কমিটির প্রহৃত প্রার্থী এনতাজুল।—নিজস্ব চিত্র
পঞ্চায়েত ভোটের দিনও সংঘর্ষের ট্র্যাডিশন অব্যাহত রইল ভাঙড়ে। সোমবার বেলার দিকে উত্তর গাজিপুরে ‘জমি জীবিকা বাস্তুতন্ত্র ও পরিবেশ রক্ষা কমিটি’র সঙ্গে তৃণমূলের সংঘর্ষ বাধে। দু’পক্ষের অন্তত ১৩ জন জখম হয়েছে বলে খবর। উত্তর গাজিপুরের দু’টি বুথ তৃণমূল সমর্থকেরা দখল করে নিয়েছে বলে কমিটির অভিযোগ। দক্ষিণ গাজিপুরেও বুথ দখল হয়েছে বলে অভিযোগ।
তীব্র উত্তেজনার মধ্যেই পুলিশ ও র্যাফের বিশাল বাহিনী উত্তর গাজিপুরে ঢুকছে। কমিটির পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী সরিফুল মল্লিকের সন্ধান পাওয়া গেলেও তাদের তিন কর্মী নিখোঁজ বলে কমিটির অভিযোগ। তাঁদের মধ্যে এক জন বুথ এজেন্ট। কমিটির অভিযোগ, গোটা ঘটনায় আরাবুল ইসলামের ভূমিকা স্পষ্ট। তিনি না-থেকেও আছেন। পুলিশি হেফাজতে থেকেই ভোট পরিচালনা করছেন আরাবুল।
এরই মধ্যে এ দিন বেলার দিকে পোলেরআইট-২ গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে কমিটির প্রার্থী এনতাজুল মোল্লাকে তৃণমূলের লোকজন তুলে নিয়ে গিয়ে বেধড়ক মারধর করে ফেলে রেখে গিয়েছে বলে কমিটির অভিযোগ। গত জানুয়ারিতে এনতাজুলের দাদা মতিজুল মোল্লা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। অভিযোগ ওঠে, পুলিশের গুলিতে তিনি মারা গিয়েছেন। যদিও পুলিশ দাবি করে, দুষ্কৃতীদের গুলিতেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
এ দিন পঞ্চায়েত ভোট শুরুর আগে থেকেই উত্তেজনা ছিল গোটা ভাঙড় জুড়ে। তার মধ্যেই আরাবুল ইসলামের এলাকা উত্তর গাজিপুরের পরিস্থিতি সকাল থেকেই অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। এই উত্তর গাজিপুরেই পঞ্চায়েত সমিতির আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন খোদ আরাবুল।
এরই মধ্যে দক্ষিণ গাজিপুরের অনন্তপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বুথ চত্বরেই মিলল একাধিক তাজা বোমা।
দেখুন ভিডিও
কমিটির নিয়ন্ত্রণাধীন ভাঙড়ের মাছিভাঙা, খামারআইট, পদ্মপুকুর, বকুলতলা ও মির্দাপাড় অঞ্চল মোটামুটি ভাবে শান্তিপূর্ণ থাকলেও উত্তর গাজিপুরের একটা বড় এলাকা জুড়ে কমিটির সমর্থকদের সঙ্গে তৃণমূল সমর্থকদের সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষের কেন্দ্রে ছিল উত্তর গাজিপুরের জমাদারপাড়া অবৈতনিক বিদ্যালয়ের বুথ। এই সময়ে কমিটির কর্মী আহাদ মোল্লার মাথা ফাটে বলে অভিযোগ। সংঘর্ষের সময় এই বুথের প্রিসাইডিং অফিসার অসুস্থ হয়ে পড়েন। এই বুথটি পোলেরহাট-২ গ্রাম পঞ্চায়েত আসনের অন্তর্ভুক্ত। এই আসনেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আরাবুলের ছেলে হাকিবুল। ফলে এই কেন্দ্রের দিকে নজর রয়েছে কমিটি ও তৃণমূল, দু’পক্ষেরই।
আরও পড়ুন: লাইভ: গুলি, বোমা, বুথ দখল দিকে দিকে, এর মধ্যেই চলছে ভোট
ভাঙড়ে ভাঙচুর সংবাদমাধ্যমের গাড়ি। নিজস্ব চিত্র।
এই গণ্ডগোলের মধ্যেই খবর পাওয়া যায়, কমিটির তিন কর্মী মিয়ারাজ মোল্লা, রবিউল মল্লিক ও বুথ এজেন্ট আজিম নিখোঁজ। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ ও র্যাফের বিরাট বাহিনী এলাকায় ঢোকার সময় তাদের সঙ্গেও কমিটির লোকেদের সংঘর্ষ বাধে। পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। তবে এই সংঘর্ষে কত জন আহত হয়েছেন তা এখনও জানা যায়নি।
‘জমি জীবিকা বাস্তুতন্ত্র ও পরিবেশ রক্ষা কমিটি’র পক্ষে শর্মিষ্ঠা চৌধুরী অভিযোগ করেন, এ দিন সকাল থেকেই পোলেরহাট-২-এর গাজিপুরে ব্যাপক সন্ত্রাস শুরু করে সশস্ত্র তৃণমূল বাহিনী। অপহরণ করা হয় তাঁদের পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী সরিফুল মল্লিককে। শর্মিষ্ঠার অভিযোগ, ‘‘পুলিশের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় চলে ছাপ্পা ভোট মারা। পুলিশ ও তৃণমূলী গুন্ডাদের যৌথ আক্রমণের সামনে ঙোটাররা পিছু হঠতে বাধ্য হয়। বুথের ভেতর থেকে ভোটারদের উপর বোমা গুলি চালানো হয়। ভাঙচুর করা হয় মিডিয়ার গাড়ি।’’
তাঁর আরও অভিযোগ, ‘ধৃত আরাবুল ইসলামকে নিজের গাড়িতে বসিয়ে বারুইপুরের পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিংহ তৃণমূলী সন্ত্রাস পরিদর্শন করছেন।’ গোটা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট বুথগুলিতে ভোটগ্রহণ বন্ধ করার আর্জি জানিয়েছে কমিটি। তাদের দাবি, নির্বাচন কমিশনের সরাসরি তদারকিতে সেগুলিতে পুনর্নির্বাচন করতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy