Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
সঙ্কটে একশো দিনের কাজ

মিলছে না বকেয়া, ক্ষোভ জেলা জুড়ে

সম্প্রতি রাজ্য বিধানসভায় পেশ করা তথ্য বলছে, পশ্চিমবঙ্গে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত একশো দিনের কাজে প্রায় ৭৩৪ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। বর্ধমান জেলা প্রশাসনের হিসেব অনুযায়ী, তার মধ্যে এই জেলাতেই বকেয়া প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। ফলে একশো দিনের কাজ কার্যত বন্ধ হয়ে যেতে বসেছে বর্ধমানে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, বেশ কয়েক মাস ধরেই ওই প্রকল্পে অর্থ মিলছে না। বিষয়টি রাজ্য প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।

রানা সেনগুপ্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৪ ০১:৪৪
Share: Save:

সম্প্রতি রাজ্য বিধানসভায় পেশ করা তথ্য বলছে, পশ্চিমবঙ্গে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত একশো দিনের কাজে প্রায় ৭৩৪ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। বর্ধমান জেলা প্রশাসনের হিসেব অনুযায়ী, তার মধ্যে এই জেলাতেই বকেয়া প্রায় ৩০০ কোটি টাকা।

ফলে একশো দিনের কাজ কার্যত বন্ধ হয়ে যেতে বসেছে বর্ধমানে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, বেশ কয়েক মাস ধরেই ওই প্রকল্পে অর্থ মিলছে না। বিষয়টি রাজ্য প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, একশো দিনের কাজে জেলার ৩১টি ব্লক মিলিয়ে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার মজুরি বকেয়া রয়েছে। পাওনা টাকা না পেয়ে ইতিমধ্যেই জব কার্ড হোল্ডাররা বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন। কিন্তু তহবিল প্রায় ফাঁকা হয়ে যাওয়ায় বকেয়া মেটানো যাচ্ছে না। সম্প্রতি একশো দিনের কাজের বকেয়া মজুরি দাবি করে আউশগ্রাম ১ ব্লকের বিডিও ও বর্ধমান উত্তরের মহকুমাশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেয় মজদুর ক্রান্তি পরিষদ। এই সংগঠনের আউশগ্রাম লোকাল কমিটির সম্পাদক মহেন্দ্র মজুমদারের দাবি, বকেয়া কী ভাবে মিলবে সে বিষয়ে প্রশাসনের কর্তারা কিছু বলতে পারেননি। আউশগ্রাম ১ ব্লকের বিডিও অরুণ পাল বলেন, “গোটা ব্লকের বিভিন্ন গ্রামেই ১০০ দিনের প্রকল্পে প্রায় এক কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। জেলা প্রশাসন থেকে টাকা পেলেই বকেয়া মিটিয়ে দেব।”

তবে সমস্যা অবশ্য শুধু বর্ধমানে নয়। সম্প্রতি বিধানসভার অধিবেশনে কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুইঞার তোলা প্রশ্নের জবাবে রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় স্বীকার করেছেন, বেশ কয়েক মাস যাবদ এই প্রকল্পের জব কার্ডধারীরা কাজের পর মজুরি পাচ্ছেন না। তবে এর দায় কেন্দ্র সরকারের উপরেই চাপিয়েছিলেন সুব্রতবাবু।

সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন বর্ধমানের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন। তিনি বলেন, “জেলার প্রায় সব ব্লকেই টাকা বকেয়া থাকায় একশো দিনের কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে কিংবা বন্ধ হতে বসেছে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পরিস্থিতির কথা জানিয়েছি।” তাঁর আশঙ্কা, বকেয়া টাকা না মিললে এই প্রকল্পের কাজ চালাতে সমস্যা হবে। অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) প্রণব বিশ্বাস জানান, জেলায় একশো দিনের কাজের তহবিলে যে টাকা ছিল তা দিয়ে পুজোর আগে অবধি কিছু মজুরি দেওয়া সম্ভব হয়েছে। কিন্তু অর্থ না থাকায় অক্টোবর থেকে কাউকেই মজুরি দেওয়া যাচ্ছে না। তবে যে পরিমাণ অর্থ বকেয়া থাকার কথা বলা হচ্ছে বাস্তবে তার পরিমাণ কিছুটা কম বলেই দাবি করেছেন বর্ধমানের মহকুমাশাসক উত্তর স্বপনকুমার কুণ্ডু। তিনি বলেন, “কিছু কিছু টাকা দেওয়া হয়েছে। তবে অনেক শ্রমিকের ক্ষেত্রেই যে পরিমাণ বকেয়া দেখানো হচ্ছে, সেই পরিমাণ মজুরি তাঁদের পাওনা নেই। তাই কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছে।”

একশো দিনের কাজ জনপ্রিয় হওয়ার পরে অন্যান্য পেশা থেকে বহু মানুষ এই কাজ করতে শুরু করেছিলেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে তাঁরা খুবই সমস্যায় পড়েছেন। বর্ধমানের দেওয়ানদিঘির বাসিন্দা বাপন দাস আগে রিকশা চালাতেন। পরে একশো দিনের কাজ করতে শুরু করেন। তাঁর খেদ, “আগে ডেকে ডেকে কাজ দেওয়া হয়েছে। এখন মজুরি পাচ্ছি না। অন্য দিকে, রিকশার মালিক অন্য এক জন চালক নিয়োগ করেছেন। এখন কী করব বুঝতে পারছি না।” আউশগ্রাম দিকনগর গ্রামের বাসিন্দা দেবু হাঁসদার ক্ষোভ, “একশো দিনের কাজের টাকাতেই সংসার চলত। কিন্তু এখন টাকা না মেলায় বাড়িতে হাড়ি চড়ছে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

100 days work mnrega rana sengupta
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE