Advertisement
২৭ মার্চ ২০২৩
Bardhaman

দুটি হাত নেই, পা দিয়ে ট্র্যাক্টর চালিয়ে বেঁচে থাকার রসদ জোগাড় করছেন বর্ধমানের যুবক

কেউ কেউ নাকি সুজিতের মাকে বুঝিয়েছিলেন ওই ছেলেকে প্রাণে মেরে দেওয়াই ভাল। এ ছেলে বড় হয়ে আর কী করবে। মা-বাবা অবশ্য সে সব কথা কানে তোলেননি।

পড়াশোনা করেছেন। পরীক্ষায় খাতায় লিখেছেন পায়ের দু’আঙুলের মাঝে পেনসিল দিয়ে। এখন দু’পায়ে ট্র্যাক্টর চালিয়ে উপার্জন করছেন সুজিত।

পড়াশোনা করেছেন। পরীক্ষায় খাতায় লিখেছেন পায়ের দু’আঙুলের মাঝে পেনসিল দিয়ে। এখন দু’পায়ে ট্র্যাক্টর চালিয়ে উপার্জন করছেন সুজিত। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রায়না শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২২ ১৪:১০
Share: Save:

পড়াশোনা করেছেন। ডিগ্রি আছে। কিন্তু তেমন কোনও কাজ জোগাড় করতে পারেননি। পেট চালানোর জন্য বেছে নিয়েছিলেন তাঁর জন্য যেটা কঠিন, তেমন এক পেশা— ট্র্যাক্টর চালানো। ধান কাটার মরসুমে এখন সদা ব্যস্ত পূর্ব বর্ধমানের রায়নার বাসিন্দা সুজিত দাঁ।

Advertisement

সদ্যোজাতের দু’টি হাত নেই! জন্মের সময় সুজিতকে এক পলক দেখেই জ্ঞান হারিয়েছিলেন মা। কেউ কেউ সুজিতের মাকে বুঝিয়েছিলেন, ওই ছেলেকে মেরে ফেলাই ভাল। এ ছেলে বড় হয়ে আর কী করবে! মা-বাবা অবশ্য সে সব কথা কানে তোলেননি। সুজিতের কথায়, ‘‘বরং একটু বেশিই আদর পেয়েছি বাবা-মায়ের।’’

এখন সুজিতের বয়স ৩৭। আইটিআই পাশ করেছেন। তবে কাজের খোঁজে বসে না থেকে ট্র্যাক্টর চালিয়ে পরিবারের অন্ন সংস্থান করছেন তিনি। রায়না বিধানসভার প্রত্যন্ত গ্রাম উচালনে সুজিতের বাড়ি। তাঁদের যৌথ পরিবার। অল্প বয়সেই সুজিত তাঁর বাবা স্বপন দাঁকে হারান। সুজিতের মা পুতুল অনেক লড়াই করে তাঁকে মানুষ করেছেন। সুজিতের কথায়, ‘‘হার না মেনে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকার প্রেরণাটা ছোট বয়সেই পেয়েছিলাম। এটা পেয়েছি আর এক জন মানুষের কাছে। তিনি আমার গ্রামের মাস্টারমশাই শক্তিপদ ভট্টাচার্য। পায়ে পেনসিল গুঁজে কাগজে লেখা তাঁর কাছেই শেখা। উনিই আমায় পড়়াশোনা শিখিয়েছেন। ওঁর জন্য মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছি। পরে আইটিআই সার্ভে ডিপ্লোমা কোর্সও সম্পূর্ণ করেছি।’’

সুজিত জানান, ডিভিসির চাকরির পরীক্ষায় বসে পাশ করেছিলেন। চাকরির প্যানেলে তাঁর নামও উঠেছিল। সেটা ২০১১ সাল। কিন্তু তার পর যে কী হল! সুজিতের কথায়, ‘‘২০১১ সালে রাজ্য রাজনীতিতে পালাবদলের পর চাকরিটার ব্যাপারে কিছুই জানতে পারলাম না।’’

Advertisement

নিম্নবিত্ত পরিবার। কত দিন আর ঘরে বসে থাকা যায়। এক দিন পরিচিত এক গাড়িচালকের সাহায্য নিয়ে পেনসিল ধরা দু’পা দিয়েই ট্র্যাক্টর চালানো শিখে নেন সুজিত। এখন ট্র্যাক্টর চালানোর পাশাপাশি ধানের ব্যবসাও শুরু করেছেন। খুড়তুতো ভাইয়ের সঙ্গে গাড়ির যন্ত্রপাতির ব্যবসাও শুরু করেছেন। সবই দু’পায়ের খেল।

দু’পা দিয়েই ব্যবসার যাবতীয় কাজ করেন। জরুরি ফোন ধরা থেকে হোয়াটসঅ্যাপ বা ফেসবুক, সবই ওই দুই পায়ে। খাওয়া-দাওয়া করেন কী ভাবে? সুজিতের উত্তর, ‘‘বাড়িতে থাকলে মা খাইয়ে দেন। বাইরে থাকলে চামচ পায়ের আঙুল দিয়ে ধরে খাবার তুলে খাই।’’

পা দিয়ে তাঁকে সব কিছু করতে হয় বলে কোনও আক্ষেপ নেই সুজিতের। ইচ্ছাশক্তি থাকলেই যে সব জয় করা যায় তা বুঝিয়ে দিয়েছেন ৩৭ বছরের যুবক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.