Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
রাতভর শহরে দাঁতালের আতঙ্ক

কালো মেঘের মতো কী একটা চলে গেল

দু’একটা পাঁচিল ভাঙা ছাড়া সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার ‘শহর-যাত্রা’য় তেমন কোনও ক্ষতি করেনি দামোদর পার হয়ে আসা হাতিটি। কিন্তু সে ক্ষতি না করুক, তার ঝলক দেখে, আওয়াজ শুনেই সারা রাত আত্মারাম খাঁচাছাড়া হয়ে গিয়েছিল অনেকের।

বাঁ দিকে, রমনাবাগানে ঘুমপাড়নি গুলি ছোড়ার পরে  দাঁতালটিকে বশে আনার চেষ্টা চলছে। উপরে, গোলাপবাগ ক্যাম্পাসের ভাঙা পাঁচিল দেখাচ্ছেন স্থানীয় এক বাসিন্দা। নিজস্ব চিত্র।

বাঁ দিকে, রমনাবাগানে ঘুমপাড়নি গুলি ছোড়ার পরে দাঁতালটিকে বশে আনার চেষ্টা চলছে। উপরে, গোলাপবাগ ক্যাম্পাসের ভাঙা পাঁচিল দেখাচ্ছেন স্থানীয় এক বাসিন্দা। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৬ ০০:৩৩
Share: Save:

দু’একটা পাঁচিল ভাঙা ছাড়া সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার ‘শহর-যাত্রা’য় তেমন কোনও ক্ষতি করেনি দামোদর পার হয়ে আসা হাতিটি। কিন্তু সে ক্ষতি না করুক, তার ঝলক দেখে, আওয়াজ শুনেই সারা রাত আত্মারাম খাঁচাছাড়া হয়ে গিয়েছিল অনেকের।

শেষে গভীর রাত পর্যন্ত তাকে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের গোপালবাগ ক্যাম্পাসের এ মাথা থেকে ও মাথা ছুটিয়ে রমনাবাগানে নিয়ে গিয়ে ঘুমপাড়ানি গুলি ছোড়ে বন দফতর। তাতেও আতঙ্ক কমেনি। বাবুরবাগের একটা অংশে স্থানীয় যুবকেরা রাতভর পাহারা দেন। পুলিশেও মোটরবাইকে শহর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে মাইক নিয়ে সতর্কতা প্রচার করে। ভোরে শহর ছাড়ে দাঁতালটি। বর্ধমানের মুখ্য বনপাল অজয় দাস বলেন, “রমনাবাগানে হাতিটিকে ঘুম পাড়ানির গুলি দিয়ে নিস্তেজ করে বুধবার ভোরে দলছুট ওই হাতিটিকে উত্তরবঙ্গে পাঠানো হয়েছে।”

ছবি: উদিত সিংহ

বন দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটা নাগাদ খণ্ডঘোষ, বেলকাশ থেকে দামোদর পেরিয়ে হাতিটি বর্ধমানের শরৎপল্লি এলাকায় ঢুকে পড়ে। সেখান থেকে হেলতে-দুলতে কালিন্দিপাড়া বাগান হয়ে পৌঁছে যায় লাকুর্ড্ডির ঝন্টু ধরের বাড়ির পাশে। সেখানে পাঁচিলে বাধা পায় হাতিটি। পাঁচিল ভেঙে সেটি চলে আসে লাক্কুড্ডির মূল রাস্তায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, সেখানে তখন ওলাইচণ্ডী পুজো হচ্ছিল। লোকজনের আওয়াজ, কাঁসর-ঘণ্টা শুনে হাতিটি উল্টো দিকে মদন ডাক্তারের গলি ধরে একটি বাগানে গিয়ে ঢুকে পড়ে। সেই বাগান টপকে গোদার জমি ধরে সোজা পৌঁছে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলাপবাগ ক্যাম্পাসের কাছে। তারপর জল-পরিখা পেরিয়ে সটান ঢুকে পড়ে ক্যাম্পাসে। ক্যাম্পাসের ভিতর ক্যান্টিনের সামনে একটি পাঁচিল ভেঙে হাতিটি চলে আসে একেবারে জিটি রোডে।

হাতি দেখার গল্প বলতে ব্যস্ত সায়নদীপ। নিজস্ব চিত্র।

মাঝরাতের শহরে ততক্ষণে সাড়া পড়ে গিয়েছে। পুলিশের বারবার নিষেধ সত্ত্বেও অন্তত ৫০-৬০ জন মানুষ হাতিটির পিছনে ছুটছিলেন। মোবাইল ক্যামেরায় ছবি তোলার হিড়িকও ছিল। লাকুড্ডি এলাকার এক কেবল ব্যবসায়ী সঞ্জীব চৌধুরী বলেন, ‘‘হাতিটি নিজেই দিগভ্রষ্ট হয়ে পড়েছিল। তাণ্ডব চালাবে কী, লোকজন দেখে ঘাবড়ে গিয়ে কোথা দিয়ে পালাবে সেই ভাবনাতেই মত্ত ছিল।” কিন্তু হাতি এগিয়ে ক্ষতি না করলেও বাড়ির জানলার পাশে, বারান্দার সামনে হাতি দেখেই ঘুম ছুটে গিয়েছিল অনেকের। লাকুড্ডি এলাকার বাসিন্দা সোমা সাহার কথায়, ‘‘তখন ৮টা হবে। চিৎকার, চেঁচামেচিতে জানলায় গিয়ে দেখি, বাড়ির পাশেই গলিতে হাতি। তারপরে পাঁচিল ভেঙে গলির আর এক মাথা দিয়ে বেরিয়ে গেল। আমার ছেলে তো ভয়ে কেঁদেই অস্থির।’’ ছেলে সায়নদীপও বলে, ‘‘জানলায় মায়ের পাশে গিয়ে দেখি কালো মেঘের মতো কী একটা চলে গেল। খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। খালি মনে হচ্ছিল, বাড়ির ভেতর ঢুকে পড়বে না তো।’’ ওই এলাকারই বামুনপাড়ার বাসিন্দা বিশ্বনাথ শর্মা জানান, হাতিটি উচ্চতায় কমপক্ষে আট ফুট হবে। ওই হাতি দেখে তিনি ভয়ে দরজা-জানলা তো বটেই, ঘরের আলো পর্যন্ত নিভিয়ে দিয়েছিলেন।

কিছুক্ষণের মধ্যেই হাতিটি গোদা হয়ে জল-পরিখা পেরিয়ে পৌঁছে যায় গোলাপবাগে। সেখানে বন দফতর, হুলা পার্টির লোকজন দাঁতালটিতে মশাল নিয়ে তাড়া করেন। কমল সায়র পেরিয়ে হাতি উঠে পড়ে জিটি রোডে। সেখান থেকে বাবুরবাগ। হুলা পার্টির তাড়া খেয়ে বন দফতরের সামনে একটি মাঠে হাতিটি চলে আসে। সেখান থেকে বেরোতে গিয়ে একটি বড় নর্দমায় পড়ে যায় হাতিটি। সেখান থেকে ওঠার পরে হাতিটিকে তাড়াতে তাড়াতে নিয়ে যাওয়া হয় রমনাবাগানে। সেখানেই ঘুমপাড়ানি গুলি ছুঁড়ে নিস্তেজ করা হয়। পরে লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে ক্রেনের সাহায্য গাড়িতে তোলা হয়। ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ উত্তরবঙ্গের দিকে রওনা দেয় দাঁতালটি।

ভোরের আলো ফোটার আগে হাতি শহর ছাড়লেও তার গল্প রয়ে গিয়েছে দিনভর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

elephant people
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE