Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Organ

দু’টো লোক বাঁচুক, ইচ্ছা দেহদানের

ভাতার থানার বেলডাঙা গ্রামের জ্যোৎস্না মল্লিক গ্রামেরই প্রাথমিক স্কুলের মিড-ডে মিল রান্না করেন। ১৪ বছর আগে তাঁর স্বামী মারা যান। দুই ছেলে সুমন ও সুখেন চাষাবাদ করেন।

জ্যোৎস্না মল্লিক। নিজস্ব চিত্র

জ্যোৎস্না মল্লিক। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৮ ০২:০৩
Share: Save:

সপ্তাহ দু’য়েক আগে চিকিৎসার জন্য বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে এক প্রৌঢ়া জানতে পারেন, মরণোত্তর দেহদান করলে ভাল হয়। বাড়ি এসে চিন্তাভাবনা করেন। প্রাথমিক স্কুলের গণ্ডি না-পেরনো সেই মহিলা হাসপাতালে গিয়ে মরণোত্তর দেহদানের ইচ্ছা প্রকাশ করে ফর্ম নিয়ে আসেন। বুধবার আধার কার্ড, ভোটার কার্ড-সহ অন্যান্য নথি দিয়ে ভাতার থানায় তিনি ফর্মটি জমা দেন। পুলিশ জানিয়েছে, ফর্মটি খতিয়ে দেখে বর্ধমান মেডিক্যালে পাঠানো হবে।

ভাতার থানার বেলডাঙা গ্রামের জ্যোৎস্না মল্লিক গ্রামেরই প্রাথমিক স্কুলের মিড-ডে মিল রান্না করেন। ১৪ বছর আগে তাঁর স্বামী মারা যান। দুই ছেলে সুমন ও সুখেন চাষাবাদ করেন। বছর পঞ্চান্নর জ্যোৎস্নাদেবী অবশ্য একাই থাকেন। তাঁর কথায়, “সপ্তাহ দু’য়েক আগে বর্ধমান মেডিক্যালে চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলাম। সেখানে দেখি, কয়েক জন মহিলা ফর্ম পূরণ করছেন। জিজ্ঞাসা করতেই জানতে পারি, তাঁরা দেহদান করবেন।’’ এর পর থেকেই তাঁর মাথার মধ্যে দেহদান বিষয়টি ঘুরপাক করতে থাকে। কয়েক দিন ধরে রক্ত পরীক্ষার জন্যে তিনি বেশ কয়েক বার বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যান। সেখানে গিয়ে দেখেন, কোনও শিশু কিডনি খারাপ হয়ে যাওয়ায় মারা গিয়েছে, আবার কেউ চোখের অভাবে জন্মলগ্ন থেকে দেখতে পাচ্ছে না।

ভাতার থানর সামনে দাঁড়িয়ে জ্যোৎস্নাদেবী বলেন, “ওই শিশুদের অবস্থা দেখে মন আরও খারাপ হয়ে যায়। এ নিয়ে বেশ কয়েক জনকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারি দেহদান করলে ওই শিশুরা কিডনি বা চোখ পেয়ে বাঁচত। আবার মৃতদেহ নিয়ে হবু চিকিৎসকেরা অনেক কিছু শিখতে পারবেন। এর পরেই আমি হাসপাতাল থেকে ফর্ম নিয়ে আসি।’’ তিনি সেই ফর্মে সাক্ষী হিসেবে তাঁর পরিচিত দু’জনকে সই করিয়েছেন। মৃত্যুর পরে ছেলেরা যাতে দেহ দিতে অস্বীকার না করে, তার জন্য ছেলেদের কাছ থেকে মুচলেকাও লিখিয়ে নিয়েছেন। বেলডাঙা গ্রামের প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক তুহিন রায়ের কথায়, ‘‘নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে জ্যোৎস্নাদেবী যে উপলব্ধি করেছেন এবং সেই উপলব্ধি থেকে যে পদক্ষেপ করেছেন, তা আমাদের মতো অনেককে দিশা দেখাবে।’’ স্কুলের মিড-ডে মিলের সঙ্গে যুক্ত থাকা এক মহিলার কথায়, “আমাদের সঙ্গে থাকা এক মহিলা এমন সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছেন জেনে আমরা গর্বিত।’’ ভাতারের বিডিও শুভ্র ঠাকুর সব শুনে বলছেন, ‘‘ওই মহিলাকে কুর্ণিশ!’’ জ্যোৎস্নাদেবী কিন্তু বলে দিচ্ছেন, “মৃত্যুর পরে এই শরীরটা তো পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। তার চেয়ে দুটো লোক বাঁচুক!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Organ Donation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE