প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভা উপলক্ষে কড়া নজরদারি দুর্গাপুরে। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র
অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট (এএসপি) ধুঁকছে। আধুনিকীকরণ জরুরি দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টে (ডিএসপি)। ফের খুলবে কি ‘মাইনিং অ্যান্ড অ্যালায়েড মেশিনারি কর্পোরেশন’ (এমএএমসি) ও ‘হিন্দুস্থান ফার্টিলাইজার কর্পোরেশন লিমিটেড’ (এইচএফসিএল)?
শহর দুর্গাপুরের রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পের মানচিত্রটা ২০১৯ সালে এমনই। সেই পরিস্থিতিতেই আজ, শনিবার শহরে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শহরের এই কারখানাগুলির ভবিষ্যৎ নিয়ে স্পষ্ট কোনও দিশা দেখাবেন কি প্রধানমন্ত্রী, শুক্রবার সেই চর্চাই চলল শ্রমিক সংগঠনগুলির নেতাদের মধ্যে।
শ্রমিক সংগঠনগুলি জানায়, গত বছরের ৩০ নভেম্বর কেন্দ্রীয় ইস্পাতমন্ত্রী চৌধুরী বীরেন্দ্র সিংহ কারখানা পরিদর্শনে এসে জানান, ডিএসপি-র বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য লগ্নি করবে কেন্দ্রীয় সরকার। ওই সময়েই এএসপি-র ঘুরে দাঁড়ানোর বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছিলেন মন্ত্রী। আজ, নেহরু স্টেডিয়ামের সভা থেকে প্রধানমন্ত্রী এ সব বিষয়ে কিছু বলেন কি না, সে দিকে নজর থাকছে বলে জানায় সিটু, আইএনটিইউসি-র মতো শ্রমিক সংগঠনগুলি।
এএসপি-র কৌশলগত বিলগ্নিকরণের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলন করছে শ্রমিক সংগঠনগুলি। শ্রমিক নেতাদের দাবি, উৎপাদনের মাত্রা বাড়িয়ে এএসপি-র পুনরুজ্জীবন ঘটানো হোক। ওই কারখানা পরিদর্শনে এসে ইস্পাতমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, কারখানাকে ঘুরে দাঁড় করাতে তিনি সেলের চেয়ারম্যানকে উপযুক্ত ‘রোড ম্যাপ’ তৈরি করতে বলেছেন। শিল্পশহরের বাসিন্দারা প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে এএসপি-র কৌশলগত বিলগ্নিকরণের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের ঘোষণা শুনতে আগ্রহী।
২০০২-র ৩ জানুয়ারি পাকাপাকি ভাবে বন্ধ হয় এমএএমসি। কারখানা ফের চালু করতে চেয়ে ২০০৭-র ১ জুন তিন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা, প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অধীনস্থ ‘ভারত আর্থ মুভার্স লিমিটেড’ (বিইএমএল), ‘কোল ইন্ডিয়া লিমিটেড’ (সিআইএল) ও ‘দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন’ (ডিভিসি) যথাক্রমে ৪৮ শতাংশ, ২৬ শতাংশ ও ২৬ শতাংশ হারে অংশীদারিত্বে কনসোর্টিয়াম গড়ে। কলকাতা হাইকোর্টে নিলামে সর্বোচ্চ একশো কোটি টাকা দর দিয়ে ২০১১ সালে এমএএমসি-র দায়িত্ব পায় কনসোর্টিয়াম। কারখানার নতুন নাম হয় এমএএমসি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (এমএএমসিআইএল)। ঠিক হয়, উৎপাদনের দায়িত্বে বিইএমএল, উৎপাদিত খনি যন্ত্রাংশের ক্রেতা সিআইএল এবং সিআইএলের উত্তোলিত কয়লার ক্রেতা হবে ডিভিসি। এ ভাবেই এমএএমসি চালুর পরিকল্পনা রয়েছে কনসোর্টিয়ামের। কিন্তু তার পরে সাত বছর পেরিয়ে গিয়েছে। তিন সংস্থা মিলে একটি টাস্ক ফোর্সও গড়েছে। কিন্তু কারখানা খোলার কোনও উদ্যোগ নজরে আসেনি বলে অভিযোগ। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কিছু বলবেন কি না, নজর রয়েছে সে দিকেও, জানান শ্রমিক নেতারা।
রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা ‘হিন্দুস্থান ফার্টিলাইজার কর্পোরেশন লিমিটেড’ (এইচএফসিএল) ফের চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কি না, সে বিষয়েও নির্দিষ্ট করে জানতে প্রধানমন্ত্রীর সভার দিকে তাকিয়ে রয়েছেন শ্রমিক নেতারা। তাঁরা জানান, দেশে সারের ঘাটতি মেটাতে দুর্গাপুর-সহ দেশের মোট আটটি বন্ধ সার কারখানা নতুন করে চালু করার পরিকল্পনায় ২০১১-য় সায় দেয় অর্থনীতি বিষয়ক ক্যাবিনেট কমিটি। দেশের এমন তিনটি বন্ধ কারখানা সরকারি উদ্যোগে খোলার প্রক্রিয়াও চলছে। কিন্তু অভিযোগ, দুর্গাপুরের কারখানার বিষয়ে কিছুই বলেননি কেন্দ্রীয় সরকার।
সিটু-র জেলা সভাপতি বিনয়েন্দ্রকিশোর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এএসপি-র কৌশলগত বিলগ্নিকরণের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের বিষয়ে নিশ্চয়তা মেলেনি। এমএএমসি বা এইচএফসিএল খোলার বিষয়েও সাড়াশব্দ নেই গত পাঁচ বছরে। ফলে শিল্পক্ষেত্র নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কিছু না বললে হতাশই হবেন দুর্গাপুরবাসী।’’ আইএনটিইউসি-র জেলা সভাপতি বিকাশ ঘটকের ক্ষোভ, ‘‘শিল্পশহরে শিল্পের আকাল। প্রধানমন্ত্রী আসছেন রাজনৈতিক সফরে। তাই স্রেফ রাজনীতির কথা, না কি শিল্পক্ষেত্র নিয়েও কিছু বলেন কি না, সেটাই দেখার।’’ এইচএমএস নেতা অরূপ রায়ের অবশ্য বক্তব্য, ‘‘শ্রমিক-সহ সমাজের সব স্তরের কথাই প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে থাকবে বলে আশা করছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy