Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

জমি দখল ঠেকাতে পালা করে পাহারা

জমি দখলের উদ্দেশ্যে তছনছ করে দেওয়া হচ্ছে বাগান। প্রতিবাদ করলে পড়তে হচ্ছে হুমকির মুখে। দামোদরের পাড় লাগোয়া এলাকায় এক দল দুষ্কৃতী এ ভাবে খাস জমি জবরদখল করছে বলে অভিযোগ হিরাপুরের শ্যামডিহি এলাকার বাসিন্দারা। ইতিমধ্যে এই খাস জমি পুনরুদ্ধার করে সবুজ ফেরানোর আর্জি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেছে এলাকার সংগঠন ‘সরকারি খাস জমি এবং সবুজ বাঁচাও কমিটি’।

শ্যামডিহি এলাকায় এই সব ভেরেন্ডা গাছ নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। ছবি: শৈলেন সরকার।

শ্যামডিহি এলাকায় এই সব ভেরেন্ডা গাছ নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। ছবি: শৈলেন সরকার।

সুশান্ত বণিক
হিরাপুর শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৫ ০২:৩৯
Share: Save:

জমি দখলের উদ্দেশ্যে তছনছ করে দেওয়া হচ্ছে বাগান। প্রতিবাদ করলে পড়তে হচ্ছে হুমকির মুখে। দামোদরের পাড় লাগোয়া এলাকায় এক দল দুষ্কৃতী এ ভাবে খাস জমি জবরদখল করছে বলে অভিযোগ হিরাপুরের শ্যামডিহি এলাকার বাসিন্দারা।
ইতিমধ্যে এই খাস জমি পুনরুদ্ধার করে সবুজ ফেরানোর আর্জি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেছে এলাকার সংগঠন ‘সরকারি খাস জমি এবং সবুজ বাঁচাও কমিটি’। পালা করে জমি পাহারা দেওয়ার ব্যবস্থাও করেছেন বাসিন্দারা। ওই এলাকায় জমি মাফিয়াদের দাপটের কথা তাঁদেরও কানে এসেছে বলে জানান স্থানীয় বিধায়ক তথা আসানসোলের প্রাক্তন মেয়র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত ২৮ জুন এই দৌরাত্ম্য বড় আকার নেয়। খাস জমিতে এলাকাবাসীর চাষ করা বাগ ভেরেন্ডার বাগান সে দিন তছনছ করে গাছ কেটে নিয়ে চলে যায় দুষ্কৃতীরা। যাওয়ার সময়ে সশস্ত্র ওই দুষ্কৃতীরা হুমকি দিয়ে যায়, এই জমি তাদের দখলে থাকবে। কোনও ভাবেই যেন এই সব জমিতে চাষাবাদ না করা হয়। সেই থেকেই আতঙ্কে রয়েছেন গ্রামবাসীরা।
বুধবার এলাকায় গিয়ে দেখা গিয়েছে, তছনছ হয়ে রয়েছে কিছু ভেরেন্ডা গাছ। পাশে আরও খানিকটা এলাকা জুড়ে এই চাষ করেছেন বাসিন্দারা। একজোট হয়ে এখন তা পাহারা দিচ্ছেন তাঁরা। জিতেন বাউড়ি, কান্ত হাঁসদারা বলেন, ‘‘আমরা পালা করে টহল দিচ্ছি, যেন কোনও ভাবে জমি দখল না হয়।’’ বিধায়ক তাপসবাবু বলেন, ‘‘আমিও শুনেছি, ওই এলাকায় এক শ্রেণির জমি মাফিয়া সক্রিয় হয়ে উঠেছে। খাস জমি কব্জা করছে।’’

আসানসোলের বিবি কলেজের গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগ বায়ো ডিজেলের উপকরণ হিসেবে ভেরেন্ডা চাষের প্রকল্প হাতে নেয়। ওই এলাকায় আসানসোল পুরসভা ও জেলা পরিষদের কাছে অনুমতি নিয়ে প্রায় ৪০ একর খাস জমিতে ২০০৪ সালে সেই চাষে উদ্যোগী হন কলেজ কর্তৃপক্ষ। শ্যামডিহির বাসিন্দা সনাতন বাউড়ি বলেন, ‘‘কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আমরা গ্রামের ১৫ জন স্বয়ম্ভর গোষ্ঠী তৈরি করে চাষ শুরু করি।’’ তাঁর দাবি, তা থেকে তাঁদের আয়ের সংস্থানও হত। কিন্তু বিষয়টি এলাকার জমি মাফিয়াদের নজরে আসতেই তারা জমি কব্জা করার চেষ্টা শুরু করে। ওই কলেজের অধ্যক্ষ অমলেশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘২০১৩ সালে ওই এলাকার বাসিন্দা নারায়ণ মুখোপাধ্যায় আমাদের কাছে দাবি করেন, তাঁর জমি দখল করে আমরা ভেরেন্ডা চাষ করছি। জমির কাগজপত্র দেখাতে বলা হলে তিনি কিছুই দেখাতে পারেননি।’’ এ দিন নারায়ণবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘আমার খুব সামান্য জমিতে ভেরেন্ডা চাষ করা হয়েছিল। সে সব এখন মিটে গিয়েছে। দু’বছর আগে ওখানকার জমি বিক্রিও করে দিয়েছি। আর কিছু আমি জানি না।’’

বিবি কলেজের অধ্যক্ষ অমলেশবাবু জানান, ভেরেন্ডা চাষ নিয়ে এখন তাঁদের উৎসাহ নেই। কারণ, গবেষণার কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। গ্রামবাসীরা অবশ্য জানান, ওই জমি দুষ্কৃতীরা কব্জা করুক, তা তাঁরা চান না। ভেরেন্ডা চাষ না করা হলেও যেন সেখানে সরকারের তরফে সেখানে বনসৃজন করা হয়, সেই দাবি তুলেছেন তাঁরা। বিধায়ক তাপসবাবুর আশ্বাস, ‘‘উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE