Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

নাইনেই বিয়ে, পরীক্ষা দিল অন্তঃসত্ত্বা

বিডিও (জামালপুর) সুব্রত মল্লিক বলেন, “নাবালিকা ছাত্রীটির বিয়ে কী ভাবে হল, খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজন। এ ব্যাপারে স্কুল কর্তৃপক্ষ তাঁদের দায় এড়িয়ে যেতে পারেন না।”

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৮ ০৫:০০
Share: Save:

একে নাবালিকা। তার উপরে চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা। সেই অবস্থাতেই হাসপাতালের বিছানায় পরীক্ষা দিল জামালপুরের এক পরীক্ষার্থী। অথচ চলতি জানুয়ারিতে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে প্রশংসিত হয়েছিল পূর্ব বর্ধমানের দশ কন্যাশ্রী। ঘটনাচক্রে আরও এক বার মুখ্যমন্ত্রী জেলায় আসার ঠিক আগে মাধ্যমিক পরীক্ষার তৃতীয় দিন, বুধবার এই ছবি উঠে আসার পরে অস্বস্তিতে জেলা প্রশাসন। জানা যাচ্ছে, নবম শ্রেণিতে পড়ার সময়েই মেয়েটির বিয়ে দিয়েছিল পরিবার।

জেলার কন্যাশ্রী প্রকল্প আধিকারিক শারদ্বতী চৌধুরীর কথায়, “খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। এ বার অভিভাবকদের সচেতন করার জন্য স্কুলে স্কুলে কন্যাশ্রী মেয়েদের কাজে লাগানোর পরিকল্পনা নিতে হবে।” ওই ছাত্রীটি যে স্কুলে পড়ে। সেই জামালপুরের চকদিঘি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মিতা কোঁড়ার দাবি, “আমাদের স্কুলের কোনও বিবাহিত নাবালিকা মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে, এটা জানতাম না। পুলিশ ওই ছাত্রীর ঠিকানা নিতে এসেছিল। তখনই ঘটনার কথা জানতে পেরেছি। ওই ছাত্রী কন্যাশ্রী বা সবুজসাথী প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছে কিনা, আমার মনে নেই।”

জামালপুরেরই শুঁড়ে কালিতলা উচ্চবিদ্যালয়ে এ দিন ভূগোল পরীক্ষা দিতে এসে অসুস্থ হয়ে পড়ে বছর সতেরোর ওই মেয়েটি। সে জামালপুরে নিজের বাপের বাড়ি থেকেই পরীক্ষাকেন্দ্রে যাতায়াত করছে। ওই স্কুলের শিক্ষক স্বপন ঘোষাল বলেন, “বিবাহিত ছাত্রীটি অসুস্থ হয়ে পড়লে জামালপুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠানো হয়। সেখানকার চিকিৎসকেরা জানান, সে চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা। পরীক্ষার চাপ ও অত্যধিক গরমের জন্য অসুস্থ হয়ে পড়েছে।” ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক আনন্দমোহন গড়াই বলেন, “দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওই ছাত্রী সুস্থ অনুভব করলে সে পরীক্ষা দিতে ইচ্ছুক বলে আমাদের জানায়। আমরা পরীক্ষা কেন্দ্রে তার ইচ্ছার কথা জানাই।” তার পরেই পুলিশ ও পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে শিক্ষকেরা হাসপাতালে চলে আসেন। হাসপাতালের শয্যায় বসেই মেয়েটি পরীক্ষা দেয়।

ওই ছাত্রীর মা এ দিন জানান, মেয়ে ক্লাস নাইনে পড়ার সময়েই হুগলির গুড়াপের এক যুবকের সঙ্গে তার বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। ওই মহিলার কথায়, “আমরা গরিব মানুষ। ভাল পাত্র পেয়েছিলাম, সে জন্য এক প্রকার জোর করেই বিয়ে দিয়েছিলাম। এখন বুঝতে পারছি নাবালিকা অবস্থায় বিয়ে দেওয়া ঠিক হয়নি।” ওই ছাত্রী মায়ের পাশে বসে বলে, “এত কষ্টের মধ্যেও ভাল পরীক্ষা দিয়েছি। তবে সবাইকে বলব, পড়তে পড়তে বিয়ে না করতে।”

বিডিও (জামালপুর) সুব্রত মল্লিক বলেন, “নাবালিকা ছাত্রীটির বিয়ে কী ভাবে হল, খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজন। এ ব্যাপারে স্কুল কর্তৃপক্ষ তাঁদের দায় এড়িয়ে যেতে পারেন না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Madhyamik examination Pregnant
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE