Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Panchayat Poll 2018

গণপুরের হারে দলের দ্বন্দ্বই দেখছে এলাকা

তৃণমূলের ওই সূত্রটির দাবি, জনজাতি প্রভাবিত ওই এলাকা বিজেপির প্রতি ঝুঁকেছে ঠিকই। তবে গণপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের দখল হারানোর পিছনে রয়েছে শাসকদলের স্থানীয় নেতা শুভ্রাংশু চৌধুরীর (বর্তমানে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন) সঙ্গে ব্লক সভাপতি গৌতম মণ্ডলের দ্বন্দ্ব।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

দয়াল সেনগুপ্ত
মহম্মদবাজার শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৮ ০১:৪৩
Share: Save:

গণপুরে হারের কারণ খোঁজা হবে বলে জানিয়ে রেখেছেন জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। সেখানে কী ইঙ্গিত মিলবে পরের কথা। তবে, তৃণমূলের একটি সূত্রই জানিয়ে রাখছে, অন্য কিছু নয়। হারের কারণ তৃণমূলের কোন্দল। তবে নেতৃত্বের কেউই সে কথা মানতে চাননি।

তৃণমূলের ওই সূত্রটির দাবি, জনজাতি প্রভাবিত ওই এলাকা বিজেপির প্রতি ঝুঁকেছে ঠিকই। তবে গণপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের দখল হারানোর পিছনে রয়েছে শাসকদলের স্থানীয় নেতা শুভ্রাংশু চৌধুরীর (বর্তমানে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন) সঙ্গে ব্লক সভাপতি গৌতম মণ্ডলের দ্বন্দ্ব। যার জেরে মোট সাতটি আসনের গ্রাম পঞ্চায়েতের এ বার ছ’টিই পেয়েছে বিজেপি।

ঘটনার সত্যতা মেনে নিয়েছেন শুভ্রাংশু চৌধুরী ওরফে খোকনও। তিনি বলছেন, ‘‘তরুণ বয়সে কংগ্রেস করতাম। তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে দলের সঙ্গে যুক্ত। মানুষের সঙ্গে সব সময় থেকেছি। কিন্তু, দল আমার কাজের গুরুত্ব মানতে না চাওয়ায় নির্বাচনের কয়েক মাস আগে বিজেপিতে যোগ দিই। সে জন্য ব্লক সভাপতিই দায়ী।’’ খোকনবাবুর ক্ষোভ, ২০০৮ সালে প্রধান হওয়ার পরে ২০১১ সালে তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছিলেন গৌতমবাবুই। ফাটল সেই তখন থেকে। তার পরেও ২০১৩ সালে ফের ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। তার পরেও দলে তাঁর গুরুত্ব বাড়েনি বলে অনুযোগ খোকনের। যোগ করছেন, ‘‘নেতৃত্বকে জানিয়েও কিছু না হওয়ায় শেষে বিজেপিতে যাই। জেদ ছিল আমার গুরুত্ব বোঝানো। এলাকার মানুষ সঙ্গে ছিলেন বলেই সেটা পেরেছি।’’

স্থানীয় সূত্রে খবর, বিজেপি-সিপিএম ও তৃণমূলের ত্রিমুখী লড়াই থাকলেও মৌবেলিয়া সংসদের দুধেকাঁদর, উলপাহাড়ি, কাঁটাপাহাড়ি, ডামড়া, উপরপাড়া সংসদের ধরমতলা দুই, পশ্চিম গণপুর সংসদের ম্যানেজার পাড়া, বাগানপাড়া জনজাতি এলাকা থেকে তৃণমূল সাফ হয়ে গিয়েছে। জয় মিলেছে মধ্যগণপুর সংসদেও। জয় পেতেই নিজের পৈত্রিক ভিটেয় এত দিন যেখানে তৃণমূল কার্যালয় ছিল, সেটাই রাতারাতি বদলে দিয়েছে বিজেপি-র দলীয় কার্যালয়ে।

সত্যিই কী গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব?

কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, যাঁর বিধানসভা এলাকার মধ্যেই পড়ে গণপুর গ্রাম পঞ্চায়েত। তিনি প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি। তবে ঘনিষ্ঠমহলে স্থানীয় দুই নেতার কোন্দল ও মন-কষাকাষিকেই দায়ী করছেন। আদিবাসী গাঁওতা নেতা রবীন সরেন বলছেন, ‘‘গোটা মহম্মদবাজার জুড়ে জনজাতি মানুষের শাসকদলের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার অন্যতম কারণ, স্থানীয় নেতাদের উন্নয়নমূলক প্রকল্পে দুর্নীতি, মানুষকে প্রাপ্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা এবং সীমাহীন ঔদ্ধত্য। গণপুরে সেই তালিকায় রয়েছেন খোদ ব্লক সভাপতি গৌতমবাবুই। তাই এই হাল।’’

গণপুর হারানোর জন্য গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা মানেননি তৃণমূল ব্লক সভাপতি গৌতম মণ্ডল। গৌতমবাবুর কথায়, ‘‘যিনি দলেরই নন, তাঁর সঙ্গে আবার কীসের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। এটুকু বলব, ওই এলাকায় বসবাসকারী মানুষজন অনেক আগে থেকেই বিজেপির দিকে ঝুঁকেছেন। তার পিছনে ধর্মের নিরিখে বিভাজনের সুড়সুড়ি রয়েছে। শুভ্রাংশ কোনও বিষয়ই নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE