Advertisement
E-Paper

মন ভারী, তবু ব্যস্ত পুজোর আয়োজনে

জৌলুস হারিয়ে গিয়েছে কবেই। তবে জোড়াতালি দিয়ে হলেও পুজোটা হয়ে এসেছে। এ বার সেটুকুও মুছে যাওয়ার জোগাড় রূপনারায়ণপুরের হিন্দুস্তান কেব্‌লসের কর্মী আবাসনে।

সুশান্ত বণিক

শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৬ ০০:৩৮
চলছে পুজোর প্রস্তুতি। — শৈলেন সরকার।

চলছে পুজোর প্রস্তুতি। — শৈলেন সরকার।

জৌলুস হারিয়ে গিয়েছে কবেই। তবে জোড়াতালি দিয়ে হলেও পুজোটা হয়ে এসেছে। এ বার সেটুকুও মুছে যাওয়ার জোগাড় রূপনারায়ণপুরের হিন্দুস্তান কেব্‌লসের কর্মী আবাসনে। পরের বছর থেকে হয়তো আর পুজোই হবে না, পুজোর মাঠে আবাসিকদের চাঁদের হাট আর বসবে না— উৎসবের মরসুমে এ সব ভেবেই চোখে জল শ্রমিক-কর্মী ও তাঁদের পরিবারের।

পুজোর মুখেই হিন্দুস্তান কেব্‌লস কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। তার অনেক আগেই অবশ্য পুজো কমিটি গড়ে প্রস্তুতিতে নেমে পড়েছিলেন আবাসিকেরা। গত ১৮ মাস ধরে বেতন মেলেনি। সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর হাল। তা সত্ত্বেও বছরের এই চারটে দিন সব ভুলে পুজোর আয়োজনে, আনন্দে মাতেন তাঁরা। হাতে আর মাত্র দিন কয়েক বাকি। প্রস্তুতি যখন জোরকদমে, ঠিক তখনই বিষাদের খবরটা আসে— পাকাপাকি ভাবে কারখানার ঝাঁপ বন্ধের ঘোষণা হয়েছে। পুজো কমিটির সম্পাদক শ্যামল লালা বলেন, ‘‘আমরা জানতাম কারখানা এক দিন বন্ধ হবেই। মানসিক ভাবে তৈরিও ছিলাম। কিন্তু পুজোর মুখে সরকার এই সিদ্ধান্তটা নেবে, কল্পনা করিনি।’’

কর্মী আবাসনের নিউ কলোনি, ওল্ড কলোনি ও অফিসার্স কলোনি মিলিয়ে শ’চারেক আবাসনের বাসিন্দাদের এটাই একমাত্র পুজো। এ বার তা ৬২ বছরে পড়েছে। এলাকার পুরনো বাসিন্দারা জানান, কারখানার যখন রমরমা ছিল তখন এই পুজোর জৌলুসই ছিল আলাদা। একেবারে একান্নবর্তী পরিবারের পুজো বলে মনে হত। এখন তার ছিঁটেফোটা নেই। পুজো কমিটির সহ-সভাপতি শুভজিৎ মল্লিক বলেন, ‘‘শেষ বার জাঁকজমক করে পুজো হয় ২০০৪ সালে। সে বার ছিল পুজোর ৫০ বছর পূর্তি।’’ তার কিছু দিন আগে থেকেই কারখানা ধুঁকতে শুরু করেছে। পুজোতেও ধীরে ধীরে তার ছাপ পড়ে।

টেলিফোনের কেব্‌ল তৈরির জন্য ১৯৫২ সালে তৈরি হয় এই কারখানা। দু’বছর পর থেকেই বাসিন্দারা দুর্গাপুজো শুরু করেন। ১৯৯৫ সাল থেকে রুগ্‌ণ হতে থাকে কারখানা। পাঠানো হয় বিআইএফআরে। একাধিক বৈঠকেও আশার আলো দেখা যায়নি। শেষে ২০০১ সালে উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। মাঝে কারখানা অধিগ্রহণে আগ্রহ দেখায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অধীনস্থ অর্ডিন্যান্স ফ্যাকট্রি বোর্ড। কিন্তু সেই উদ্যোগও ভেস্তে যায়। অবশেষে দিন কয়েক আগে কারখানা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা।

সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কর্মীদের এর পরে স্বেচ্ছাবসর নিতে হবে। পাওনাগন্ডা মিটিয়ে দেওয়ার পরে আবাসন ছেড়ে দিতে হবে। কারখানার কর্মীর পরিচয়ও মুছে যাবে। খালি পড়ে থাকা আবাসনে পুজো আর কী করে হবে, আক্ষেপ ঝড়ে পড়ে আবাসিকদের গলায়। পুজো কমিটির কর্ণধার গৌতম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মন পুরোপুরি ভেঙে গিয়েছে। কোনও উৎসাহ পাচ্ছি না। তবে এটাই তো শেষ বছর, তাই সবাই মিলে ঝাঁপিয়েছি।’’

টিনের চালার এক চিলতে মণ্ডপে ম্যারাপ বাঁধার কাজ চলছে এখন। এখনও পুরোপুরি সাফসুতরো করা হয়নি আশেপাশের আগাছা। চুনের প্রলেপও পড়েনি মণ্ডপে। উদ্যোক্তাদের মলিন মুখগুলোই জানিয়ে দিচ্ছে, আয়োজনে ব্যস্ত থাকলেও উৎসবের মেজাজটা নেই। দাদুর হাত ধরে মণ্ডপ দেখতে এসেছিল ছোট্ট মনীষা মাজি। শুকনো মুখে সামনে বসেছিল কলেজ পড়ুয়া সব্যসাচী। সকলেরই মন ভার। এ বার বিসর্জনে আর জোর গলায় ‘আসছে বছর আবার হবে’ বলা হবে না কেব্‌লসের কর্মীদের।

Puja celebration
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy