Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

চাঁদার নামে জুলুম বাসস্ট্যান্ডে

অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল আগেই। জমা পড়েছিল লিখিত আকারেও। আসানসোল বাসস্ট্যান্ডে শেষমেশ সেটা প্রকাশ্যে চলে এসেছে। শাসক দলেরই এক পক্ষ অভিযোগ তুলেছে অন্য পক্ষের বিরুদ্ধে।

সুশান্ত বণিক
আসানসোল শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৬ ০০:২৭
Share: Save:

অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল আগেই। জমা পড়েছিল লিখিত আকারেও। আসানসোল বাসস্ট্যান্ডে শেষমেশ সেটা প্রকাশ্যে চলে এসেছে। শাসক দলেরই এক পক্ষ অভিযোগ তুলেছে অন্য পক্ষের বিরুদ্ধে। শীর্ষ নেতৃত্বের হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও তোলাবাজি ও সিন্ডিকেট-রাজে যে পুরোপুরি রাশ পড়েনি, বাসস্ট্যান্ডের ঘটনা তা ফের সামনে এনে দিয়েছে আসানসোলে।

আসানসোল বাসস্ট্যান্ডে অনিয়মের প্রথম অভিযোগ ওঠে ২০১৩ সালে। পুরসভার তত্ত্বাবধানে ২০০৯ সালে একটি উন্নয়ন কমিটি গঠন হয়েছিল। ঠিক হয়, সিটি বাসস্ট্যান্ডের প্রতিটি বাসকে দৈনিক পাঁচ টাকা করে চাঁদা দিতে হবে। সেই টাকায় গঠিত তহবিল থেকেই স্ট্যান্ডের উন্নয়মমূলক কাজ হবে। এই টাকা তোলার জন্য শাসক দলের ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তিকে দায়িত্ব দেন তৎকালীন পুর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বছর চারেক পরে উন্নয়ন কমিটির অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুর কর্তৃপক্ষ তদন্তে নেমে দেখেন, উন্নয়ন তহবিলের প্রায় ২৬ লক্ষ টাকা নয়ছয় হয়েছে। এর পরেই ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করেন পুর কর্তৃপক্ষ। পুলিশ তাঁকে গ্রেফতারও করে। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও সেই মামলা চলছে।

সেখানেই শেষ নয়। অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে আরও। তৃণমূল অনুমোদিত মোটর ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সম্পাদক রাজু অহলুওয়ালিয়া লিখিত অভিযোগ করেছেন, ইউনিয়নের নামে প্রতি দিন প্রতিটি বাস থেকে রসিদ কেটে পাঁচ টাকা করে চাঁদা নেওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে পাঁচ টাকার রসিদ দিয়ে প্রত্যেকটি বাস থেকে জোর করে ৫০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। এর ফলে মাসে প্রায় চার লক্ষ টাকা আয় হয়, যা আদতে কিছু নেতা-কর্মীর পকেটে ঢোকে। তাঁর আরও অভিযোগ, লাগোয়া রাজ্যের বেশ কিছু পারমিট না থাকা বাস প্রতিদিন আসানসোল সিটি বাসস্ট্যান্ডে যাত্রী ও পণ্য তোলানামার জন্য ঢোকে। সেগুলির কাছ থেকেও প্রতিদিন কয়েক হাজার টাকা আদায় করা হয় বলে অভিযোগ।

বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন এলাকার দূরপাল্লার বাসগুলি ছাদে পণ্য তুলে যাতায়াত করছে। এই বাসের মালিক বা কর্মীদের কাছ থেকে পুলিশের ভয় দেখিয়ে প্রতিদিন প্রচুর টাকা আদায় করা হয়। দূরপাল্লার বাসের ছাদে পণ্য তোলা ও বাসের আসন সংরক্ষণের কাজে কিছু যুবককে এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ করেন বাস মালিকেরা। অভিযোগ, সেই যুবকদের কাছ থেকেও প্রতিদিন কমিশনের নামে মোটা টাকা তোলা নেওয়া হয়।

মোটর ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের নেতা রাজুবাবু অভিযোগ করেন, আসানসোল পুরসভার মেয়র পারিষদ অভিজিৎ ঘটক এই অনিয়মে মদত দিচ্ছেন। যদিও অভিজিৎবাবুর পাল্টা অভিযোগ, ‘‘রাজুবাবুই দীর্ঘদিন ধরে এ সবের সঙ্গে জড়িত। দল তাঁকে পদ থেকে সরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই আমার নামে মিথ্যে অপবাদ দিচ্ছেন।’’

এই ঘটনা নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধীরাও। শনিবার দুর্গাপুরে সিপিএমের সভায় সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, ‘‘আসানসোল বাসস্ট্যান্ডে না কি কুপন ছাপিয়ে তোলা আদায় হচ্ছে। ওখানে তো আবার মন্ত্রীও রয়েছেন।’’ বাসস্ট্যান্ডে দীর্ঘদিন ধরে সিন্ডিকেট ও তোলাবাজির দাপটের অভিযোগ দলের কাছে জমা পড়েছে বলে জানান তৃণমূলের আসানসোল জেলা সভাপতি ভি শিবদাসন। তিনি বলেন, ‘‘দলেরই কয়েক জনের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে। তদন্তের জন্য রাজ্য কমিটির তরফে আমার কাছে নির্দেশ এসেছে। আমি তদন্ত করে বিশদ রিপোর্ট উচ্চ নেতৃত্বের কাছে জমা দেব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

subscription extortion
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE