Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Bharati Ghosh

জঙ্গলমহল জানে আমি কে, আচমকাই মুখ খুললেন ভারতী ঘোষ

পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারের পদ থেকে গত ২৫ ডিসেম্বর রাতে আচমকাই ভারতীকে ব্যারাকপুরে রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের তৃতীয় ব্যাটেলিয়নের কম্যান্ডিং অফিসারের পদে বদলি করা হয়। তিনি যদিও সেই পদে যোগ না দিয়ে সরাসরি চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে দেন।

মুখ খুললেন ভারতী ঘোষ। ফাইল চিত্র।

মুখ খুললেন ভারতী ঘোষ। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০১৮ ১৭:৩৫
Share: Save:

বড়দিনের রাতে তাঁর বদলির নির্দেশ জারি হয়েছিল। তার পরের এক মাসে শুখা কংসাবতী দিয়েও অনেক জল বয়ে গিয়েছে। কিন্তু ভারতী ঘোষ একটি শব্দও বলেননি। শুক্রবার সেই ‘নীরব’ ভারতীই সরব হলেন। একই সঙ্গে স্পষ্ট বার্তা দিলেন, তিনি আবারও মুখ খুলবেন। তবে, ‘ঠিকঠাক সময়ে’।

পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারের পদ থেকে গত ২৫ ডিসেম্বর রাতে আচমকাই ভারতীকে ব্যারাকপুরে রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের তৃতীয় ব্যাটেলিয়নের কম্যান্ডিং অফিসারের পদে বদলি করা হয়। তিনি যদিও সেই পদে যোগ না দিয়ে সরাসরি চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে দেন। রাজ্য সরকার সেই ইস্তফাপত্র গ্রহণও করে। নবান্ন শুধু সেখানেই থেমে থাকেনি। প্রাক্তন পুলিশ সুপারের ‘ঘনিষ্ঠ’ বেশির ভাগ পুলিশ কর্তা বা কর্মীকেই বিভিন্ন জায়গায় বদলি করে দেওয়া হয়। পশ্চিম মেদিনীপুর পুলিশে ভারতী ঘোষের কোনও ছায়া রাখতে চায়নি নবান্ন। এ সব নিয়ে সংবাদমাধ্যমে লেখা‌লেখি শুরু হয়। ওই অফিসাররা যে কতটা ‘দুর্নীতিপরায়ণ’ ছিলেন সে কথাও চর্চায় উঠে আসে। শুক্রবার ভারতী একটি হোয়াট্‌সঅ্যাপ গ্রুপে সেই ‘অভিযুক্ত’ পুলিশ কর্তা এবং কর্মীদের পাশে দাঁড়াতেই মুখ খুললেন। ওই অফিসার বা কর্মীরা কী ভাবে নিজেদের ‘প্রাণ বিপন্ন করে’ জঙ্গলমহলে পুলিশ বিভাগের জন্য কাজ করেছেন, তারই একটা ছোট খতিয়ান এ দিন দিয়েছেন ভারতী।

ভারতী সেখানে লিখেছেন, ‘আম জনতা’র সঙ্গে কথা না বলেই অনেকে যা ইচ্ছে তাই লিখছেন। তাঁর কথায়, ‘‘জঙ্গলমহলের মানুষের কাছে যান এবং কথা বলুন। ওঁরাই আপনাদের বলে দেবে, ভারতী ঘোষ কে? ওঁরাই আপনাকে বলে দেবে ২০১১ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত মাওবাদী প্রভাবিত অঞ্চলগুলোতে কী কী ঘটেছে।’’

আরও পড়ুন:

সুভাষ-টক্করে বিজেপির পাল্টা ভারতমাতা পুজো

ফোনে পুলিশ, ফেসবুকে ছবি দিতেই চড় ছাত্রীকে

এর পরে তিনি তাঁর ঘনিষ্ঠ তিন পুলিশকর্মী ও অফিসারকে সাহসিকতা আর জীবন বিপন্ন করে দায়িত্ব পালনের সার্টিফিকেট দিয়েছেন।

দীর্ঘ দিন খড়্গপুরের এসডিপিও পদে ছিলেন সন্তোষ মণ্ডল। ভারতীকে সরিয়ে দেওয়ার পর জলপাইগুড়ির ডিএসপি (সার্কিট বেঞ্চ) করা হয় তাঁকে। বদলির আগে সন্তোষবাবু ঝাড়গ্রামের ডিএসপি (ডিইবি) ছিলেন। ভারতী এ দিন লিখেছেন, ‘‘নেকরাবিন্দায় মাওবাদীদের সঙ্গে গোলাগুলির দিন সন্তোষ গুলিবিদ্ধ হতে হতে বেঁচে যান।’’

ভারতীর আমলে দীর্ঘ দিন খড়্গপুরের (লোকাল) ওসি-র পদে ছিলেন রাজশেখর পাইন। তাঁর বদলি হয়েছে মোহনপুর থানায়। ভারতীর কথায়, ‘‘মাওবাদীদের এক শীর্ষ নেতাকে ধরতে গিয়েছিলাম ঝাড়গ্রামের বাঁধগোড়ায়। আমাকে সাহায্য করতে গিয়ে রাজশেখর সে দিন নিজের প্রাণের মায়াটুকুও করেননি। কী ভাবে বেঁচে গিয়েছিলেন ওই অফিসার আমি-ই জানি। তবে, আমরা ওই মাওবাদী নেতাকে ধরতে পেরেছিলাম।’’

এর পর যাঁকে নিয়ে বলেছেন ভারতী, তাঁর নাম সুজিত মণ্ডল। পুলিশ সুপার থাকার সময় সুজিতই ছিলেন ভারতীর দেহরক্ষী। সর্ব ক্ষণ এবং সর্বত্র ভারতীর সঙ্গে তাঁকেই দেখা যেত। ‘ম্যাডাম’-এর বদলির নির্দেশ যে দিন এসে পৌঁছয়, সে দিনই সুজিত ৪৫ দিনের ছুটির আবেদন করেন ভারতীর কাছে। ব্যাক ডেটে সেই আবেদন মঞ্জুর করেন প্রাক্তন পুলিশ সুপার। পরে ভারতী ইস্তফা দেন চাকরি থেকে। জেলা পুলিশ মহলে জল্পনা, সুজিতও নাকি চাকরিতে ইস্তফা দিতে আবেদন করেছেন। যদিও এসপি অফিস থেকে এই খবরের সত্যতা মেলেনি। ফোন করা হলে সুজিতও এ বিষয়ে কিছু বলতে চাননি।

দেহরক্ষী সুজিত সম্পর্কে ভারতীর মন্তব্য, ‘‘অন্য এক মাওবাদী শীর্ষ নেতাকে ধরতে গিয়েছিলাম ঝাড়খণ্ডের প্রত্যন্ত এক জায়গায়। সুজিত সেখানে আমাকে যে ভাবে সাহায্য করেছিলেন, ভুলব না! প্রাণের তোয়াক্কা করেননি ওই পুলিশ কর্মী। অল্পের জন্য সুজিত সে দিন বেঁচে গিয়েছিলেন। ওই মাওবাদীকেও আমরা পাকড়েছিলাম।’’ এর পরেই ভারতী লিখছেন, ‘‘এই অফিসারদের ইতিহাসটাই এমন। ওঁদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়ে আমি গর্বিত।’’

তবে নিজের ঘনিষ্ঠদের প্রশংসা করেই থেমে থাকেননি ভারতী। জানিয়েছেন, আরও মুখ খুলবেন। ‘‘মুখ আমি খুলব। তবে, ঠিক সময়ে’’— এ ভাবেই এ দিনের হোয়াট্‌সঅ্যাপ বার্তা শেষ হয়েছে ভারতীর।

পুলিশ সুপারের পদ থেকে ‘সরে যাওয়া’র পর, এর আগে ভারতী এক বারই প্রকাশ্যে কথা বলেছিলেন। মেদিনীপুর শহরের এক মন্দিরে পুজো দিতে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘ঈশ্বরের ডাকে এখানে এসেছি।’ ব্যস, আর একটি শব্দও এত দিনে তিনি খরচ করেননি প্রকাশ্যে। কিন্তু এ বার কি তাঁর মুখ খোলা শুরু হল? হলে, কী নিয়ে বলবেন মুখ্যমন্ত্রীর এক সময়ের ঘনিষ্ঠ এই আইপিএস? ‘ঠিক সময়’ বলতেই বা কী বলতে চেয়েছেন ভারতী? জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE