Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
শাঁখারিপুকুর

সরকারি আবাসনের বহু ফ্ল্যাট জবরদখল, তদন্ত

সরকারি আবাসনের একের পর ফ্ল্যাট জবরদখল হয়ে যাচ্ছে বলে মাস দেড়েক আগে অভিযোগ করেছিলেন শহরের বাসিন্দারা। জেলাশাসক আবাসন দফতরকে বিষয়টির তদন্ত করে রিপোর্টও দিতে বলেছিলেন। শেষে বুধবার কলকাতার আবাসন বিভাগের এস্টেট ম্যানেজারের কার্যালয় থেকে দুই আধিকারিক শাঁখারিপুকুরের ওই আবাসনে তদন্তে আসেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:৪২
Share: Save:

সরকারি আবাসনের একের পর ফ্ল্যাট জবরদখল হয়ে যাচ্ছে বলে মাস দেড়েক আগে অভিযোগ করেছিলেন শহরের বাসিন্দারা। জেলাশাসক আবাসন দফতরকে বিষয়টির তদন্ত করে রিপোর্টও দিতে বলেছিলেন। শেষে বুধবার কলকাতার আবাসন বিভাগের এস্টেট ম্যানেজারের কার্যালয় থেকে দুই আধিকারিক শাঁখারিপুকুরের ওই আবাসনে তদন্তে আসেন। তবে তারপরেও এতদিন আগে অভিযোগ পেয়েও পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি কেন, অভিযুক্ত নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেন, জেলার আবাসন দফতর কোনও পদক্ষেপ করেনি কেন, সে প্রশ্নগুলি রয়েই গিয়েছে।

ওই আবাসনে ফ্ল্যাট পাওয়ার জন্য অন্তত ৫০০ আবেদন জমা রয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। এমনই তিনজন জেলাশাসকের কাছে সম্প্রতি লিখিত অভিযোগ করেন যে, ওই সরকারি আবাসনের অন্তত ১৫টি ফ্ল্যাট গায়ের জোরে দখল হয়ে রয়েছে। দখলকারীদের মধ্যে তৃণমূল, সিপিএমের লোক যেমন রয়েছে তেমনি জেলাশাসকের দফতরে কর্মরত ব্যক্তিও রয়েছে বলে তাঁদের দাবি। এমনকী ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলরের নামেও দুটি ফ্ল্যাট জবরদখলের অভিযোগ উঠেছে। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারি ফেডারেশনের আহ্বায়ক সুনীলকুমার মণ্ডলও জেলাশাসকের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন যে এই সরকারি আবাসনের ফ্ল্যাটগুলি এক শ্রেণীর দুষ্কৃতী, রাজনৈতিক নেতা ও সংগঠনের নেতারা নিজেদের খেয়ালখুশি মতো তালা ভেঙে টাকার বিনিময়ে ভাড়া দিচ্ছে। গত ২১ নভেম্বর দুর্গাপুরে অবস্থিত হাউসিং বিভাগের স্টেট ম্যানেজারের কাছে এ নিয়ে অভিযোগ জানানো হয়েছিল বলেও তাঁদের দাবি। কিন্তু তারপরেও মামুলি অনুসন্ধান ছাড়া কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সুনীলবাবুর অভিযোগে জবরদখল হওয়া ন’টি ফ্ল্যাটের তালিকাও দেওয়া ছিল।

দু’তরফের অভিযোগেই সমীর চক্রবর্তী নামে এক তৃণমূল নেতার নাম উঠে আসে। সমীরবাবু এই আবাসনের ভাড়াটিয়া সমিতির সম্পাদকও ছিলেন। কিন্তু অনুসন্ধানের পরে দুর্গাপুরের স্টেট ম্যানেজারের অফিস থেকে বর্ধমান থানায় সমীরবাবুর নামে অভিযোগ দায়ের করতে চাওয়া হলে পুলিশ অভিযোগটি এফআইআর হিসেবে গ্রহণ না করে ফেলে রাখে বলে আবাসন দফতরের অভিযোগ। এস্টেট ম্যানেজার দিলীপ হালদার বলেন, “কিছুদিন আগে আমরা কয়েকটি ফ্ল্যাটে তদন্ত চালিয়ে একটি ফ্ল্যাট জবরদখল হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে পুলিশের কাছে এফআইআর করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু বর্ধমান থানা এফআইআর নিতে চায়নি। তাই আমি দফতরের কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছি, পুলিশ সুপারের কাছে জবরদখলকারীদের সম্পর্কে অভিযোগ দায়ের করে জেলাশাসকের কাছে রিপোর্ট দিতে।”

জোড়া অভিযোগ পেয়ে জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন তদন্তের নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, “আমি অতিরিক্ত জেলাশাসককে বলেছি ঘটনার তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে। পাশাপাশি আবাসন বিভাগকে বলা হয়েছে ঘটনা খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দিতে। ইতিমধ্যে ওরা কি ব্যবস্থা নিয়েছে, তার রিপোর্টও দিতে বলা হয়েছে। রিপোর্ট হাতে পেলে আমরা উপযুক্ত ব্যবস্থা নেব।”

বর্ধমান থানার আইসি আব্দুল গফ্ফর অবশ্য অভিযোগ না নিতে চাওয়ার ঘটনা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “আমরা ওই দফতরের লোকেদের বলেছিলাম, জবরদখলের ঘটনা ঘটে থাকলে তাঁরা দখলকারীদের উচ্ছেদ করুন। পুলিশ এই কাজে তাঁদের সাহায্য করবে।” অভিযুক্ত নেতা সমীর চক্রবর্তীরও দাবি, “আমি ওই জবরদখলে বাধা দিয়েছিলেম বলেই আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।” অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর সনত্‌ বক্সিও।

বুধবার জেলাশাসকের নির্দেশের প্রায় দেড় মাস কেটে যাওয়ার পরে ঘুম ভাঙে আবাসন দফতরের। এ দিন শাঁখারিপুকুরের ওই আবাসনে কয়েকটি ফ্ল্যাটে গিয়ে তদন্ত করেন তাঁরা। ভোটার পরিচয়পত্রও দেখতে চান। তবে বাসিন্দাদের অনেকেই ভোটার পরিচয়পত্র দেখাতে পারেননি বলে জানা গিয়েছে।

সিপিএমের বিক্ষোভ। দলীয় কর্মীদের বাড়ি ভাঙচুরের প্রতিবাদে বুধবার কালনা থানায় বিক্ষোভ দেখাল সিপিএম। বুধবার বিকাল সাড়ে তিনটে নাগাদ সিপিএম কর্মী, সমর্থকেরা বৈদ্যপুর মোড়ে জড়ো হন। সেখান থেকে কালনা থানা পর্যন্ত মিছিল করেন তাঁরা। কালনা জোনাল কমিটির সম্পাদক সুকুল শিকদারের অভিযোগ, কালনার তিন গ্রামে পরিকল্পনা করে হামলা চালিয়েছে তৃণমূল। এছাড়া দলীয় কর্মীদের উপর থেকে মিথ্যা মামলা তুলে নেওয়া, ভাঙা ঘরগুলির মেরামতি-সহ বিভিন্ন দাবিও করা হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE