Advertisement
০৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Education

Barnali MIshra: বৃষ্টিতে ভেসেছে বাড়ি, তবু পড়তে চেয়ে ১০ কিমি কোমরজল পেরিয়ে হাজির ছাত্রী

ভগবানপুরে কেলেঘাইয়ের জলে তাঁদের ঘর ভেসেছে। উঁচু বাঁধের উপরে ত্রিপলের নীচে কাটছে দিন। জলমগ্ন এলাকা পেরিয়ে তমলুকে যাওয়া প্রায় অসম্ভবই ঠেকছিল।

স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড নিচ্ছেন বর্ণালী। নিজস্ব চিত্র

স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড নিচ্ছেন বর্ণালী। নিজস্ব চিত্র

কেশব মান্না
ভগবানপুর শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২১ ০৬:৪৪
Share: Save:

দুর্যোগের মধ্যে ফোনটা এসেছিল মঙ্গলবার। প্রশাসনের আধিকারিক জানিয়েছিলেন, স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের আবেদন মঞ্জুর হয়েছে। তবে এক দিনের মধ্যেই তমলুকে গিয়ে সংগ্রহ করতে হবে কার্ড।
ফোনটা পেয়ে প্রথমে খুশিই হয়েছিল বর্ণালী। ঋণের টাকাটা পেলে বেঙ্গালুরুতে নার্সিং পড়তে যাওয়ার ইচ্ছাপূরণ হবে। কিন্তু পরদিনই কী ভাবে তমলুকে যাবে, সেই চিন্তা আঁকড়ে ধরেছিল। ভগবানপুরে কেলেঘাইয়ের জলে তাঁদের ঘর ভেসেছে। উঁচু বাঁধের উপরে ত্রিপলের নীচে কাটছে দিন। জলমগ্ন এলাকা পেরিয়ে তমলুকে যাওয়া প্রায় অসম্ভবই ঠেকছিল।
মেয়ের পড়ায় কোনও বাধা আসুক, চাননি বাবা রমাপদ মিশ্রী। বর্ণালীর জেদও নেহাত কম নয়। বুধবার ভোরেই সাইকেলে বেরিয়ে পড়েন বাবা-মেয়ে। প্রায় দশ কিলোমিটার পথ কোমর সমান জল ঠেলে তাঁরা ভগবানপুর থেকে নরঘাট পৌঁছন। তারপর বাসে তমলুকে জেলাশাসকের দফতর।

কেলেঘাই নদী থেকে ভগবানপুর যাওয়ার পথে আট কিলোমিটার দূরে নচ্ছিপুর। এই গ্রামেই বাড়ি বর্ণালীর। সপ্তাহখানেক আগে কেলেঘাইয়ের বাঁধ ভেঙে পটাশপুর, ভগবানপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। মাটির ঘর ভেসেছে বর্ণালীদেরও। পালপাড়া যোগদা সৎসঙ্গ বালিকা বিদ্যালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ বর্ণালী ইতিমধ্যে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বেঙ্গালুরুতে নার্সিং কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। বাবা চাষবাস করেন। পড়ার খরচ জোগাতেই স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের আবেদন করেন বর্ণালী।
কার্ড মঞ্জুর হলেও তা পেতে বাদ সেধেছিল প্রকৃতি দেবী। রমাপদ জানাচ্ছেন, বুধবার ভোর ৫টায় বেরিয়েছিলেন তাঁরা। তখনও অঝোরে বৃষ্টি হচ্ছিল। বর্ণালীদের বাড়ি থেকে ভাগবানপুর বাসস্ট্যান্ডের দূরত্বই প্রায় ছয় কিলোমিটার। বাবা-মেয়ে ভেবেছিলেন, সাইকেলে ওই বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে তমলুকের বাস ধরবেন। কিন্তু রাস্তার অনেকটা এখনও জলের তলায়। বাস চলছে না। বাধ্য হয়েই কখনও গামছা পরে, কখনও সাইকেল ঠেলে, কখনও আবার সাইকেল কাঁধে তুলে জল ভেঙে তাঁরা নরঘাটের দিকে এগোন। ঘণ্টা তিনেক পরে নরঘাটে পৌঁছে ভিজে পোশাক বদলে বাসে চড়েন দু’জনে। কার্ড নিয়ে রাতে বাড়িও ফিরেছেন জল ভেঙেই।
বর্ণালী বলছেন, ‘‘ঋণের কার্ডটা খুবই দরকার ছিল। নাহলে পড়ার সু্যোগটা হাতছাড়া হয়ে যেত।’’ বর্ণালীর বিদ্যালয়ের ইতিহাসের শিক্ষক গৌরহরি পালও বলছিলেন, ‘‘মেয়েটা মেধাবী। বরাবরই পড়াশোনায় ঝোঁক ছিল ওর।’’ রমাপদ জুড়ছেন, ‘‘মেয়ের পড়ার বিষয় তো ছিলই। জেলাশাসকের অফিসে বাড়ি মেরামতের অনুদানের জন্যও আবেদন জানিয়ে এসেছি।’’
বুধবার বর্ণালী-সহ ২৫ জন পড়ুয়াকে কার্ড দেওয়া হয়েছে। ঋণের পরিমাণ প্রায় এক কোটি পাঁচ লক্ষ টাকা। বর্ণালীদের কথা শুনে পরে পূর্ব মেদিনীপুরের লিড ব্যাঙ্কের ম্যানেজার সুদীপ মাইতি বলন, ‘‘ওই তরুণী আগে জানালে এ ভাবে আসতে বারণ করতাম। এখানে না এলেও ওঁরা ঋণ পাবেন।’’
রমাপদ অবশ্য বলেন, ‘‘ভেবেছিলাম না এলে যদি ঋণটা না পাই! তাহলে তো মেয়ের নার্সিং পড়াটা বন্ধ হয়ে যাবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Education Student Credit Card
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy