Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বিজেপির পুরনো তালুকে থাবা বসাবে কে, শুরু জল্পনা

বাম আমল হোক বা তৃণমূল— এই দুই তালুকে বরাবরই ভাল ভোট পেয়ে এসেছে গেরুয়া শিবির। গত লোকসভা নির্বাচনে দেশ জুড়ে মোদী হাওয়ায় ভর করে পূর্বস্থলী উত্তর ও দক্ষিণ কেন্দ্রে নজরকাড়া ভোট পায় বিজেপি। কিন্তু তারপর রাজ্য রাজনীতিতে জল গড়িয়েছে বহু দূর। দুই কেন্দ্রের বহু বিজেপি নেতা-কর্মী দলবদল করেছেন। ভোট ময়দানে জোট বেঁধেছে সিপিএম-কংগ্রেস।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
পূর্বস্থলী শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৬ ০১:১৪
Share: Save:

বাম আমল হোক বা তৃণমূল— এই দুই তালুকে বরাবরই ভাল ভোট পেয়ে এসেছে গেরুয়া শিবির। গত লোকসভা নির্বাচনে দেশ জুড়ে মোদী হাওয়ায় ভর করে পূর্বস্থলী উত্তর ও দক্ষিণ কেন্দ্রে নজরকাড়া ভোট পায় বিজেপি। কিন্তু তারপর রাজ্য রাজনীতিতে জল গড়িয়েছে বহু দূর। দুই কেন্দ্রের বহু বিজেপি নেতা-কর্মী দলবদল করেছেন। ভোট ময়দানে জোট বেঁধেছে সিপিএম-কংগ্রেস। এই পরিস্থিতিতে পুরনো তালুকে বিজেপির ভোট ব্যাঙ্ক অটুট থাকবে কি না। না কি সেই ভোট ব্যাঙ্কে তৃণমূল বা জোট থাবা বসাবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে জোর জল্পনা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরেই পূর্বস্থলী ১ ও ২ ব্লকে বিজেপির ভাল ভোট রয়েছে। যেমন, ১৯৯১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে পূর্বস্থলী উত্তর কেন্দ্রে ২৫ শতাংশেরও বেশি ভোট পায় গেরুয়া শিবির। বারবার এই দু’টি কেন্দ্রে ভোট কাটাকাটির অঙ্কেও বিজেপিকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে দেখা গিয়েছে। যেমন, ২০০১ সালে পূর্বস্থলী দক্ষিণ কেন্দ্রের নাদনঘাট বিধানসভা হিসেবে চিহ্নিত ছিল। সে বার বিধানসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী স্বপন দেবনাথকে ২১০০-রও বেশি ভোটে হারিয়ে দেন সিপিএম প্রার্থী রতন দাস। বিজেপির ঝুলিতে আসে ১৫ হাজারেরও বেশি ভোট। গত বিধানসভা নির্বাচনে পূর্বস্থলী উত্তর কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী তপন চট্টোপাধ্যায় ২১৪০ ভোটে হারান সিপিএম প্রার্থী প্রদীপ সাহাকে। ওই নির্বাচনেও বিজেপি প্রার্থী পান প্রায় ১৭ হাজার ভোট।

কিন্তু রাজ্যে পালাবদলের পর থেকেই এই দুই কেন্দ্রে বিজেপির অন্দরে শুরু হয় ভাঙন। যেমন, পঞ্চায়েত নির্বাচনে পূর্বস্থলী ১ ব্লকের নসরতপুর পঞ্চায়েত দখল করে বিজেপি। কিন্তু পরে পঞ্চায়েতের প্রধান চন্দন বসাক-সহ বেশ কয়েকজন নেতা তৃণমূলে যোগ দেন। বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে গিয়ে জেলা পরিষদের সদস্যও হন এই পঞ্চায়েতের নেতা বিকাশ বসাক। পূর্বস্থলীর এক তৃণমূল নেতা দাবি করেন, ২০১১-র পর থেকেই বিজেপির তালুক ভাঙার কাজে সক্রিয় ভূমিকা নেন স্বপনবাবু। পূর্বস্থলী ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দিলীপ মল্লিকের দাবি, ‘‘বিধানসভা নির্বাচনে এ বার বিজেপি কোনও প্রভাব ফেলতে পারবে না। বহু বিজেপি নেতা-কর্মী আমাদের দলে এসেছেন।’’ পূর্বস্থলী উত্তর কেন্দ্রেও ছবিটা একই রকম। এই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী তপন চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘গত পাঁচ বছর ধরে লাগাতার বিজেপি থেকে নেতা, কর্মীরা আমাদের দলে এসেছেন। একটি পঞ্চায়েত ছাড়া বিজেপির অস্তিত্বই নেই।’’ ২০১২ সালে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া নেতা তাপস দে’র দাবি, ‘‘দল ছাড়ার হিড়িক চলছে বিজেপি। ওদের ভোট ব্যাঙ্ক এখন আমাদের ঝুলিতে।’’ যদিও বাম-কংগ্রেস নেতৃত্বের দাবি, বিজেপির ভোট এ বার তাঁদের ঘরেই আসবে। সিপিমের পূর্বস্থলী জোনাল কমিটির সম্পাদক সুব্রত ভাওয়ালের দাবি, ‘‘নেতাদের কাজকর্মে বিরক্ত বিজেপির কর্মী সমর্থকেরা। তাঁরা অনেকেই আমাদের জানিয়েছেন এ বার ভোট পড়বে জোটের পক্ষে।’’

যদিও লাগাতার দলবদলের জেরে ভোট ব্যাঙ্কে কোনও প্রভাব পড়বে না বলেই দাবি করেন পূর্বস্থলী উত্তর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী স্বপন ভট্টাচার্য। তাঁর দাবি, ‘‘গত বিধানসভার তুলনায় লোকসভাতে আমাদের ভোট বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। দু-চার জন দলবদল করলেও ফলে কোনও প্রভাব পড়বে না।’’ গত লোকসভা নির্বাচনেও পূর্বস্থলী উত্তর ও দক্ষিণ কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী পান যথাক্রমে ১৯.৪৬ ও ১৩.২২ শতাংশ ভোট।

দাবি, পাল্টা দাবির মধ্যে গেরুয়া শিবিরের ভোট ব্যাঙ্ক কার দিকে ঢলে পড়ে, তা জানতে অবশ্য অপেক্ষা করতে হবে ১৯ মে, ভোটের ফল বেরনো পর্যন্ত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Purbasthali bjp assembly election win
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE