সপ্তাহ দুয়েক আগে প্রধানমন্ত্রীর পাঁচশো-হাজারের নোট বাতিলের ঘোষণার পর থেকেই চিন্তায় ভুরু কুঁচকেছিল চাষিদের। কয়েকদিন পেরোতেই বিপদ টের পেয়েছিলেন তাঁরা। এক দিকে মাঠে পড়ে থাকা পাকা ধান ঘরে তোলা, অন্যদিকে সামনের আলু-পেঁয়াজ-সব্জি চাষের প্রস্তুতি— সবমিলিয়ে মাথায় হাত পড়েছিল তাঁদের। তার মধ্যেই সোমবার কালনার রাহাতপুরে এক ভাগচাষি শিবপদ মান্ডির অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। অভিযোগ, সমবায়ে গচ্ছিত টাকা থাকার পরেও তা তুলতে না পেরে খেতমজুরদের টাকা দিতে পারেননি তিনি। সেই থেকেই আত্মহত্যা। এই মৃত্যুতে স্পষ্ট হয় গ্রামের অবস্থা। বুধবার ওই পরিবারকে মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বিধবা ভাতার টাকা দিতে গেলেই বাকি চাষিরাও দুর্দশার কথা জানান। ঘটনাচক্রে, এ দিনই একটি কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল চাষিদের অবস্থা দেখতে আসেন। ভাতারের স্বর্ণচাঁদা গ্রামে বিক্ষোভের মুখে পড়েন তাঁরাও।
এ দিন ন’টা নাগাদ কল্যাণপুর পঞ্চায়েতের রাহাতপুর গ্রামে পৌঁছে শিবুবাবুর স্ত্রী সুন্দরী মান্ডির হাতে একটি নির্দেশিকা তুলে দেন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। নভেম্বর থেকেই প্রতি মাসে তাঁকে সাড়ে সাতশো টাকা করে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে তাতে। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আলমগীর সাত্তার এবং বর্ধমান উন্নয়ন পর্ষদের সদস্য প্রণব রায়ের ব্যক্তিগত উদ্যোগে ওই টাকা তুলে দেওয়া সুন্দরীদেবীকে। কেঁদে ফেলেন তিনি। স্বপনবাবু বলেন, ‘‘সমবায় সমিতিতে টাকা না পেয়ে অসহায় হয়ে পরেছিলেন ভাগচাষি। বাধ্য হয়েই তাঁকে আত্মহননের পথ বেছে নিতে হয়েছে। এই ঘটনা অত্যন্ত মর্মান্তিক। সরকার মৃত চাষির পরিবারের পাশে আছে।’’
মন্ত্রী, পঞ্চায়েতের কর্তাদের দেখে একটু একটু চাষিদের ভিড় বাড়তে থাকে। চাষিরা অভিযোগ করেন, এক দিকে ধান পড়ে ঝরে যাচ্ছে। অন্য দিকে, জেলার আলু চাষের ৭০ হাজার হেক্টর জমির বেশিরভাগেই এখনও হাত লাগাতে পারেননি চাষিরা। মেমারি, কালনা, জামালপুরের চাষিদের দাবি, সমবায়ের হাতে টাকা না থাকায় সেখান থেকেও কিছু মিলছে না। আবার ধান দ্রুত তুলতে না পারলে আলু বা পেঁয়াজ পর্যাপ্ত শীত না পেয়ে ফলন কমারও আশঙ্কা থেকে যাবে বলে তাঁদের দাবি। স্থানীয় চাষি শিবু মালিকের দাবি, ‘‘পুরনো নোট বাতিলের পরে ধরে রাখা টাকা ব্যাঙ্কে, সমবায়ে দিয়ে এসেছি। এখন তুলতে গেলে যা মিলছে তাতে চাষের খরচ উঠবে না।’’ আবার পঞ্জাবের বীজ কেনার নগত টাকা না থাকায় হিমঘরের আলুই ভরসা বলে জানান তাঁরা। তাতে অবশ্য গুণমানের প্রশ্ন থেকে যায়। জেলার এক সহ কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষ বলেন, ‘‘সার্টিফায়েড বীজ শোধন ও বাছাই করা থাকে বলে নিরাপদ। আর আলু গাছে ভাল ঠান্ডা না পেলে ধসা রোগের সম্ভাবনা থাকেই।’’