Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

হারের ব্যাখ্যা তলব কালীঘাটের বৈঠকে

রাজ্যে বিপুল জয়ের মধ্যেও বর্ধমানের শিল্পাঞ্চলে ন’টি কেন্দ্রের মধ্যে চারটি হাতছাড়া হয়েছে। এমন ফলের কারণ জানতে নেতৃত্বের কাছে বিশদ রিপোর্ট চেয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

সুশান্ত বণিক ও সুব্রত সীট
আসানসোল ও দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৬ ০৪:৩১
Share: Save:

রাজ্যে বিপুল জয়ের মধ্যেও বর্ধমানের শিল্পাঞ্চলে ন’টি কেন্দ্রের মধ্যে চারটি হাতছাড়া হয়েছে। এমন ফলের কারণ জানতে নেতৃত্বের কাছে বিশদ রিপোর্ট চেয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার কালীঘাটে দলের বিধায়ক ও জেলা নেতাদের নিয়ে বৈঠকে তিনি এই নির্দেশ দিয়েছেন বলে জেলা তৃণমূল সূত্রের খবর। এ ছাড়া দলে যাঁরা গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন বলে তৃণমূলের একাংশের দাবি।

তৃণমূল সূত্রের খবর, বুধবারের বৈঠকে এই শিল্পাঞ্চলের কথা উঠতেই নেত্রী দলের আসানসোলের সভাপতি ভি শিবদাসনের কাছে জানতে চান, রানিগঞ্জ ও জামুড়িয়ায় হার হল কেন। জামুড়িয়ায় এ বার প্রার্থী ছিলেন শিবদাসন নিজেই। বৈঠকে হাজির এক নেতার দাবি, মূলত দলের একাংশের অন্তর্ঘাতেই এ বার জামুড়িয়ায় জেতা যায়নি বলে জানান শিবদাসন। এর পরেই নেত্রী শিবদাসন ও মলয় ঘটককে নির্দেশ দেন, কী ধরনের অন্তর্ঘাত হয়েছে, তা খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নিতে হবে। পরে ভি শিবদাসন বলেন, ‘‘নির্দেশ অনুযায়ী সাংগঠনিক পর্যালোচনা করে দলের কোথায় কামতি রয়েছে তার বিশদ রিপোর্ট উচ্চ নেতৃত্বকে দেব।’’

শুধু তাই নয়, তৃণমূলের একটি সূত্রের খবর, আসানসোল পুরসভায় যে সব তৃণমূল কাউন্সিলরের ওয়ার্ডে দল পিছিয়ে পড়েছে, তার কারণ অনুসন্ধান করেও রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই কাউন্সিলররা কেন নিজেদের ওয়ার্ডে দলকে জেতাতে পারেননি, তার ব্যাখ্যা দিতে হবে। সন্তোষজনক উত্তর না মিললে পদক্ষেপ করা হবে। শিবদাসন জানান, ওয়ার্ড-ভিত্তিক ফলাফল তাঁর কাছে রয়েছে। নেত্রীর নির্দেশ পাওয়ার পরে সেগুলি ধরে তিনি পর্যালোচনা শুরু করেছেন।

মলয়বাবুর কেন্দ্র আসানসোল উত্তরে ৩২টি ওয়ার্ডের মধ্যে এ বার দল পিছিয়ে পড়ে ১৩টিতে। যার মধ্যে ন’টি রয়েছে তৃণমূলেরই দখলে। এই তালিকায় রয়েছেন পুরসভার চেয়ারম্যান অমরনাথ চট্টোপাধ্যায়-সহ অনেকে। আসানসোল দক্ষিণের অন্তর্গত ২২টি ওয়ার্ডের মধ্যে তৃণমূল পিছিয়ে ১৩টিতে। প্রত্যেকটিই রয়েছে তৃণমূলের দখলে। সেই তালিকায় রয়েছেন শিক্ষা দফতরের মেয়র পারিষদ অঞ্জনা শর্মা। শিবদাসন জানান, মন্ত্রিসভার শপথ হয়ে যাওয়ার পরেই তিনি দলের তরফে বৈঠক ডেকে এ বিষয়ে বিশদে পর্যালোচনা করবেন। মলয়বাবু শুধু বলেন, ‘‘সংগঠনের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।’’

দুর্গাপুরে দুই কেন্দ্রে পরাজয়ের ক্ষেত্রেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের তত্ত্ব তৈরি হয়েছে দলের অন্দরে। দলীয় সূত্রে জানা যায়, কালীঘাটের বৈঠকে শহর তৃণমূলের তরফে হারের ব্যাখ্যা দিয়ে দু’টি রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে। সেখানে দাবি করা হয়েছে, এক সময়ে সিপিএমের পরিচিত কিছু মুখ এখন দলের সামনের সারিতে উঠে আসায় মানুষ ভাল ভাবে নেননি। ওই সব নেতারা কতটা ঠিক ভাবে কাজ করেছেন, সে নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। তৃণমূল সূত্রের খবর, শীর্ষ নেতৃত্ব একটি তদন্ত কমিটি তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন। তা মেনে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দলের সব কাউন্সিলরকে নিয়ে বৈঠক করা হয়েছে। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে, প্রতি ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর ও স্থানীয় নেতৃত্ব নির্দিষ্ট রিপোর্ট দিয়ে জানাবেন, কোথায় খামতি রয়েছে ও এখন কী করণীয়। সেই সব রিপোর্ট জমা পড়বে চার জনের তদন্ত কমিটির কাছে। কমিটি তা পর্যালোচনা করে জেলা নেতৃত্বের মাধ্যমে রাজ্যে পাঠাবে। শহরের তৃণমূল নেতা তথা ডেপুটি মেয়র অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রার্থীদের হারাতে দলের মধ্যে যে ষড়যন্ত্র হয়েছে, সে নিয়ে আরও কোনও দ্বিমত নেই। যাঁরা এর সঙ্গে জড়িত তাঁদের চিহ্নিত করে শাস্তির জন্য সুপারিশ করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Meeting TMC Burdwan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE