বাঁ দিকে, কাঁকসার সিলামপুরে ঘটনাস্থলে জটলা। ডান দিকে, শোকার্ত পরিজনেরা। ছবি: বিকাশ মশান।
মহালয়ার দিন বন্ধুদের সঙ্গে দামোদরে স্নান করতে নেমে তলিয়ে গেলেন তিন যুবক। এক জনের দেহ উদ্ধার হলেও মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত খোঁজ নেই বাকিদের। ঘটনাটি ঘটেছে কাঁকসার সিলামপুরে।
পুলিশ জানায়, মৃত যুবকের নাম যাদব ঘোষ (২৫)। তাঁরা যেখানে স্নানে নেমেছিলেন সেখান থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে তাঁর দেহ মেলে। তাঁর দুই বন্ধু জয়দীপ ঘোষ ও সমরেশ রায়ের খোঁজে স্থানীয় বাসিন্দারা ও পুলিশ সন্ধ্যা পর্যন্ত দামোদরে তল্লাশি চালান। কিন্তু হদিস মেলেনি। পুলিশ জানায়, কলকাতা থেকে ডুবুরি আনার ব্যবস্থা হচ্ছে। তিন যুবকেরই বাড়ি বুদবুদের নস্করবাঁধে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন দুপুর ১২টা নাগাদ নস্করবাঁধ গ্রামের ১০-১২ জন বন্ধু এক সঙ্গে সিলামপুরে দামোদরে স্নান করতে যান। স্নান সেরে কয়েক জন পাড়ে উঠেও পড়েন। কিন্তু যাদব, জয়দীপ ও সমরেশ তখনও স্নান করে যাচ্ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হঠাৎই ওই তিন যুবক তলিয়ে যেতে শুরু করেন। অন্য বন্ধুরা ছুটে গিয়ে তাঁদের বাঁচানোর চেষ্টা করলেও সফল হননি। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই তলিয়ে যান ওই তিন জন। আশপাশের বাসিন্দারাও ছুটে আসেন। তিন জনকে উদ্ধারের জন্য দামোদরে নেমে পড়েন তাঁরা। জাল ফেলা হয়। খবর পেয়ে কাঁকসা থানার পুলিশ পৌঁছয়। পরে ঘটনাস্থলে যায় বুদবুদ থানার পুলিশও।
উদ্ধারকারীরা জাল নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন। প্রায় দু’ঘণ্টা পরে বুদবুদের ভরতপুরের কাছে, ঘটনাস্থল থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে যাদবের দেহ মেলে। দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে জানান। অন্ধকার নেমে আসায় উদ্ধারকাজ বন্ধ করতে হয়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আজ, বুধবার কলকাতা থেকে ডুবুরি আনার চেষ্টা হচ্ছে। এখন দামোদরে জল বেশি থাকায় উদ্ধারকাজে অসুবিধা হচ্ছে বলে জানান উদ্ধারকারীরা।
দুর্ঘটনার খবর আসার পর থেকে শোকের ছায়া ওই যুবকদের গ্রাম নস্করবাঁধে। বিকেলে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, পাড়ার মোড়ে-মোড়ে জটলা। প্রতিবেশীরা জানান, যাদব কলকাতার একটি বেসরকারি কলেজ থেকে এ বছরই আইটি-তে বিটেক পাশ করেন। তার পরে ওই কলেজেই এমটেক-এ ভর্তি হয়েছিলেন। পুজোর ছুটিতে বাড়ি এসেছিলেন তিনি। বরাবরই পড়াশুনোয় ভাল যাদবকে এলাকার সকলেই স্নেহ করতেন। তাঁর দেহ উদ্ধারের পরে তাই কান্নায় ভেঙে পড়েন পড়শিরা।
যাদবের সমবয়সী জয়দীপ বাঁশকোপার একটি বেসরকারি কারখানার কর্মী ছিলেন। তাঁর বাবা মারা গিয়েছেন। বাড়িতে শুধু মা আলোদেবী। এ দিন তিনি কোনও কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলেন না। প্রতিবেশীরা তাঁকে সামলে রেখেছেন। খবর পেয়েই সমরেশের বাড়ি এসেছিলেন তাঁদের আত্মীয়, পানাগড়ের বাসিন্দা বিকাশ লায়েক। তিনি জানান, সমরেশ পানাগড়ের একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের মেকানিক্যাল বিভাগের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। বিকাশবাবু জানান, সমরেশ বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। বাবা সুবোধবাবু ও মা বন্দনাদেবী বাক্রুদ্ধ। বিকাশবাবু বলেন, “ওঁদের সান্ত্বনা দেওয়ার কোনও ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। এখনও আমরা আশায় রয়েছি, যদি জীবিত উদ্ধার করা যায় সমরেশকে।” স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, এ দিন যে যুবকেরা স্নান করতে গিয়েছিলেন, তাঁদের অধিকাংশই সাঁতার জানতেন না। তা সত্ত্বেও কেন ভরা দামোদরে তাঁরা স্নানে নামলেন, তা নিয়েই এখন আক্ষেপ করছেন গ্রামবাসীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy