Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

স্ট্রং‌ রুমের কাছে ‘ভূতে’র নামে ফাঁদ, নালিশ বিজেপির

গত বুধবার থেকে হঠাৎ ছড়াতে থাকে গুজব।

সাধনপুরের মহারাজাধিরাজ বিজয়চাঁদ পলিটেকনিক কলেজ। নিজস্ব চিত্র

সাধনপুরের মহারাজাধিরাজ বিজয়চাঁদ পলিটেকনিক কলেজ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৯ ০০:০৬
Share: Save:

রটেছিল, ‘স্ট্রং রুম’-এর আশপাশে গান গাইলে যেন হারমোনিয়াম বেজে উঠছে। কানে আসছে ঘুঙুরের শব্দ। মনে হচ্ছে, পিছনে কে যেন আছে। এটুকু রটতেই জনতার একাংশ ‘অশরীরী’র ছায়া দেখতে শুরু করে। তবে বিজেপি অভিযোগ করেছে, ‘ভূতের গল্প’ ছড়িয়ে তাদের কর্মীদের ভয় দেখাতে চাইছে একটি ‘বিশেষ’ রাজনৈতিক দল।

শনিবার বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী পরেশচন্দ্র দাস জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তবের কাছে এই অভিযোগ করেন। তাঁর দাবি, ‘‘ভূতের গল্প ছড়িয়ে ইভিএম-কারচুপির ফাঁদ পাতা হচ্ছে। জেলাশাসকের কাছে এ ধরনের গুজব বন্ধ করার আবেদন জানিয়েছি।’’ ভূতের গুজব ছড়িয়ে, প্রাক্-গণনা অশান্তি পাকিয়ে বিজেপি কর্মীদের উপরে ‘হামলা’র সম্ভাবনা রয়েছে বলেও মনে করছেন তিনি। তবে কারা এই ‘চক্রান্ত’ করছে, তা তিনি ভাঙেননি। পক্ষান্তরে, তৃণমূল প্রার্থী সুনীল মণ্ডলের নির্বাচনী এজেন্ট উত্তম সেনগুপ্ত বলেন, “যেখানে আধা-সেনা ২৪ ঘণ্টা পাহারা দিচ্ছে, সেখানে হারার আতঙ্কে এ সব কাণ্ডজ্ঞানহীন অভিযোগ করা হচ্ছে।”

বর্ধমান পূর্ব লোকসভার গণনা কেন্দ্র শহরের সাধনপুরের মহারাজাধিরাজ বিজয়চাঁদ পলিটেকনিকে। ওই কেন্দ্রের মধ্যেই ‘স্ট্রং রুম’। ইভিএম পাহারার দায়িত্বে রয়েছে আধা-সেনা। এলাকা সিসি (‌ক্লোজ়ড সার্কিট) ক্যামেরায় মুড়ে ফেলা হয়েছে। পালা করে সেখানে পাহারা দিচ্ছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীরা। ‘ওয়েব ক্যামেরা’য় দিল্লিতে বসে ‘স্ট্রং রুমের’ দৃশ্য দেখতে পাচ্ছেন নির্বাচন কমিশনার। তার মধ্যেই গত বুধবার থেকে হঠাৎ ছড়াতে থাকে গুজব।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

স্ট্রং রুমের বাইরে পাহারায় থাকা বিজয় বাগদি, সম্বিৎ চট্টোপাধ্যায় কিংবা বিশ্বজিৎ বাগচিদের দাবি, “ক্লান্তি কাটাতে নিজেদের মধ্যে গুনগুন করে গান করছি, তখন মনে হচ্ছে কেউ হারমোনিয়াম বাজাচ্ছে। কখনও তবলা, ঘুঙুরের আওয়াজ শুনছি। একা হাঁটলে মনে হচ্ছে, কেউ যেন পিছনে ঘুরছে!” ঘটনাচক্রে, এঁরা প্রত্যেকেই এলাকায় তৃণমূল কর্মী বলে পরিচিত।

স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, এখন যেখানে পলিটেকনিক কলেজ, আগে সেখানে ছিল বর্ধমানের রাজাদের ঘোড়াশালা। পলিটেকনিকের মধ্যে বহু পুরনো একটি ভবনও রয়েছে। সেখান থেকে রাত-গভীরে বিভিন্ন শব্দ নাকি শুনেছেন কেউ কেউ। যদিও পলিটেকনিক কলেজ লাগোয়া এলাকার অনেক বাসিন্দা আবার দাবি করেছেন, তাঁরা কোনও দিন অস্বাভাবিক কোনও আওয়াজ শোনেননি ওই পলিটেকনিক থেকে। পলিটেকনিকের প্রাক্তন সুপারিন্টেন্ডেন্ট তথা বর্ধমান রাজ পরিবার সংক্রান্ত বিষয়ের গবেষক নীরদবরণ সরকার বলেন, “চাকরি সূত্রে কত রাত একা থেকেছি। কিন্তু ভূত দেখিনি।’’ তাঁর দাবি, বর্তমানে যেটা পলিটেকনিকের মূল ভবন, সেটি বর্ধমান রাজ পরিবার ইংরেজ কর্তাদের জন্যে তৈরি করিয়েছিল। তবে সেখানে ঘোড়াশালা ছিল না। ‘পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ’-এর তরফে চন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়েরও ধারণা, ‘‘ভয় ছড়াতে কেউ গল্প তৈরি করছে।’’

তা হলে দলের কর্মীদের একাংশ তেমন বলছেন কেন জানতে চাওয়া হলে উত্তমবাবু বলেন, ‘‘হয়তো ওরা ও রকম ভেবেছে।’’

তবে জেলাশাসক জানান, ইভিএমের সুরক্ষায় সমস্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE