Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ বার কমিশনের মহিলা কর্মীরা আক্রান্ত বর্ধমানে

উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া, পশ্চিম মেদিনীপুরের পর এ বার বর্ধমান। ফের শাসক দলের হাতে আক্রান্ত হলেন নির্বাচন কমিশনের কর্মীরা। এবং এ বারে যাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁরা দু’জনেই মহিলা। এ রাজ্যে এই প্রথম কোনও মহিলা কর্মী নির্বাচনের কাজ করতে গিয়ে আক্রান্ত হলেন। ওই ঘটনায় পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। নির্বাচন কমিশনের রাজ্য দফতরের ওএসডি অমিত রায়চৌধুরী রবিবার বলেন, “শনিবার সন্ধ্যায় বর্ধমানের হাটগোবিন্দপুরে বাড়ি বাড়ি বুথ স্লিপ বিলি করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন নির্বাচন কমিশনের দু’জন মহিলা কর্মী।” কমিশন সূত্রে এই ঘটনায় রাজ্যের শাসক দলের দিকেই আঙুল তোলা হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৪ ০২:২৫
Share: Save:

উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া, পশ্চিম মেদিনীপুরের পর এ বার বর্ধমান। ফের শাসক দলের হাতে আক্রান্ত হলেন নির্বাচন কমিশনের কর্মীরা। এবং এ বারে যাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁরা দু’জনেই মহিলা। এ রাজ্যে এই প্রথম কোনও মহিলা কর্মী নির্বাচনের কাজ করতে গিয়ে আক্রান্ত হলেন। ওই ঘটনায় পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।

নির্বাচন কমিশনের রাজ্য দফতরের ওএসডি অমিত রায়চৌধুরী রবিবার বলেন, “শনিবার সন্ধ্যায় বর্ধমানের হাটগোবিন্দপুরে বাড়ি বাড়ি বুথ স্লিপ বিলি করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন নির্বাচন কমিশনের দু’জন মহিলা কর্মী।” কমিশন সূত্রে এই ঘটনায় রাজ্যের শাসক দলের দিকেই আঙুল তোলা হয়েছে। শনিবারই পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনি এবং জামবনিতেও ‘মডেল কোড অব কন্ডাক্ট’ (এমসিসি)-এর কর্মীরা নিগৃহীত হয়েছিলেন। সেই দু’টি ঘটনাতেও অভিযোগের ছিল তির শাসক দলের দিকেই। শালবনি ও জামবনির ঘটনায় মোট ছ’জন গ্রেফতার হলেও বর্ধমানের ঘটনায় এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি। জামবনিতে এফআইআরে নাম থাকা দু’জন এখনও অধরা। তিনটি ক্ষেত্রেই নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট জেলাশাসকদের কাছ থেকে রিপোর্ট তলব করেছে। এ দিন সেই রিপোর্ট রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের দফতরে জমা পড়েছে।

ঠিক কী ঘটেছিল বর্ধমানের হাটগোবিন্দপুরে?

নির্বাচন কমিশন সূত্রে অভিযোগ করা হয়, শনিবার সন্ধ্যায় বুথ লেভেল অফিসার (বিএলও) হেনা প্রামাণিক রেজ এবং আইসিডিএস কর্মী শোভা ঘোষ কমিশনের তরফে বাড়ি বাড়ি বুথ স্লিপ বিলির কাজ করছিলেন। হঠাৎই এক দল যুবক ওই দুই মহিলার উপর আক্রমণ চালায়। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে। আহত ওই দুই মহিলাকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আক্রান্তদের বাড়িও ভাঙচুর করা হয়েছে। অভিযোগ, তৃণমূলের কর্মীরাই এই হামলা পিছনে রয়েছে।

বর্ধমান (উত্তর)-এর মহকুমাশাসক স্বপন কুণ্ডুু বলেন, “আক্রান্ত দুই কর্মী থানায় রবিবার দু’টি পৃথক এফআইআর দায়ের করেছেন।” বর্ধমানের এসডিপিও অম্লানকুসুম ঘোষ বলেন, “ওই অভিযোগের ভিত্তিতে দু’টি মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। তবে এখনও কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।”

শালবনিতে কমিশনের কর্মীদের উপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় আগেই এক তৃণমূল সমর্থককে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরে আরও দু’জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। রবিবার ধৃতদের আগামী ৮ মে পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবী তথা তৃণমূল আইনি সেলের নেতা গৌতম মল্লিক জামিনের আবেদন করে বলেন, “আগামী ৭ মে মেদিনীপুর লোকসভায় ভোট। এবং শালবনি ওই কেন্দ্রের মধ্যেই পড়ে।”

শনিবার শালবনির কলসিভাঙায় সিপিআই প্রাথর্ীর্ প্রবোধ পণ্ডার মিছিলের ভিডিও ছবি তুলতে যাওয়া এমসিসি কর্মীদের ঘিরে ফেলে তৃণমূলের লোকজন মারধর করে বলে অভিযোগ। তাঁদের গাড়ি ভাঙচুরও করা হয়। প্রশাসন সূত্রের খবর, এমসিসি-র ওই দলে চালক প্রসেনজিৎ দুলে ছাড়াও ছিলেন দীপক বিশুই এবং জিতেন মাহাতো নামে দুই সরকারি কর্মী। ‘টিম লিডার’ দীপকবাবুই শালবনির বিডিও-র কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। পরে ওই অভিযোগের প্রতিলিপি-সহ শালবনি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ওই বিডিও।

এই অভিযোগের তদন্তে নেমে প্রথমে অনিল মাহাতো নামে এক তৃণমূল কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে কাঞ্চন মাহাতো এবং প্রণবেশ মাহাতো নামে আরও দুই তৃণমূল কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। সরকারি সম্পত্তি নষ্ট, সরকারি কাজে বাধাদান-সহ মোট ৮টি ধারায় ধৃতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। শালবনিতে গিয়ে আতঙ্কিত এমসিসি সদস্যদের সঙ্গে এ দিন কথা বলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক গুলাম আলি আনসারি।

শনিবার বেলা বারোটা নাগাদ জামবনির কাপগাড়িতে সরকারি দেওয়ালে তৃণমূলের প্রচার লিখন মুছতে গিয়ে যুব তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের হাতে প্রহৃত হন পাঁচ এমসিসি সদস্য। গুরুতর আহত স্বপন ধাউড়িয়া নামে চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মীকে চিল্কিগড় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। ঘটনার পর পুলিশে লিখিত অভিযোগ জানান এমসিসি দলের নেতৃত্বে থাকা ফ্লাইং স্কোয়াডের ম্যাজিস্ট্রেট গণপতি হাঁসদা।

জামবনিতে সরকারি দেওয়ালে প্রচার লিখন মুছতে যাওয়া এমসিসি কর্মীদের মারধরের ঘটনায় ধৃত যুব তৃণমূল নেতা কানু চট্টোপাধ্যায়-সহ তিন জনকে এ দিন ঝাড়গ্রাম আদালতে হাজির করা হয়। তাঁদের বিচারক ৮ মে পর্যন্ত জেল হেফাজতে পাঠিয়েছেন।

অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবী দেবনাথ চৌধুরী এ দিন আদালতে বলেন, “এমসিসি কর্মীরা গুরুতর জখম হয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। অথচ আহতদের মেডিক্যাল রিপোর্ট আদালতে জমা দেয়নি পুলিশ।” আগামী ২ মে আহতদের মেডিক্যাল রিপোর্ট ও মামলার কেস ডায়েরি তলব করেছে আদালত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

attack on poll workers burdwan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE