Advertisement
E-Paper

নোটের চোটে বাজার মন্দা গয়নার

নগদের জোগান নেই। মাছি তাড়িয়ে বেড়ানোর দশা দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের অধিকাংশ দোকানের। ঝাঁপ বন্ধ না হলেও ক্রেতা না থাকায় বিরস মুখ বীরভূমের দুবরাজপুরে কলকাতার একটি পরিচিত অলঙ্কার বিপণির কর্তাদের।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৬ ০০:০০
দোকান ফাঁকাই। দুর্গাপুরের বেনাচিতি বাজারে তোলা নিজস্ব চিত্র।

দোকান ফাঁকাই। দুর্গাপুরের বেনাচিতি বাজারে তোলা নিজস্ব চিত্র।

নগদের জোগান নেই। মাছি তাড়িয়ে বেড়ানোর দশা দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের অধিকাংশ দোকানের। ঝাঁপ বন্ধ না হলেও ক্রেতা না থাকায় বিরস মুখ বীরভূমের দুবরাজপুরে কলকাতার একটি পরিচিত অলঙ্কার বিপণির কর্তাদের। বাঁকুড়াতে আবার অনেক গয়নার দোকানেই নগদের কারবার বিলকুল বন্ধ। চেক বা ডেবিট / ক্রেডিট-কার্ড চলছে। রাঢ়বঙ্গের জেলাগুলিতে গয়না ব্যবসায়ীদের মুখে একটাই কথা— ‘‘নোটের চোটে বাজার মন্দা।’’

রাজ্যের একাধিক বিশিষ্ট অলঙ্কার সংস্থা আসানসোলে তাদের ফ্র্যাঞ্চাইজি দিয়েছে। এ রকম একটি সংস্থার আধিকারিক সুদর্শন দাস জানিয়েছেন, সংস্থার কর্তাদের কথা মতো প্রথম কয়েক দিন তাঁরা দোকান বন্ধ করে রেখেছিলেন। এখন তা খুললেও বিয়ের মরসুমে যে ভাবে সোনা কেনার ঢল নামে তার ছিঁটেফোটাও নেই। আর এক অলঙ্কার প্রস্তুতকারী সংস্থার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ধনতেরসের সময়েও বিক্রি ভালই হয়েছে। ছবিটা বদলে গিয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ৮ নভেম্বরের নোট-বাতিলের বার্তার পরে। বিয়ে-বউভাতে উপহার দেওয়ার জন্য যাঁরা সোনার গয়না কেনেন, তাঁরা আসছেন না।

আসানসোলের মফস্সলে স্থানীয় ও পরিচিত স্বর্ণ-ব্যবসায়ীদের কাছে বায়না দিয়ে অলঙ্কার তৈরি করান ক্রেতারা। এ রকমই এক প্রতিষ্ঠিত সংস্থার কর্ণধার রামানন্দ দে জানিয়েছেন, বাতিল নোটের ধাক্কায় সোনা কিনতে সমস্যা হচ্ছে তাঁদের। মহাজনেরা বাতিল নোট নিতে চাইছেন না। ফলে, বায়না নিয়েও সোনার অভাবে অলঙ্কার তৈরি করা যাচ্ছে না।

বেনাচিতি, দুর্গাপুর বাজার থেকে শুরু করে সিটি সেন্টারে কলকাতার বিভিন্ন স্বর্ণবিপণির শাখাতেও একই ছবি। খদ্দেরের দেখা প্রায় নেই। ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, দু’লাখ টাকার সোনা কেনার সময় প্যান নম্বর উল্লেখ করতে হবে। অর্থ মন্ত্রকের এমন সিদ্ধান্তে এমনিতেই অনেকে ভ্রু কুঁচকেছিলেন। ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড বা অনলাইন পেমেন্টে অভ্যস্ত নন ক্রেতাদের অনেকেই। তাই ৫০০ টাকা, হাজার টাকার নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের পরে প্রায় ‘গেল-গেল’ রব উঠেছে৷

সিটি সেন্টারে কলকাতার একাধিক স্বর্ণ বিপণির শাখা রয়েছে। তেমনই একটির এক আধিকারিকের দাবি, ‘‘সকালে নির্দিষ্ট সময়ে দোকান খোলা হচ্ছে। রাতে বন্ধ হচ্ছে। এক-এক দিন দু’-একজন ক্রেতা আসছেন। দিনে গড়ে ৭০ শতাংশ ব্যবসা কমেছে।’’ আর এক বিপণির এক কর্মী বলেন, ‘‘যাঁরা আসছেন, তাঁরাও কম টাকার গয়না কিনছেন। কারণ, হাতে বেশি নগদ নেই।’’ বেনাচিতি বাজারে পরিচিত সোনার দোকান চন্দন দাসের। ‘দুর্গাপুর চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ’ এর সভাপতি চন্দনবাবুর দাবি, ‘‘অগ্রহায়ণ মাস বিয়ের মাস। বাবা-মা-রা ভেবে পাচ্ছেন না, বিয়ের সময় মেয়েকে কী গয়না দেবেন। অনেকে বায়না দিয়ে গিয়েছেন। গয়নাও তৈরি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু হাতে টাকা নেই বলে নিতে আসছেন না। চেনা-পরিচিতদের ধার-বাকিতে দিতে হচ্ছে। চরম সমস্যায় আমরা।’’

বছর দশেক আগে দুবরাজপুরে শাখা খুলেছিল কলকাতার একটি বিশিষ্ট অলঙ্কার বিপণি। বর্তমানে এলাকার সব থেকে বড় সোনার দোকান। মূলত গ্রামীণ খদ্দেরই বেশি। সেই শাখার মালিক মুজিবর রহমান জানাচ্ছেন, নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের পরে বেচাকেনা কার্যত বন্ধ। দু’চার জন খদ্দের আসছেন। কেউ কেউ আবার গয়না পছন্দ করেও নোটের অভাবে কিনতে পারছেন না। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘গ্রামীণ এলাকায় ডেবিট কার্ড বা ক্রেডিট কার্ডে তেমন কারবার চলে না। কার্ডেও বেচাকেনা সীমিত।’’

বাঁকুড়া শহরের কাটজুড়িডাঙা মোড়ের একটি সোনার দোকানের কর্ণধার সিদ্ধার্থ খাঁ আবার জানাচ্ছেন কার্ড বা চেক নিয়ে তাঁর অভিজ্ঞতা। তিনি জানান, এমনিতেই চেক ভাঙাতে সময় লেগে যায় প্রায় তিন দিন। কার্ডে আবার নির্দিষ্ট অঙ্কের বেশি টাকা এক সঙ্গে খরচ করা যায় না। এ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ী ও ক্রেতা— দু’পক্ষই সমস্যায় পড়ছেন। সিদ্ধার্থবাবু বলেন, “বিশ্বাসে ভর করেই আমরা গয়না বেচে চেক নিচ্ছি। ক্রেতাদের বলেই রাখছি, কোনও কারণে চেক বাউন্স করলে যোগাযোগ করব। অনেকেই গয়না কিনে কয়েক দফায় কার্ডে দাম মেটাতে আসছেন। তবে সে ক্ষেত্রে পুরো টাকাটা পেলে তবেই গয়না দিচ্ছি।’’

বাঁকুড়া শহরের স্কুলডাঙার বাসিন্দা চিকিৎসক আদিনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সোমবার (আজ) এক আত্মীয়ের বিয়ে। দোকানে চেক দিয়ে গয়না এনেছি। ব্যবসায়ী আমার পরিচিত বলেই চেক ভাঙানোর আগে আমাকে গয়না দিয়েছেন। না হলে খুব সমস্যায় পড়তে হতো।”

রামপুরহাটের দু’টি পরিচিত সোনার দোকানের মালিক জগন্নাথ রায় এবং স্বরূপকুমার সরকারের ক্ষোভ, ‘‘খদ্দেরকে মাল দিতে পারছি না। কলকাতা থেকে আনা পাকা সোনা বিক্রি করতে পারছি না। আবার কলকাতা থেকে তৈরি করা মালও নিয়ে আসতে পারছি না। সবই নোটের আকালের জন্য।’’ দু’টি দোকানেই গত বছর ঠিক এই মরসুমে পাঁচ লক্ষেরও বেশি টাকার অলঙ্কার বিক্রি হয়েছিল। মালিকদের দাবি, নোট-অভাবে তা এখন মাত্র ১ লক্ষ টাকায় দাঁড়িয়েছে। খদ্দের হারিয়ে একই আক্ষেপ বোলপুরের একটি গয়নার দোকানের কর্তা সুদীপ চন্দ্রের গলাতেও। বলেছেন, ‘‘আজকের যন্ত্রণা, ভবিষ্যতের প্রাপ্তি— এই আশায় বাজারে আছি। আশা না থাকলে বিকল্পের কথা ভাবতাম।’’

Jewelry shop
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy