মন্দা: যাত্রী মিলছে না। প্রতীক্ষায় টাঙ্গা। নিজস্ব চিত্র
রঙিন কাপড়ে সাজানো টাঙ্গা। সওয়ারিদের বসার জন্য লালা মখমলের গদি। ঘোড়ার মাথায় বাহারি রঙিন পালক। কানে গলায় পুঁতির মালা। পিঠে রঙিন চাদর। পরিবার নিয়ে চেপে বসেছেন সওয়ারি। গাড়োয়ান রশিতে টান দিতেই টগবগ করে ছুটল টাঙ্গা। একের পর এক পুজো মণ্ডপ ঘুরিয়ে তবেই ছুটি।
৬০-৭০ এর দশকে কুলটি, বরাকর, নিয়ামতপুর, ডিসেরগড় এলাকায় এ ভাবেই মণ্ডপ ঘুরে ঠাকুর দেখার চল ছিল। এখন অবশ্য সে দিন গিয়েছে। উৎসবে গাড়োয়ানেরাও আর টাঙ্গা সাজিয়ে অপেক্ষা করেন না। অতীতের স্মৃতি হাতড়ে কুলটির পাতিয়ানার বাসিন্দা মহম্মদ
আতাউল্লা বলেন, ‘‘যখন পিতলের ১০ নয়া ছিল তখন বাবার কাছে টাঙ্গা চালাতে শিখেছি। সারা বছর যা আয় হত তার দ্বিগুণ মিলত পুজোর এই চার দিন।’’ তাঁর দাবি, আগে বায়না না করলে টাঙ্গা মিলত না। দিন-রাত এক করে ছুটত টাঙ্গা। যাঁর টাঙ্গা যত সুন্দর করে সাজনো হতো তাঁর কদর তত বেশি ছিল। হুমরি খেয়ে পড়তেন সওয়ারিরাও। সুযোগ বুঝে ভাড়াও চড়িয়ে দিতেন গাড়োয়ানেরা। আক্ষেপ ঝরে পড়েছে মধ্যবয়সী মহম্মদ কাশেমের গলায়। তিনি বলেন, ‘‘এখন টাঙ্গা সাজিয়ে কী হবে? কোনওক্রমে পরিবার ও ঘোড়ার দানাপানি জোগাড় হয়।’’
এমন অবস্থায় অনেকেই এই পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। যদিও কুলটির আজাদনগরে আজও কিছু প্রবীণ গাড়োয়ানের দেখা মেলে। এমনই এক জন মহম্মদ সরফুরদ্দিন। তিনি জানালেন, রেল স্টেশন, থানামোড়, রানিতলা, বেগুনিয়া, কল্যাণেশ্বরী এলাকায় এক সময় ২০০টি টাঙ্গা চলত। এখন মেরেকেটে সংখ্যাটি পনেরোয় এসে দাঁড়িয়েছে।’’
আর এক গাড়োয়ান মহম্মদ সামসুল জানালেন, নবম শ্রেণিতে পড়ার সময়ে তিনি টাঙ্গা চালানো শিখেছিলেন। তার পরে ভালই চলছিল। কিন্তু বছর কয়েক পরে তাঁর ঘোড়া মারা যায়। অর্থের অভাবে আর কিনতে পারেননি। পেটের দায়ে এখন দিনমজুরি করছেন।’’
তবে বাজার মন্দার হলেও আজও টাঙ্গা চালান মহম্মদ রাজু। তিনি জানালেন, আগের মতো না হলেও পুজোর ছুটিতে বাইরে থেকে বেড়াতে আসা কেউ কেউ এখনও টাঙ্গা ভাড়া করেন। তাঁর বিশ্বাস, সবটা এখনও শেষ হয়ে যায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy