চৈতন্যপুরের বাসিন্দা, বৃদ্ধ শান্তিরাম মাঝি।

বৃহস্পতিবার বর্ধমানের জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) ও মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ)-র কাছে অভিযোগে শান্তিরামবাবু জানান, গত মঙ্গলবার তিনি চোখের ডাক্তার দেখাতে খোসবাগানে যান। সেই সময় এক মহিলা তাঁকে একটি পলিক্লিনিকে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসকেরা জানান, ছানি অস্ত্রোপচার করতে হবে। শান্তিরামবাবুর দাবি, “অস্ত্রোপচার শুনে ভয় পেয়ে যাই। আমি বলি, ঘর থেকে কেউ আসেননি। ও সব আমি করাবো না।’’ শান্তিরামবাবুর দাবি, এ কথা বলার পরে সেখানের লোকজন জানান, ওই মহিলাই সব ব্যবস্থা করে দেবেন। তার পরে গ্রাম সূত্রে পরিচিত, খোসবাগানেরই বাসিন্দা আভাষ ভট্টাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে চান ওই বৃদ্ধ। কিন্তু তাতেও বাধা দেওয়া হয়। বৃদ্ধের অভিযোগ, ‘‘এর পরে আমার কাছে থাকা স্বাস্থ্যবীমার কার্ড ও ভোটার কার্ড নিয়ে বাঁ চোখে অস্ত্রোপচার করে দেওয়া হয়।” অভিযোগপত্রে বৃদ্ধের দাবি, অস্ত্রোপচারের দু’ঘণ্টা পরে ‘ছুটি’ দেওয়া হয়। সেই সময়েও খোসবাগানের ওই পূর্ব পরিচিতের সঙ্গে দেখা করতে চাইলে তাঁকে পলিক্লিনিকের দু’জন বাসে করে চৈতন্যপুর গ্রামে পৌঁছে দেন বলে দাবি বৃদ্ধের।

শুক্রবার বিকেলে চৈতন্যপুরে বাড়িতে বসে শান্তিরামবাবু দাবি করেন, ‘‘চারিদিকে হইচই হচ্ছে দেখে পলিক্লিনিকের লোক এসে বীমার কার্ড ও ভোটার কার্ড ফিরিয়ে দিয়ে গিয়েছেন। অথচ ওনারা বলেছিলেন, শনিবার কার্ড দু’টো ফেরত দেওয়া হবে।’’ যদিও ওই পলিক্লিনিকের কর্ণধার আবীর গুহের দাবি, কার্ড আটকে রাখা হয়নি। তবে তাঁর দাবি, ‘‘সংস্থার বাইরে কী হয়েছে, তা আমার দেখার বিষয় নয়। তবে ওই মহিলা আমাদের কর্মী। তিনি ভুল বুঝিয়ে ওই বৃদ্ধকে আমাদের কাছে আনার জন্য ওনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি।”

এই ঘটনার খবর চাউর হতেই বিষয়টি নিয়ে ও খোসবাগানে দালাল-দৌরাত্ম্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বৃদ্ধের পরিচিত আভাষবাবু ও স্থানীয় সমাজকর্মী কিশোর রুদ্ররা। আভাষবাবুর প্রশ্ন, “কোনও রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই কী ভাবে অস্ত্রোপচার করা সম্ভব?” কিশোরবাবুর অভিযোগ, ‘‘খোসবাগানের পলিক্লিনিক বা নার্সিংহোমগুলি দালাল রাখে। ওই সব দালালরাই ভুল বুঝিয়ে অস্ত্রোপচার করিয়েছে।”

প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব বিষয়টি সিএমওএইচ প্রণব রায়কে দেখার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। প্রণববাবু বলেন, ‘‘জেলাশাসকের নির্দেশ মতো কমিটি তৈরি করে অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে। কোনও ত্রুটি মিললে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

অস্ত্রোপচারের তিন দিন পরেও চোখের দৃষ্টি ফেরেনি বলে জানিয়েছেন ওই বৃদ্ধ। এর জেরে আশঙ্কায় তাঁর পরিবার। তাঁর স্ত্রী ভাগুদেবীর প্রশ্ন, “চোখে ফের দেখতে পাবে তো? তা না হলে তো কাজেও যেতে পারবে না, খেতেও পাব না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Eye Operation Complaint
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE