Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ভাঙা পথের যন্ত্রণাই সঙ্গী শহরের

সেচখালের বাঁধ বরাবর চলে গিয়েছে কাঁচা রাস্তা, তাও আবার কোথাও গর্ত, কোথাও জলে ডুবে বেহাল। কিন্তু উপায় নেই, মেমারি পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের তালপাতা এলাকায় হাঁটাচলা করতে গেলে ভরসা এ পথই। ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সুলতানপুর মুসলিমপাড়ার রাস্তাঘাটে কবে কোন মান্ধাতার আমলে পিচ পড়েছিল তা প্রায় ভুলেই গিয়েছেন এলাকার মানুষ। সে রাস্তা এখন ফুটিফাটা। ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সুলতানপুর মুসলিমপাড়ার রাস্তাঘাটে কবে কোন মান্ধাতার আমলে পিচ পড়েছিল তা প্রায় ভুলেই গিয়েছেন এলাকার মানুষ। সে রাস্তা এখন ফুটিফাটা।

কোথাও ভাঙা পড়ে পিচ রাস্তা, কোথাও পাকাই হয়নি রাস্তা। মেমারির ৩ ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডে উদিত সিংহের তোলা ছবি।

কোথাও ভাঙা পড়ে পিচ রাস্তা, কোথাও পাকাই হয়নি রাস্তা। মেমারির ৩ ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডে উদিত সিংহের তোলা ছবি।

রানা সেনগুপ্ত
মেমারি শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৩৭
Share: Save:

সেচখালের বাঁধ বরাবর চলে গিয়েছে কাঁচা রাস্তা, তাও আবার কোথাও গর্ত, কোথাও জলে ডুবে বেহাল। কিন্তু উপায় নেই, মেমারি পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের তালপাতা এলাকায় হাঁটাচলা করতে গেলে ভরসা এ পথই।

৩ নম্বর ওয়ার্ডের সুলতানপুর মুসলিমপাড়ার রাস্তাঘাটে কবে কোন মান্ধাতার আমলে পিচ পড়েছিল তা প্রায় ভুলেই গিয়েছেন এলাকার মানুষ। সে রাস্তা এখন ফুটিফাটা।

আবার স্বাধীনতার পর থেকে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কালীতলা এলাকায় কখনও রাস্তা তৈরিই হয়নি। পুরসভার তরফে সিমেন্টের ঢালাই রাস্তা তৈরির জন্য একবার গর্ত খোঁড়া হয়েছিল। কিন্তু ওই পর্যন্তই।

এই খণ্ডচিত্রেই বোঝা যায় মেমারিতে ‘পথের যন্ত্রণা’ কতখানি। পুরো শহর জুড়েই রাস্তা নিয়ে অভাব-অভিযোগ-হতাশা-ক্ষোভ দীর্ঘদিনের। কোনও কোনও এলাকার বাসিন্দারা তো আবার রাস্তা সারানোর আবেদন জানাতে জানাতে বিরক্ত। ভাঙা রাস্তাকেই ভবিতব্য ধরে নিয়েছেন তাঁরা। অথচ পুরপ্রধানের দাবি, “এলাকার ৯০ ভাগ উন্নয়ন করে ফেলেছি।”

মেমারি শহরে ঢোকার মুখে জিটি রোড থেকে বামুনপাড়া বা হাসপাতাল মোড়ের রাস্তার অবস্থায় তথৈবচ। ভেঙেচুরে গিয়েছে সাতগাছিয়া রোডের একটা বড় অংশও। ৪ নম্বর ওয়ার্ডের রায়পাড়া থেকে চকদিঘি রোড পর্যন্ত আধ কিলেমিটার রাস্তার ঢালাই উঠে ইট বের হয়ে রয়েছে কয়েক বছর ধরে। তালপাতা এলাকায় রাস্তাঘাট নিয়ে তো মুখই খুলতে চাননা স্থানীয় বাসিন্দারা। এলাকার শেখ বাবর আলির কথায়, “আমাদের রাস্তার উন্নয়ন কোনও দিনই হয়নি। পরিবর্তনের পরে রাস্তাও বদলাবে ভেবেছিলাম। কিন্তু তাও হল না।” কালীতলা এলাকার বাসিন্দারাও জানান, আমাদের চূড়ান্ত হেনস্থা হতে হয়েছে রাস্তা নিয়ে। কালীতলা থেকে মাত্র ১০০ ফুট দূরে বাড়ি ভগবতী মণ্ডলের। নতুন রাস্তা তৈরি হবে বলে তাঁর বাড়ি পর্যন্ত মাটি খোঁড়া ও বালি ফেলার কাজ হয়েছিল। পড়েছিল পাথরও। কিন্তু তার পরে মাসের পর মাস কেটে গেলেও ওই জায়গায় রাস্তা তৈরি হয়নি। এলাকার এক বাসিন্দা পারুল মণ্ডলের আবার দাবি, “এক প্রভাবশালী ব্যক্তি ওই রাস্তার পাশে অন্যায়ভাবে ড্রেন তৈরি করতে চান। কিন্তু মানুষ রাজি না হওয়ায় আজও রাস্তা তৈরি হয়নি।”

বাসিন্দাদের অভিযোগের কথা মেনে নিয়েছেন কয়েকজন কাউন্সিলরও। যেমন, ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুপ্রিয় সামন্ত, আট নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর স্বপন ঘোষাল। ১৫ নম্বরের কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে যাওয়া কাউন্সিলর সামসুল হক মির্জার দাবি, “ইছাপুরের ব্রিজ থেকে কচির চায়ের দোকান পর্যন্ত রাস্তাটি ভাঙাচোরা। ওই হাজার ফুটের রাস্তা সারাইয়ের জন্য বারবার বোর্ড মিটিংয়ে দাবি তুলেছি। তবে এখনও কাজ করে উঠতে পারিনি।” ৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রায় ১১০০ ফুট মাটির রাস্তাও দু’বছর ধরে বোর্ড মিটিংয়ে আবেদন নিবেদন করেও করানো যায়নি বলে মেনে নিয়েছেন কাউন্সিলর সন্তোষ বোয়াল। তাঁর দাবি, উন্নয় বাবদ টাকা পড়ে রয়েছে। অথচ নানা জটিলতায় কাজ করা যাচ্ছে না। এলাকার সিপিএম নেতা সনৎ বন্দ্যোপাধ্যায়েরও দাবি, “মেমারি শহরে প্রায় চার বছর ধরে রাস্তাঘাটের কোনও বড় কাজ আমাদের চোখে পড়েনি। যা হয়েছে তা বাম আমলে তৈরি কিছু রাস্তার সংস্কার।” বস্তি এলাকাগুলিতে এক টুকরো পাথরও ফেলা হয়নি বলে তাঁর দাবি।

তবে এত অভাবের মধ্যে অন্যরকম কথা বলছেন ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাতগলি এলাকার বাসিন্দারা। স্থানীয় বাসিন্দা সুদীপ্ত ঘোষ, কৌশিক ঘোষদের দাবি, “এই প্রথম আট নম্বরে প্রায় ২০০ ফুট নতুন রাস্তা হয়েছে। অন্ধকার রাস্তায় আলো দেওয়া হয়েছে। আমাদের হাঁটাচলার গতিই পাল্টে গিয়েছে।”

মেমারির পুরপ্রধান স্বপন বিষয়ীর দাবি, “আমি কাজ করে চলেছি। কি করেছি, তা মানুষ জানেন। তাই কোনও সমালোচনায় ভয় পাইনা।”

শহরবাসীরও দিন কাটছে সেই আশ্বাসে ভরসা করে উন্নয়নের অপেক্ষায়।

(চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

amar shahor amar sohor rana sengupta
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE