গত কয়েক দিনের ছিটেফোঁটা বৃষ্টি জেলায় অল্পবিস্তর স্বস্তি দিলেও তাপমাত্রার পারদে তেমন লাগাম পড়েনি। বৃষ্টি বা সেচের জলও মেলেনি এই মরসুমে। এই দুইয়ের গেরোয় বর্ধমানের পূর্বস্থলীতে সব্জির উৎপাদন কমতির দিকে। শুধু তাই নয়, ক্রেতাদের দাবি, বাজারে যে সব্জি এসেছে তার মানও ভাল নয়।
জেলা কৃষি দফতর সূত্রে খবর, প্রতি মরসুমে জেলার মধ্যে সবথেকে বেশি সব্জি উৎপাদন হয় পূর্বস্থলীতে। এই এলাকার কালেখাঁতলা, পারুলিয়া, সমুদ্রগড়, নিমতলার মতো বিভিন্ন পাইকারি বাজার থেকে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিদিন প্রায় ৩০ থেকে ৪০ ট্রাক সব্জি পৌঁছয়। এ বার সেই সংখ্যাটা অর্ধেক বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
চাষিরা জানান, এপ্রিল-মে থেকে দু-এক দিন অন্তর বৃষ্টি পড়লে তা সব্জি চাষে সহায়ক হয়। কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানান, এই বৃষ্টির উপর অনেকখানি নির্ভর করে সব্জির উৎপাদন। শুধু তাই নয়, এই সময় বৃষ্টি পড়লে সব্জি গাছে ক্ষতিকারক পোকার উৎপাতও অনেকখানি নিয়ন্ত্রণে থাকে বলে জানান চাষিরা। তবে এই মরসুমের শুরু থেকেই শুরু হয়েছে জলের আকাল। মরসুমের গোড়াতেই ডিভিসি কর্তৃপক্ষ জেলা প্রশাসনকে জানিয়ে দেন, এ বার সেচের জন্য জল ছাড়া হবে না। স্থানীয় জলাশয়গুলি থেকেও তেমন জল মেলেনি। এই অবস্থায় সাবমার্সিব্যাল পাম্প থেকে জল তুলে চাষ করতে হয়েছে। কিন্তু যে পরিমাণ চাষ হয়েছে, তাতেও বৃষ্টির অভাবে সঙ্কট দেখা দিয়েছে বলে জানান চাষিরা। সম্প্রতি দু-এক দিন কালবৈশাখীর দেখা মিললেও প্রয়োজনীয় বৃষ্টি হয়নি বলে জানিয়েছে সেচ দফতর। চাষিরা জানান, সব্জি সাধারণত উঁচু জমিতে চাষ হয়। এ বারে যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে, তাতে সব্জির খেতে জল জমছে না বলে। তার উপরে গত মাস খানেক ধরে জেলা জুড়ে চলছে তাপপ্রবাহ। এই পরিস্থিতিতে পূর্বস্থলীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেল, চাষের জমিতে সব্জির বহু গাছই শুকিয়ে গিয়েছে। মাটির জলস্তরও নেমে যাচ্ছে বলে খবর।
জলের আকালের রেশ পড়েছে সব্জির উৎপাদনেও। পারুলিয়ার চাষি খোকন সরকার যেমন বলেন, ‘‘প্রতি বছর ঝিঙে,পটলের যা স্বাভাবিক ফলন হয়, এ বার অন্তত তার থেকে তিন গুণ কম উৎপাদন হবে।’’ সুদেব ঘোষ নামে এক চাষির গলাতেও শঙ্কার সুর। তিনি বলেন, ‘‘এ বার সব্জি গাছের বৃদ্ধি একেবারেই নেই।’’ চাষিদের দাবি, যা সব্জি হচ্ছে, তার গুণগত মানও ভাল নয়।
চকবাজার, ধাত্রীগ্রাম, সমুদ্রগড়-সহ বেশ কয়েকটি বাজারে গিয়ে দেখা গেল সব্জির ফলন নিয়ে নাখুশ ক্রেতারাও। কালনা শহরের বাসিন্দা হিমাংশু চট্টোপাধ্যায়ের ক্ষোভ, ‘‘প্রতিদিন টাটকা সব্জি নিয়ে যায়। কিন্তু এখন টাটকা সব্জিরই যা হাল, পাতে দেওয়া যায় না!’’ স্থানীয় বধূ পুতুল ঘোষ আবার বলেন, ‘‘টাকা খরচ হচ্ছে। কিন্তু সতেজ সব্জির দেখা নেই বাজারে।’’
সব্জির বাজারে এমন হাল কেন? জেলার সহ কৃষি আধিকারিক পার্থ ঘোষ বলেন, গত কয়েক মাস ধরে একটানা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল জেলায়। এর ফলে পরাগ মিলনের সমস্যা দেখা দেয়। ফলনে এর প্রভাব পড়ে। এখন তাপমাত্রা খানিকটা কমলেও দরকার ভারী বৃষ্টিপাতের। তা হলেই একমাত্র মাস খানেকের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy