Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

দেদার গাছ সাফ, প্রশ্নে বন দফতর

দূষণে জর্জরিত শহরে দেদার গাছ কাটা নিয়ে সরব হয়েছিলেন বাসিন্দারা। জাতীয় পরিবেশ আদালত দুর্গাপুরে ২ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে এ ভাবে গাছ কাটার উপরে স্থগিতাদেশ জারি করেছিল। কেন এত গাছ কেটে ফেলা হয়েছে, সেই ব্যাখ্যাও চেয়েছিল।

বিধাননগরে এ ভাবে কাটা পড়েছে বহু গাছ। ফাইল চিত্র।

বিধাননগরে এ ভাবে কাটা পড়েছে বহু গাছ। ফাইল চিত্র।

সুব্রত সীট
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৬ ০৩:০১
Share: Save:

দূষণে জর্জরিত শহরে দেদার গাছ কাটা নিয়ে সরব হয়েছিলেন বাসিন্দারা। জাতীয় পরিবেশ আদালত দুর্গাপুরে ২ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে এ ভাবে গাছ কাটার উপরে স্থগিতাদেশ জারি করেছিল। কেন এত গাছ কেটে ফেলা হয়েছে, সেই ব্যাখ্যাও চেয়েছিল। কিন্তু বছর পেরিয়ে গেলেও বন দফতরের তরফে তা আদালতে জমা না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গোটা ঘটনায় বন দফতরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পরিবেশপ্রেমীরা। যদিও বন দফতরের দাবি, যাবতীয় তথ্য পাঠানো হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জাতীয় সড়কের ধারে ইন্দো-আমেরিকান মোড়ে গাছ কাটা শুরু হয় গত বছর মে মাসে। দূষণে জেরবার শিল্পনগরীতে এ ভাবে কয়েক দশকের পুরনো হাজার-হাজার গাছ কেটে ফেলার বিরুদ্ধে রাস্তায় নামেন স্থানীয় মানুষজন। আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের (এডিডিএ) মালিকানাধীন ওই জমিতে বিভিন্ন ধরনের গাছ রয়েছে। বাসিন্দারা বন দফতরের স্থানীয় অফিসে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান। কিন্তু কোনও ফল হয়নি বলে অভিযোগ। গাছ কাটা চলতেই থাকে। বিজেপি নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায় দুর্গাপুরে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগ দিতে এসে ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টি দেখে গাছ কাটার নিন্দা করেন। কলকাতার পরিবেশ কর্মী সুভাষ দত্ত খবর পেয়ে দুর্গাপুরে আসেন। সব দেখেশুনে তিনি দুর্গাপুরের শিক্ষিকা কৌশিকী ঘটকের সঙ্গে যৌথ ভাবে জাতীয় পরিবেশ আদালতে মামলা করেন। আদালত অর্ন্তবর্তী রায়ে জানায়, পরবর্তী রায় না দেওয়া পর্যন্ত দুর্গাপুরে আর কোনও গাছ কাটা যাবে না। কেন এ ভাবে গাছ কাটার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, বন দফতরকে তার ব্যাখ্যাও জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত।

এডিডিএ সূত্রে জানা যায়, ওই জমিতে গাছ কাটার কোনও অনুমোদন পর্ষদের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি। বন দফতর সূত্রে জানানো হয়, জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের জন্য ওই এলাকায় বহু গাছ কাটা পড়েছে। সে জন্য নতুন করে অনেক গাছ লাগানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকারের অধীনস্থ ওয়েস্টল্যান্ড ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড ওই জমিতে নতুন করে গাছ লাগাবে। সে জন্য পরিবেশের উপরে যে সব গাছের প্রভাব নিয়ে বিতর্ক আছে, যেমন ইউক্যালিপটাস, আকাশমনি ইত্যাদি গাছ কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বন দফতর এ কথা জানালেও, ইউক্যালিপটাস, আকাশমনির পাশাপাশি সেগুন, শিশু, নিম-সহ নানা গাছও কেটে সাফ করে দেওয়া হয়।

গাছ কাটায় আপত্তি জানানোয় হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দা কৌশিকীদেবী, দেবপ্রতিম ঘটকদের। তাঁরা বলেন, ‘‘দূষণে জেরবার এই শহর। চোখের সামনে দীর্ঘদিনের পুরনো গাছ এ ভাবে কেটে ফেলায় আমরা কষ্ট পেয়েছি। সে জন্যই আমরা প্রতিবাদ করেছি।’’ সুভাষবাবু জানান, আট হাজারের উপরে গাছ কাটা হয়েছে। পরিবেশের উপরে প্রভাবের নাম করে যে-যে গাছ নির্দিষ্ট করা হয়েছে তা নিয়ে বিতর্ক আছে। তাছাড়া নতুন গাছ লাগিয়ে তার সুফল পেতে সময় লাগে।

বুধবার পরিবেশ আদালতে ওই মামলাটি ফের উঠেছিল। এত গাছ কেন কাটা হয়েছিল, তার কোনও সদুত্তর জমা পড়েনি বলে জানায় আদালত। দুর্গাপুরের ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসার (ডিএফও) মিলনকান্তি মণ্ডলকে আদালতে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। বৃহস্পতিবার মিলনকান্তিবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অবশ্য দাবি করেন, যাবতীয় তথ্য তিনি সরকারি আইনজীবীর কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘ওই জায়গায় ইতিমধ্যে প্রায় ৫০ হাজার গাছ লাগানো হয়েছে। আমি সব তথ্য আগেই পাঠিয়ে দিয়েছি। খোঁজ নিয়ে দেখছি। আদালতের নির্দেশ এখনও হাতে পাইনি।’’

এ দিন ওই এলাকায় গিয়ে নতুন লাগানো গাছের চারা নজরে এসেছে ঠিকই। গবাদি পশু যাতে না খেয়ে নেয় সে জন্য কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে এলাকা ঘিরেও দেওয়া হয়েছে। তবে গরমে ঠিক মতো জল না পেয়ে শুকিয়ে গিয়েছে বহু চারা। বাসিন্দাদের অভিযোগ, নিয়মিত জল না পেয়ে গাছগুলি মরে যাবে। বন দফতরের তরফে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, যে গাছগুলি লাগানো হয়েছে সেগুলি সহনশীল গাছ। নিয়মিত জলও দেওয়া হয়। তাই সব গাছই বেঁচে থাকবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tree cut
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE