Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Protest rally

অলীক গ্রেফতারে ইদ ভুলে ফের যুদ্ধের প্রস্তুতি ভাঙড়ে

বৃহস্পতিবার ভরদুপুরে আন্দোলনের ‘নিউক্লিয়াস’ অলীক চক্রবর্তী ভুবনেশ্বরে পুলিশের হাতে ধরা পড়ার খবর মাছিভাঙা-খামারআইটে পৌঁছতেই উৎসব ভুলে ফের চোয়াল শক্ত সবার। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই ফের চেনা চেহারায় ফিরে গিয়েছিল ভাঙড়।

খামারআইট মোড়ে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভে সামিল খুদেরাও।— নিজস্ব চিত্র।

খামারআইট মোড়ে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভে সামিল খুদেরাও।— নিজস্ব চিত্র।

সিজার মণ্ডল
ভাঙড় শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৮ ১৪:৫৬
Share: Save:

আগুন নিভেও নিভছে না। বরং শুক্রবার সকালে ঝমঝমে বৃষ্টির মধ্যেও আগুন জ্বলতেই থাকল ভাঙড়ে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে পাঁচটি আসনে পাওয়ার গ্রিড বিরোধী জমি জীবিকা রক্ষা কমিটির প্রার্থীরা জেতার পর, উৎসবের আবহ ছিল ভাঙড় জুড়ে। নির্বাচনের ফল ঘোষণার মধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছিল রমজান মাস। অন্য দিকে, জেলে আরাবুল। লড়াইয়ের টানটান উত্তেজনা শিথিল হচ্ছিল ধীরে ধীরে। টানা লড়াইয়ের পর এক দিকে সাফল্য, অন্য দিকে সামনে খুশির ইদ। বাঁশ, শাবল, কাটারি ছেড়ে ফের হেঁসেলে মন ফিরছিল ফতিমা নাজিমাদের। দীর্ঘ দিন পরে আবার কারখানায় কাজে যোগ দিয়েছিলেন আন্দোলনের নেতা আবুল।

কিন্তু হঠাৎই ছন্দপতন। বৃহস্পতিবার ভরদুপুরে আন্দোলনের ‘নিউক্লিয়াস’ অলীক চক্রবর্তী ভুবনেশ্বরে পুলিশের হাতে ধরা পড়ার খবর মাছিভাঙা-খামারআইটে পৌঁছতেই উৎসব ভুলে ফের চোয়াল শক্ত সবার। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই ফের চেনা চেহারায় ফিরে গিয়েছিল ভাঙড়। গভীর রাত অবধি মশাল নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় মিছিল।

শুক্রবার সকালেও ছবিটা বদলায়নি। লাউহাটি মোড় পেরনোর পরই রাস্তা শুনসান। হাড়োয়া রোডে বাস বন্ধ। রাজারহাট থানা আর উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সীমানাতেই বগডোবা মোড়। সেই মোড়ে পৌঁছতেই রাস্তা বন্ধ। গাছের গুঁড়ি-ইট ফেলে বন্ধ করে রাখা রাস্তা। সেখানে নামতেই হল। কারণ, রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা চেনা মুখ আন্দোলনকারীরা বললেন, সামনে আরও অন্তত পাঁচ জায়গায় অবরুদ্ধ রাস্তা। এ বার আর বাইক গলার জায়গাও নেই।

আরও পড়ুন, সকাল থেকে দফায় দফায় বিক্ষোভ-আগুন-অবরোধে উত্তপ্ত ভাঙড়

বগডোবা পেরিয়ে নতুনহাট মোড়। করোগেটেড টিন রাস্তায় ফেলে বন্ধ করে রাখা। আর তার চারপাশে বড়সড় জটলা। সেই ভিড়েই খুঁজে পাওয়া গেল পাওয়ার গ্রিড বিরোধী কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মির্জা হাসানকে। তাঁর পিছনে একদল গ্রামবাসী স্লোগান দিচ্ছেন। সেখান থেকে একটু সরে মির্জা বললেন, “আমরা রমজানের কথা মাথায় রেখেই সব অবরোধ তুলে নিয়েছিলাম। নিজেরাও তৈরি হচ্ছিলাম ইদের জন্য। তার মধ্যে এই ঘটনা।” মির্জার পাশে দাঁড়ানো আন্দোলনকারীদের একাংশ তখন চেঁচিয়ে বলছেন, “সরকার বা আরাবুল যদি ভাবে অলীককে অ্যারেস্ট করে আন্দোলনকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেবে, তা হবার নয়। আমরা এক ইঞ্চি মাটি ছাড়ব না। অলীক এখন মাছিভাঙা বা খামারআইটের ঘরে ঘরে।”

পায়ে হেঁটে সেই ব্যারিকেড পেরিয়ে কিছুটা এগোলেই পাওয়ার গ্রিডের মূল ফটক। সেখানেও বাঁশ দিয়ে রাস্তা আটকানো। এ ভাবেই বগডোবা থেকে শ্যামনগর পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার রাস্তা জায়গায় জায়গায় অবরুদ্ধ। টায়ার জ্বলছে। বড়দের সঙ্গে বাচ্চারাও সামিল। সবার মুখেই এক কথা, “এ বার আরাবুল বা তার লোকজন যদি হামলার চেষ্টা করে তবে তারাও দেখবে পাল্টা মার কাকে বলে।”

আরও পড়ুন, বিভাজনের সমাজে কে ধরবে জঙ্গলমহলে ‘ছাতা’?

কারণ সাধারণ গ্রামবাসীদের ধারণা, অলীকের অনুপস্থিতিতে আরাবুল এক বার শেষ চেষ্টা চালাবেন গায়ের জোরে এলাকার দখল নিতে। আর চেষ্টা করবেন ভয় দেখিয়ে কমিটির পাঁচ জয়ী সদস্যকে নিজেদের দিকে টানার। আর তাই প্রস্তুতি সবার মধ্যেই। শুক্রবার বিকেলে এই পাঁচ কিলোমিটার ধরে প্রতিবাদ মিছিল করে কমিটি। সেই মিছিলে ছিলেন সমীর পুততুণ্ড, শ্যামল চক্রবর্তী, ভারতী মুৎসুদ্দি-সহ অনেকে। অলীকের মুক্তির দাবি জানিয়ে সামনে ভাঙড় এবং কলকাতায় রয়েছে একাধিক কর্মসূচী। কিন্তু তার মধ্যেও চলছে অন্য প্রস্তুতি। সদ্য জেল থেকে ছাড়া পাওয়া ভাঙড় আন্দোলনের নেতাদের কয়েক জনকে অলীকের অনুপস্থিতিতে অবিলম্বে ভাঙড়ে জমি আঁকড়ে পড়ে থাকতে বলা হয়েছে। যাতে কোনও ভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে না যায়। কমিটির এই প্রস্তুতির উপর জেলে বসে নজর রাখছেন আরাবুল ইসলামও।

অন্য দিকে, শুক্রবার ভুবনেশ্বরের আদালতে অলীককে হাজির করানো হলে বিচারক তাঁর চার দিনের ট্রানজিট রিম্যান্ড মঞ্জুর করেছেন। বারুইপুর জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আজ রাত ৯টা ৪০-এর বিমানে তাঁকে কলকাতায় নিয়ে আসা হচ্ছে।

ফের শুরু হল স্নায়ুর লড়াই। ইদ ভুলে আবার ভাঙড় জুড়ে লড়াইয়ের প্রস্তুতি!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE