Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

বাংলাদেশি সন্দেহে ভিন্ রাজ্যে বন্দি ছেলে-বৌমা, উদ্ধারে গিয়ে নিথর দেহে বাংলায় ফিরলেন বৃদ্ধ!

কর্নাটকের পুলিশ দাবি করে পলাশরা বাংলাভাষী। তাই তাঁরা বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী। নিজেদের ভারতীয় বলে প্রমাণ করতে গিয়ে আধার, প্যান, ভোটার কার্ড ইত্যাদি পুলিশকে দিয়েছিলেন ওই দম্পতি।

Old man of Jamalpur who fought to rescue son and daughter in law from Bengaluru jail has been died

ভিন্ রাজ্যে কাজে গিয়ে বন্দি ছেলে-বৌমা এবং নাতিকে ফেরাতে গিয়ে মৃত্যু হল বৃদ্ধের। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জামালপুর শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২৩ ২১:১১
Share: Save:

কাজ করতে গিয়ে কর্নাটকে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী সন্দেহে গ্রেফতার হয়েছেন ছেলে-বৌমা। তাঁদের ফেরাতে গিয়ে ব্যর্থ হল বৃদ্ধ বাবার ৮ মাসের লড়াই। মৃত্যু হল বর্ধমানের জামালপুরের পঙ্কজ অধিকারীর। পরিবারের অভিযোগ, আইনি লড়াই করতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে গিয়েছিলেন বৃদ্ধ। মানসিক চাপ নিতে না পেরে বেঙ্গালুরুতে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর। মঙ্গলবার বৃদ্ধ ফিরলেন ঠিকই। কিন্তু নিথর দেহে ছেলে-পুত্রবধূ এবং নাতিকে ছাড়াই। পঙ্কজের দুই মেয়ে সাথী এবং শম্পা শ্মশানে বাবার শেষকৃত্য সম্পন্ন করেন।

পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার জৌগ্রাম পঞ্চায়েতের তেলে গ্রামের বাসিন্দা পলাশ এবং শুক্লা অধিকারী। বাড়তি রোজগারের আশায় স্ত্রী ও শিশু পুত্রকে সঙ্গে নিয়ে গত বছরের জুন মাসে বেঙ্গালুরু গিয়েছিলেন। উঠেছিলেন মারাথাহাল্লি মহকুমার ভারথুর থানার সুলিবেলা গ্রামে একটি বাড়িতে ওঠেন তাঁরা। দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরিতে জনৈক কায়েন খানের অধীনে কাজ শুরু করেন পলাশ। হোটেল, রেস্তরাঁ, সিনেমা হল-সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে বর্জ্যবস্তু, বোতল, প্লাস্টিক জাতীয় সরঞ্জাম বাছাই করা ছিল কাজ। কিন্তু গত ২৭ জুলাই ভারথুর থেকে সস্ত্রীক পলাশকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অভিযোগ, পুলিশ দাবি করে তাঁরা বাংলাভাষী। তাই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী। নিজেদের ভারতীয় বলে প্রমাণ করতে গিয়ে আধার, প্যান, ভোটার কার্ড ইত্যাদি পুলিশকে দিয়েছিলেন। পুলিশ পলাশের বৃদ্ধ বাবা, মা এবং প্রতিবেশী সুনীল অধিকারীকে ছেড়ে দিলেও অদ্ভুত ভাবে তাঁকে এবং তাঁর স্ত্রী ও শিশুপুত্রকে ছাড়েনি। ছেলে-পুত্রবধূ এবং নাতিকে ছাড়িয়ে আনতে প্রচুর চেষ্টা করেছেন বৃদ্ধ পঙ্কজ। কিন্তু তাঁর লড়াই ব্যর্থ হয়েছে। এ নিয়ে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন স্থানীয়রা।

অন্য দিকে, কেন পলাশ এবং তাঁর স্ত্রী-পুত্র এখনও বেঙ্গালুরুতে জেলবন্দি, তা নিয়ে বিস্মিত স্থানীয় প্রশাসনও। আধিকারিকরা জানাচ্ছেন ভারথুর থানার পুলিশ এসে পলাশদের তথ্য যাচাই করে গিয়েছেন। কিন্তু তার পরেও তাঁদের বন্দি করে রাখা আশ্চর্যের বিষয়। জামালপুর ব্লকের বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার বলেন, ‘‘ভারথুর থানার তিন জন পুলিশ আধিকারিক আমার দফতরে এসেছিলেন। পলাশ অধিকারী ও তাঁর স্ত্রী ভারতীয় নাগরিক কি না, তাঁদের ভোটার কার্ড এবং আধার কার্ড আসল কি না, সেই সব বিষয়ে বেঙ্গালুরু পুলিশ আমার কাছে জানতে চায়। এ ছাড়া পলাশদের পারিবারিক পরিচিতি, কত দিন তাঁরা তেলে গ্রামে বসবাস করছেন— এমন নানা বিষয়ে খোঁজ নেন। আমরা ওই দম্পতির ভারতের নাগরিকত্ব সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য ভারথুর থানার মেল আইডিতে পাঠিয়ে দিই। তার পর জামালপুরের দলিল রেজিস্ট্রি অফিস, ভূমি দফতরের অফিস, জৌগ্রাম পঞ্চায়েত, এমনকি বর্ধমান দক্ষিণ মহকুমা শাসকের অফিসে গিয়েও ওই দম্পতির নাগরিকত্ব সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য যাচাই করেন ওই আধিকারিকরা। এত কিছুর পরও পলাশ, তাঁর স্ত্রী এবং শিশুপুত্র বেঙ্গালুরুর জেল থেকে কেন মুক্তি পাচ্ছেন না, সেটাই আশ্চর্যের।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE