Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মুনাফার লোভ বাড়াচ্ছে বিপদ

এক দিকে, বাড়তি মাল তুলে দৌড়। অন্য দিকে, অদক্ষ চালকদের বেপরোয়া মনোভাব। সেই সঙ্গে বেশি রোজগারের তাগিদে অতিরিক্ত পরিশ্রম, মদ্যপান, খালাসির হাতে স্টিয়ারিং ছেড়ে দেওয়া। পরপর দুর্ঘটনায় ট্রাক, লরি, ট্যাঙ্কারের ভূমিকা খতিয়ে দেখে এমনটাই মনে করছে প্রশাসন।

বৈঠক: দুর্গাপুরে ডিজি-র সঙ্গে পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা। নিজস্ব চিত্র

বৈঠক: দুর্গাপুরে ডিজি-র সঙ্গে পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা। নিজস্ব চিত্র

সুব্রত সীট
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৭ ০০:২৬
Share: Save:

এক দিকে, বাড়তি মাল তুলে দৌড়। অন্য দিকে, অদক্ষ চালকদের বেপরোয়া মনোভাব। সেই সঙ্গে বেশি রোজগারের তাগিদে অতিরিক্ত পরিশ্রম, মদ্যপান, খালাসির হাতে স্টিয়ারিং ছেড়ে দেওয়া। পরপর দুর্ঘটনায় ট্রাক, লরি, ট্যাঙ্কারের ভূমিকা খতিয়ে দেখে এমনটাই মনে করছে প্রশাসন।

চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, বহু লরি বা ট্রাকের ‘ফিটনেস’ নিয়ে প্রশ্ন আছে। যান্ত্রিক ত্রুটি নিয়েই চলে সেগুলি। রাস্তায় কোনও গোলোযোগ ধরা পড়লে সব সময় ভাল গ্যারাজ হাতের কাছে মেলে না। কোনও রকমে কাজ চালানোর মতো সারিয়ে নিয়েই ফের যাত্রা শুরু করতে হয়। এর সঙ্গে ওভারলোডিং একটা বড় সমস্যা। অতিরিক্ত লাভের লোভে বেশি মাল বহনের তাগিদে গাড়ির উপরে অতিরিক্ত চাপ পড়ে, যা ব্রেকের পদ্ধতিতে প্রভাব ফেলে। ফলে, চালক অনেক সময় চেষ্টা করেও ব্রেক কষে নির্দিষ্ট দূরত্বের মধ্যে গাড়ি থামাতে পারেন না।

অটোমোবাইল অ্যাসোসিয়েশনের অনেকের মতে, কিছু চালকের বড় গাড়ি চালানোর দক্ষতাও নেই। তা সত্ত্বেও কোনও না কোনও ভাবে ড্রাইভিং লাইসেন্স জোগাড় করে স্টিয়ারিংয়ে বসে যান। ট্রাফিকের নিয়ম-কানুনও তারা সে ভাবে জানেন না বলে অভিযোগ। তাঁদের হাতে কোনও ভাবেই বড় গাড়ি নিরাপদ নয়। এই সব চালকদের অনেকেই অতিরিক্ত গতিতে গড়ি চালান। আবার অনেক সময় দেখা যায়, ঘণ্টা পিছু আয় বাড়াতে সাধ্যের বেশি সময় ধরে গাড়ি চালান কোনও-কোনও চালক।

চালকদের অনেকেও জানান, ইঞ্জিনের গরম হাওয়া এবং বাইরের ও আশপাশের শব্দের কারণে তাঁরা ক্লান্ত হয়ে পড়েন। অনেক সময়ে রাতে ঘুমে চোখ জড়িয়ে আসে। আবার, মানসিক চাপ কমাতে তাঁদের কেউ-কেউ মদ্যপান করে থাকেন। ফলে, নিয়ন্ত্রণ হারান। রাতে কম নজরদারি এবং অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে অনেকেই খালাসির হাতে স্টিয়ারিং ছেড়ে দেন। প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, কিছু গাড়ির পিছনে নম্বরপ্লেট থাকে না। থাকে না আলো। সব মিলিয়েই দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বাড়ে।

রাজ্য পুলিশের ডিজি সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ মঙ্গলবার দুর্গাপুরে পশ্চিমাঞ্চলের আইজি রাজীব মিশ্র, সিআইএফের আইজি অজয় নন্দ এবং পশ্চিমাঞ্চলের সাতটি জেলার পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বৈঠক করেন। তার মধ্যে অন্যতম ছিল, দুর্ঘটনা রোধে ব্যবস্থা। এ দিন ডিজি জানান, রাত ১১টা থেকে ভোর পর্যন্ত জায়গায়-জায়গায় বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বাড়তি মাল চাপানো, অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানো, মদ খেয়ে গাড়ি চালানোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি, চালকদের কাউন্সেলিংয়েরও ব্যবস্থা করা হবে। ভিন্‌ রাজ্যের চালকদের জন্য হিন্দিতে কাউন্সেলিংয়েরও ব্যবস্থা হবে বলে তিনি জানান।

ডিজি বলেন, ‘‘টানা গাড়ি চালিয়ে চালকদের অনেকে ক্লান্ত হয়ে পড়েন। বিশেষ কিছু ‘ব্ল্যাক স্পট’ চিহ্নিত করা হয়েছে। সেই সব জায়গায় পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেম-এ সচেতন করার প্রয়াস চলবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

reckless driving Road accidents
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE