ঝাঁক: মাধাইগঞ্জে পরিযায়ী। নিজস্ব চিত্র
প্রতি বছরই আসে ওরা। সারাদিন কিচির-মিচির শব্দে কান ঝালাপালা। আঁশটে গন্ধে টেকা দায়। তবু বন দফতর, স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি এই অতিথিদের আগলে রাখতে এগিয়ে এসেছেন দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকের মাধাইগঞ্জের বাসিন্দারা।
মাধাইগঞ্জ গ্রাম লাগোয়া জঙ্গলে গত কয়েক বছর ধরে উড়ে এসে বাসা বাঁধে প্রচুর ওপেনবিল স্টর্ক বা শামুখখোল পাখি। দুর্গাপুরের বনাধিকারিক মিলনকান্তি মণ্ডল জানান, এরা মূলত উত্তর আমেরিকার পাখি। প্রজননের জন্য এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন জায়গায় আসে। সাত-আট মাস পর্যন্ত থাকে। তার পরে বাচ্চা বড় হয়ে গেলে ফিরে যায়। পরের বছর আবার আসে। এই বছর মাধাইগঞ্জে প্রায় সাড়ে চার হাজার পাখি এসেছে বলে জানান তিনি।
বনকর্তারা জানান, এই পাখির দুই ঠোঁটের মাঝে অনেকটা ফাঁক থাকে। সেই ফাঁকে শামুক ঢুকিয়ে চাপ দিয়ে উপরের খোল ভেঙে ফেলে মাংস খায়। ভোরে দল বেঁধে বেরোয় এ সব পাখি। জলাভূমিতে নেমে কাদায় লম্বা ঠোঁট ঢুকিয়ে শামুক, ঝিনুক, গুগলি বের করে খায়। কখনও-কখনও ব্যাঙ, কাঁকড়া এমনকী ছোট সাপও খেয়ে নেয়।
মাধাইগঞ্জের বাসিন্দারা জানান, পাখিগুলি সাধারণত জুনে আসে। বেশির ভাগই ফিরে যায় অক্টোবরে। উঁচু গাছে ডালপালা দিয়ে মাচার মতো করে বাসা বাঁধে। ১৫-২০ দিন ধরে বাসা তৈরির পরে ডিম পাড়ে। মাসখানেক পরে বাচ্চা হয়। বাচ্চা বড় হলে গাছ ফাঁকা করে ফিরে যায়। বাসিন্দারা জানান, গোড়ার দিকে কিছু লোক মাংসের জন্য এই পাখি মারত। তাঁরা প্রতিবাদ করেন। বন দফতর বা স্থানীয় প্রশাসন নজরদারির পাশাপাশি সচেতনতা তৈরিতে উদ্যোগী হয়। ধীরে-ধীরে চোরাশিকার কমেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা প্রতিমা রুইদাস, অনাথ রুইদাসেরা বলেন, ‘‘বছর-বছর আসে পাখিগুলো। এখন ওদের গ্রামেরই অঙ্গ বলে মনে হয়। চলে গেলে ফাঁকা লাগে।’’ প্রতিমাদেবীর বাড়ির পাশে বড় গাছের ডালে কচিকাঁচা নিয়ে বাসা বেঁধেছিল এক শামুখখোল পরিবার। ঝড়ে গাছের সেই ডাল ভেঙে পড়েছে উঠোনে। মাটি থেকে মাত্র ফুট ছয়েক উঁচুতে শামুখখোল পরিবার রয়েছে এখন। প্রতিমাদেবী বলেন, ‘‘ওরা ভয় পায় না। রাতে কিচির-মিচির শুনলে বুঝতে পারি, সাপ বা বনবেড়াল এসেছে। তাড়িয়ে দিই।’’ পাখিদের জন্য ডাল সরিয়ে বাড়ি পরিষ্কার করতে পারেননি তাঁরা। আঁশটে গন্ধ। পোকামাকড় ঢুকে যাচ্ছে ঘরে। তবু আগলে রেখেছেন পাখিদের।
ফরিদপুরের বিডিও শুভ সিংহরায় বলেন, ‘‘স্থানীয় বাসিন্দারা পাখিদের যে ভাবে আগলে রেখেছেন তা প্রশংসনীয়। আগে বহু চোরাশিকার হয়েছে। হাতেনাতে ধরাও হয়েছে। তবে এখন মানুষ অনেক সচেতন।’’ গ্রামবাসী সনৎ রুইদাস, ধরম রুইদাসেরা অবশ্য বলেন, ‘‘দু’একটা চোরাশিকারের ঘটনা এখনও ঘটে। পাহারার ব্যবস্থা হলে ভাল হয়।’’ বন আধিকারিক মিলনবাবু বলেন, ‘‘চোরাশিকারে ৫ বছর জেল ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানার শাস্তির কথা পোস্টার দিয়ে প্রচার করা হয়েছে। বনরক্ষা কমিটিকে বিশেষ নজরও রাখতে বলা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy