তুষারকান্তি সর্দার। ফাইল চিত্র।
বারবার আদালতে সাক্ষ্য দিতে গরহাজির থাকায় কেতুগ্রামের ছোটলাইনে ডাকাতি ও ধর্ষণের মামলার অন্যতম তদন্তকারী অফিসার তুষারকান্তি সর্দারের বিরুদ্ধে জামিনযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করল আদালত। শুক্রবার কাটোয়া ফাস্ট ট্র্যাক আদালতের বিচারক পরেশনাথ কর্মকার সিআইডি-র ডিআইজি-কে নিদের্শ দিয়ে জানান, আগামী ২ মার্চ ওই তদন্তকারী অফিসারকে আদালতে হাজির করতে হবে।
আইনজীবীরা জানিয়েছেন, ১৮ ফেব্রুয়ারি ওই গুরুত্বপূর্ণ মামলায় সাক্ষী দেওয়ার জন্য তৎকালীন কাটোয়ার জিআরপি ওসি, বর্তমানে সিআইডি অফিসার তুষারকান্তি সর্দারকে সমন দিয়েছিল আদালত। কিন্তু তুষারবাবু আদালতকে জানিয়েছিলেন, প্রশিক্ষণ শিবিরে থাকায় তিনি সাক্ষ্য দিতে পারবেন না। ওই দিনই সরকার পক্ষের আইনজীবী কাঞ্চন মুখোপাধ্যায় এবং অভিযুক্তদের আইনজীবী ধীরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় আদালতকে জানান, তুষারবাবু এই নিয়ে বেশ কয়েকবার নানা অজুহাতে সাক্ষ্য দিতে গরহাজির হয়েছেন। এর জেরে গুরুত্বপূর্ণ মামলাটি দিনের পর দিন পিছিয়ে যাচ্ছে। শুক্রবার ওই মামলাতেই আরও এক তদন্তকারী অফিসার জয়জিৎ লোধের সাক্ষ্য দেওয়ার কথা ছিল। তিনিও আদালতে উপস্থিত হননি। সেই সময় ফের তুষারবাবুর গরহাজির হওয়ার প্রসঙ্গটি ওঠে। সরকারি আইনজীবী কাঞ্চনবাবু বলেন, “দিনের পর দিন সাক্ষ্য দিতে না আসায় এক জন পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে।” জানা গিয়েছে, দু’শো টাকার ব্যক্তিগত জামিনে ওই পরোয়ানা জারি করে সিআইডি-এর ডিআইজি-কে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। অভিযুক্তদের অন্যতম আইনজীবী ধীরেন্দ্রনাথবাবু বলেন, “বারবার আদালতে না আসায় ওই অফিসারের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছে আদালত। আরও একজন তদন্তকারী অফিসার আদালতে সাক্ষী দেওয়ার সমন পেয়েছেন কি না তা বোঝা যায়নি বলে সম্ভবত তার বিরুদ্ধে আদালতে কোনও পদক্ষেপ নেয়নি।” প্রসঙ্গত, তুষারবাবুর মতো জয়জিৎবাবুও বেশ কয়েকবার এই মামলার সাক্ষী দিতে গরহাজির থেকেছেন।
২০১২ সালে ২৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্য্যয় আমোদপুর-কাটোয়া ছোট লাইনের ট্রেনে (বর্তমানে ওই লাইনটিতে ব্রড গেজের কাজ চলছে) পাঁচুন্দি ও অম্বলগ্রাম স্টেশনের মাঝে ডাকাতির উদ্দেশ্যে এক দল দুষ্কৃতী গাড়ি আটকায়। ডাকাতি করার সময় কানের দুল দিতে অস্বীকার করায় মেয়ের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে এক বিধবা মহিলাকে ট্রেন থেকে নামিয়ে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। ওই রাতেই মহিলা কাটোয়া রেল পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। রেল পুলিশ মামলা শুরু করার দু’দিন পর রাজ্যের পুলিশ কর্তারা ঠিক করেন, ডাকাতির ঘটনা তদন্ত করবে রেল পুলিশ ও ধর্ষণের ঘটনার তদন্ত করবে জেলা পুলিশ। ওই ঘটনায় পুলিশ ৮ জনকে অভিযুক্ত করে। তার মধ্যে ৭ জনকে গ্রেফতারও করা হয়। এদের মধ্যে আবার দু’জন পথ দুর্ঘটনায় মারা যায়। বাকি ৫ জন জেল হেফাজতে। আরও একজন এখনও অধরা। পুলিশ দু’টি ঘটনার আলাদা আলাদা করে চার্জশিট পেশ করে। এই ঘটনায় কলকাতা হাইকোর্টের নজরে এলে তারা নির্দেশ দেয় মামলা দু’টিকে ‘একত্র’ করে বিচার শুরু করার। এর মধ্যে অভিযোগকারিণী ও তাঁর মেয়ে কাটোয়া জেলে এবং আদালত কক্ষে অভিযুক্তদের সনাক্ত করেন। বেশ কয়েকজন সাক্ষী আদালতে জানিয়েছেন, দুষ্কৃতীরা এক বিধবা মহিলাকে ট্রেন থেকে নামানোর ঘটনা শুনেছিলেন। তদন্তকারী দুই অফিসার ছাড়া বাকিদের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়ে গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy