উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের রামনবমীর দিন গোষ্ঠী সংঘর্ষ শুরু হয় আসানসোলের রানীগঞ্জে। রেললাইনের পাশে খুন হন বেশ কয়েক জন। মামলা করে আসানসোল উত্তর থানার পুলিশ। দুই গোষ্ঠীরই বেশ কয়েক জন গ্রেফতার হন। বহুদিন সেই মামলা চলার পর শর্তসাপেক্ষে জামিন হয় অভিযুক্তদের। ১০ জন সাক্ষীর মধ্যে কেউই বলেননি যে তাঁরা নিজের চোখে দেখেছেন কে বা কারা খুন করেছে।
বীরভূমের বগটুইয়ে যখন উত্তপ্ত, তখন আসানসোলের একইমাম ও তাঁর আত্মীয়স্বজন নিজের ছেলের খুন হওয়ার পরেও আদালতে জানালেন, তাঁরা সত্যিই দেখেননি তাঁদের ছেলেকে কে বা কারা খুন করেছে। এর পর অভিযুক্তদের বেকসুর খালাস দেন অতিরিক্ত জেলা বিচারক শরণ্যা সেন প্রসাদ।
অভিযুক্তদের আইনজীবী শেখর কুণ্ডুর কথায়, ‘‘মামলায় অন্যতম সাক্ষী নিহতের বাবা ইমদাদউল্লা রশিদি আদালতে জানান, তিনি যেহেতু নিজের চোখে কাউকে খুন করতে দেখেননি তাই তিনি সাক্ষ্য কী করে দেবেন। তিনি ছাড়া যাঁরা সাক্ষী হিসেবে ছিলেন, তাঁরাও জানিয়ে দেন এঁদের কাউকে খুন করতে দেখেননি।’’
মামলার সহকারী প্রধান আইনজীবী স্বরাজ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমার ৭১ বছর বয়স হল। আমি ৪৮ বছর ধরে এই পেশায় রয়েছি। একজন খুন হওয়া পুত্রের পিতা সাক্ষী দিলেন না, কারণ তিনি নিজের চোখে কিছু দেখেননি। এটা আমার কাছে নজিরবিহীন ঘটনা।’’
শুক্রবার রায়ের পর পুত্রহারা সেই ইমামের কথায়, ‘‘আমি সেদিনও যে কথা বলেছি আজও সেটাই বলছি। উপরওয়ালা প্রকৃত বিচার করবেন। পুলিশ মামলা সাজিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই পুলিশের দায়িত্ব তারা প্রকৃত খুনি ধরবে। আমি যে হেতু নিজের চোখে কাউকে আমার ছেলেকে অপহরণ করতে বা খুন করতে দেখেনি, স্বাভাবিক ভাবেই আদালতে গিয়ে মিথ্যা সাক্ষী দিতে পারব না বলেই সাক্ষী দিইনি। চিরকাল আমি সত্যের জন্য লড়াই করে এসেছি। একজন ইমাম হিসেবে সত্যকে নিয়েই বাঁচতে চাই। আমি নিজে কারও নাম দিইনি। যারা গ্রেফতার হয়েছিল, এক সময় তাদের পরিবারের কেউ কেউ আমার কাছে আসার পর আমি বলেছিলাম আমি যা চোখে দেখিনি, তা বলব না। আর ওরা যদি পাপ না করে থাকে, তা হলে ওরা মুক্তি পাবে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘অভিযুক্তরা সবাই বেকসুর খালাস হল। সামনে আবার একটা রামনবমী। দু’বছর পর রামনবমীর মিছিল হবে বলে শুনছি। আমার একটাই অনুরোধ, আসানসোল যেন শান্তিতে থাকে।’’