Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

গলসির প্রত্নসামগ্রী এখন শিক্ষকের ব্যাগে

শুধু রান্নার সামগ্রী কেন, ওই বাড়িতেই আপাতত রয়েছে শত শত বছরের পুরনো খেলার সামগ্রী, পোড়া মাটির বল। আছে প্রাণীর হাড়ের টুকরো। আর এ সব নিয়ে বেশ বিড়ম্বনায় পড়েছেন জামালপুরের টেরাপুর পল্লীমঙ্গল হাই মাদ্রাসার বাংলার শিক্ষক ফিরোজ আলি কাঞ্চন।

প্রত্নসামগ্রী নিয়ে শিক্ষক ফিরোজ। নিজস্ব চিত্র

প্রত্নসামগ্রী নিয়ে শিক্ষক ফিরোজ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৮ ০২:১১
Share: Save:

মাটির তলা থেকে পাওয়া রান্নার সামগ্রী ঠাঁই পেয়েছে বাড়ির ভিতরে। শুধু রান্নার সামগ্রী কেন, ওই বাড়িতেই আপাতত রয়েছে শত শত বছরের পুরনো খেলার সামগ্রী, পোড়া মাটির বল। আছে প্রাণীর হাড়ের টুকরো। আর এ সব নিয়ে বেশ বিড়ম্বনায় পড়েছেন জামালপুরের টেরাপুর পল্লীমঙ্গল হাই মাদ্রাসার বাংলার শিক্ষক ফিরোজ আলি কাঞ্চন। গলসির খানো গ্রামের বাসিন্দা ফিরোজ মঙ্গলবার বলেন, ‘‘দু’হাজার বা তারও বেশি প্রত্নসামগ্রী বাড়িতে রাখতে ভয় লাগছে। এ সব জিনিসের তো বেশির ভাগের কাছে মূল্য নেই। একটা ব্যাগে প্রত্নসামগ্রী লুকিয়ে রাখতে হচ্ছে। প্রাণীর হাড় থাকায় বাড়ির লোকজনও উৎসাহ দিচ্ছে না।’’

গলসির খানো গ্রামে প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ সড়ক যোজনার রাস্তা তৈরির জন্য মাটির প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। খেলার মাঠে একধারে মাটির ঢিবি থেকে মাটি নেওয়ার সময় প্রত্নসামগ্রী বেরিয়ে আসতে থাকে। প্রথমে কেউ গুরুত্ব দেননি। গত কয়েক দিন ধরে বৃষ্টির সময় মাটি গলে এক এক করে লাল, কালো, ধূসর মৃৎপাত্র বেরোতে থাকে। সেখান থেকেই মেলে পোড়া মাটির নলযুক্ত মাটির পাত্র, হাঁড়ি, কড়া, পোড়ামাটির বল। ওই সব প্রত্নবস্তু কুড়িয়ে নিয়ে গিয়ে বাড়িতে ঠাঁই দিয়েছেন মাদ্রাসার শিক্ষক। তাঁর কথায়, ‘‘এই মুহূর্তে প্রায় ৫০টি প্রত্নসামগ্রী আমার কাছে রয়েছে। আমি ওই সব সামগ্রী বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় বা রাজ্যের পুরাতত্ত্ব বিভাগকে দিতে চাই। আমার কাছে এ সব থাকলে নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’’

ইতিহাসবিদ ও প্রত্নতত্ত্ববিদদের ধারণা, খানো গ্রাম থেকে যে সব প্রত্নবস্তু মিলেছে, সেগুলি ওই অঞ্চলে থাকা প্রাচীন জনপদের ইঙ্গিত দিচ্ছে। গলসির মল্লসারুল থেকে রাজা গোপচন্দ্রের সময়কালের তাম্রশাসন পাওয়া গিয়েছে। গ্রামের বাসিন্দাদের দাবি, যে ঢিবি থেকে প্রত্নসামগ্রী মিলেছে, তার ৭-৮ ফুট দূরত্বে আরও একটি ঢিবি ছিল। দু’টি ঢিবিরই উচ্চতা ছিল ২৫-৩০ ফুট। ওই ঢিবির পাশেই বাড়ি হারাধন শ্যাম, লক্ষ্মী কেশদের। তাঁদের দাবি, ‘‘ছোট থেকেই ওই ঢিবি দুটো দেখে আসছি। গ্রামের যখন যার প্রয়োজন হত, ওই ঢিবি থেকে মাটি কেটে নিয়ে চলে যেত। আর ইট-পাথর রাস্তায় ফেলা হত। ঢিবির মাটি খেলার মাঠ তৈরিতেও কাজে লাগানো হয়েছে।’’ গত ৫-৭ বছরের মধ্যেই একটি ঢিবি অস্তিত্ব হারিয়েছে। আর একটি অস্তিত্ব সঙ্কটের মুখে।

গ্রামের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মাটি কাটার পরে চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল মৃৎপাত্রের টুকরো। ফিরোজ আলি তা সংগ্রহ করার পরে ঢিবি কাটা বন্ধ করতে উদ্যোগী হন। তিনিই প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় দরবার করে ঢিবি কাটা আটকান। ওই শিক্ষকের কথায়, ‘‘আমি বাংলার শিক্ষক। ইতিহাস সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকায় বুঝতে পারি, আমাদের ইতিহাস নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। গ্রামবাসীর সহযোগিতায় ঢিবির অস্তিত্ব রক্ষা করা গিয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Galsi Archeological Survey গলসি
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE