এই নির্মাণ নিয়েই অভিযোগ এলাকাবাসীর। —নিজস্ব চিত্র।
অনুমতি ছাড়া খাস জমিতে আবাসন গড়ে বিক্রির অভিযোগ উঠল এক বেসরকারি সংস্থার বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা রানিগঞ্জ পুরসভা এবং ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার অধিকারিকের (বিএলএলআরও) কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন। তাতে তাঁদের অভিযোগ, শাসকদলের স্থানীয় কিছু কর্মীর মদতেই এই ঘটনা ঘটেছে। বিএলএলআরও দফতরের তরফে জানানো হয়, ওই নির্মাণ বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত চলছে।
রানিগঞ্জের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের হুসেননগর অঞ্চলে ১.২৭ একর খাস জমি দখল করে এই নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। এলাকাবাসীর দাবি, ওই জমির বড় অংশ জুড়ে রয়েছে খেলার মাঠ। রানিগঞ্জ পুরসভা এক দশক আগে ওই জমি ও লাগোয়া এলাকায় বিএসইউপি প্রকল্পে আবাসন তৈরির পরিকল্পনা নেয়। কিন্তু সেই সময়ে বাসিন্দাদের আপত্তিতে পুরসভা ওই ১.২৭ একর জমি ছেড়ে কাজ করে। কিছু দিন আগে ওই জমিতে সর্বসাধারণের জন্য একটি কমিউনিটি হল নির্মাণের কথা ঘোষণা করে ওই বেসরকারি সংস্থাটি। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তারা ৫০টি বাড়ি গড়ে দুঃস্থ পরিবারকে ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রির পরিকল্পনা নেয় বলে অভিযোগ। এ জন্য সংশ্লিষ্ট দফতর বা পুরসভারও কোনও অনুমতিও নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ।
স্থানীয় বাসিন্দা মহম্মদ সোয়েল আখতার, মহম্মদ গোলাম মোস্তফা, মহম্মদ সাদ্দামেরা অভিযোগ করেন, শুধু অবৈধ নির্মাণ নয়, বাড়ি বিক্রির ক্ষেত্রেও ওই সংস্থা ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। ৪৫৫ নম্বর দাগে বাড়িগুলি গড়া হলেও ক্রেতাদের যে কাগজ দেওয়া হচ্ছে, সেখানে দাগ নম্বর রয়েছে ৯৪১। ইতিমধ্যে চারটি বাড়ির অর্ধেক তৈরি হয়ে গিয়েছে। আরও অভিযোগ, দালাল চক্র সক্রিয় হয়ে ৩৫ হাজার টাকার বদলে এক লক্ষ ৬০ হাজার টাকায় এই বাড়ি বিক্রির চেষ্টা করছে। এর সঙ্গে শাসকদলের কিছু কর্মী যুক্ত রয়েছেন বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। নির্মাণকারী সংস্থার মালিক দেবকুমার সরাফের দাবি, “রানিগঞ্জের বিধায়কের অনুমতিতেই এই নির্মাণ চলছে।” যদিও বিধায়ক সোহরাব আলি তা অস্বীকার করে বলেন, “এরকম কোনও অনুমতি আমি দিইনি।”
রানিগঞ্জের পুরপ্রধান অনুপ মিত্র জানান, স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ পাওয়ার পরে পুরসভা তদন্ত শুরু করেছে। প্রাথমিক ভাবে দেখা যাচ্ছে, ওই নির্মাণের জন্য ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর বা পুরসভাকারও কাছে অনুমতি নেওয়া হয়নি। সিপিএম পরিচালিত পুরসভার পক্ষ থেকে রানিগঞ্জ থানা, বিএলএলআরও এবং জেলাশাসকের কাছে নির্মাণ বন্ধ করে সংস্থা এবং অভিযুক্ত শাসকদলের কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। বিএলএলআরও দিব্যেন্দু ঘোষ বলেন, “আমাদের দফতর থেকে বৃহস্পতিবার ওই জমি পরিদর্শন করা হয়েছে। থানা এবং বিডিও-কে ওই নির্মাণ বন্ধের জন্য লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে।” যদিও সংস্থার তরফে দাবি করা হয়, ইতিমধ্যে নির্মাণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর ওই সংস্থাকে চিঠি দিয়ে দু’দিনের মধ্যে দফতরে হাজির হওয়ার নির্দেশ জারি করেছে।
জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, “ওই সংস্থার বিরুদ্ধে দোষ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, প্রয়োজনে এফআইআর করা হবে।” তৃণমূলের বর্ধমান জেলা (শিল্পাঞ্চল) কার্যকরী সভাপতি ভি শিবদাসনের বক্তব্য, “দলের কেউ এই ধরনের অনৈতিক কাজে যুক্ত থাকলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy