বিমল গুরুঙ্গ। —ফাইল চিত্র।
পাহাড়ের আন্দোলনের সময় মালিধূরার কাঞ্চনজঙ্ঘা পাবলিক স্কুলের একাংশে বিমল গুরুঙ্গ অস্ত্র ভাণ্ডার গড়ে তুলেছিলেন বলে অভিযোগ আনল দার্জিলিং পুলিশ। ২০১১ সালে গুরুঙ্গের পৃষ্ঠপোষকতায় তৈরি কাঞ্চনজঙ্ঘা ট্রাস্টের মাধ্যমে এই সিবিএসই স্কুলটি শুরু হয়েছিল। পুলিশ দাবি, গত বছর আন্দোলনের মাস খানেক আগে স্কুলের নির্মিয়মাণ হস্টেলে অস্ত্র তৈরির কারখানা এবং জিলেটিন স্টিক মজুত করা হয়। সেখানে জিএলপি-র অস্ত্র প্রশিক্ষণ শিবিরও চলে।
পুলিশের তাড়া খেয়ে গুরুঙ্গ পালানোর সময় তা ঘনিষ্ঠ অনুগামীদের মধ্যে বিলিয়ে দিয়ে যান। গুরুঙ্গের সর্বক্ষণের সঙ্গী তথা ব্যক্তিগত গাড়ির চালক সিদ্ধান্ত বিশ্বকর্মাকে গ্রেফতারের পর এমন তথ্য উঠে এসেছে। মঙ্গলবার সিদ্ধান্তকে আদালতে তুলে নতুন করে ৭ দিনের হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।
দার্জিলিঙের পুলিশ সুপার (অপারেশন) অমরনাথ কে বলেন, ‘‘সিদ্ধান্তকে জেরা করে চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে। ওই কাঞ্চনজঙ্ঘা স্কুলে লোক আনিয়ে অস্ত্র কারখানা, হস্টেলে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের চুরি করা জিলেটিন স্টিক লুকিয়ে রাখা হত। সেখান থেকেই বিলি করা হয়েছে।’’ তিনি জানান, পাতলেবাস, তাকভর, লিম্বুবস্তির বিভিন্ন এলাকায় লুকানো অস্ত্র, জিলেটিন স্টিকের খোঁজ শুরু হয়েছে। আরও কিছু নাম পাওয়া গিয়েছে, তা দেখা হচ্ছে। উল্লেখ্য, গত রবিবার লিম্বুবস্তি থেকে তিনটি রাইফেল, গুলি ও ধারাল অস্ত্র পুলিশ উদ্ধার করেছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, গত বছরের ২০ জুলাই বিজনবাড়ির নেগি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে ৩২৫ কেজি জিলেটিন স্টিক চুরি হয়। অক্টোবরে বিমলের খোঁজে তল্লাশির সময় সিংলার জঙ্গল থেকে ‘একে’ সিরিজের আগ্নেয়াস্ত্র ছাড়াও ২০ কেজির মতো জিলেটিন স্টিক মেলে। পরবর্তীতে, তাকভর চা বাগানের মাটি খুঁড়ে মেলে ৪০টি কেজি স্টিক। পাহাড় জুড়ে বিভিন্ন আইইডি বিস্ফোরণে ওই জিলেটিন স্টিকই ব্যবহার হয়েছিল বলে তদন্তকারীদের অনুমান।
দার্জিলিং পুলিশের অফিসারেরা দাবি করেছেন, ওই বছর মে মাসে প্রথমে ডুয়ার্স, লোধামা, রিম্বিক, জোরবাংলো, রংলি রংলিওট থেকে ১২০ জন জিএলপি সদস্যকে কাঞ্চনজঙ্ঘা স্কুলে এনে রাখা হয়।
এরপরে দার্জিলিঙের গোখ এলাকার এক বাসিন্দাকে স্কুলে আনা হয়। তিনি আশির দশকে দেশি বন্দুক তৈরিতে পারদর্শী ছিলেন। এ ছাড়া দু’জন অবসরপ্রাপ্ত সেনা জওয়ান ছিলেন। রাজ্যের বাইরে একে একে সিরিজও ঢোকে। তেমনই আসে ৩২৫ কেজি জিলেটিন স্টিক।
পুলিশের দাবি, সিদ্ধান্ত বিশ্বকর্মা প্রতিটি লেনদেনের সময় গুরুঙ্গের সঙ্গেই ছিলেন। সিকিম থেকে পোখরিবং-এর এক নার্সারি মালিকের মাধ্যমে দুই দফায় দেড় কোটি টাকা আসে। পুরোদস্তুর গুরুঙ্গের উপস্থিতিতে অস্ত্র ভাণ্ডার গড়ে প্রশিক্ষণ চলতে থাকে। দার্জিলিং সদর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে চা বাগানের পাশে ২.১৪ একর জমির উপর স্কুলটি তৈরি হয়েছিল। আন্দোলনের সময় তদন্তে নেমে চা বাগানের জমি বেআইনি ভাবে দখল করে স্কুলটি বানানোর জন্য প্রশাসন তা বন্ধ করে দেয়। রবিবার নতুন করে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। পুলিশ সুপার জানান, ‘‘গুরুঙ্গ জামুনিতে গুলি ছোড়া প্র্যাকটিস করতেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy