Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

নিশানায় লোকসভা ভোট, নাগরিক মঞ্চেও মন টানতে সক্রিয় বিজেপি

এনআরসি-কাণ্ডের জেরে তৃণমূল এবং বামফ্রন্ট বিজেপিকে ‘বাংলা এবং বাঙালি বিরোধী’ তকমা দিয়ে প্রচারে নামায় বেকায়দায় পড়েছে গেরুয়া শিবির। বিজেপির একাংশের মতে, ওই প্রচারের মোকাবিলা করতে না পারলে লোকসভা ভোটে আশানুরূপ ফল করা কঠিন হবে।

রোশনী মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৮ ০৪:০০
Share: Save:

আগামী লোকসভা ভোটকে নিশানা করে দলীয় পরিচয়ের বাইরে বিভিন্ন নাগরিক মঞ্চকে রাস্তায় নামাচ্ছে বিজেপি। যেমন— শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় রিসার্চ ফাউন্ডেশন এবং সিটিজেন্স ফোরাম। এদের লক্ষ্য, পশ্চিমবঙ্গে এখনও বিজেপির ছাতার তলায় না আসা মানুষদেরও ভোট টানা এবং অ-বিজেপি বিশিষ্টজনদের আকর্ষণ করা।

এই উদ্দেশ্যেই আগামী সেপ্টেম্বর মাসে বারাসতে এবং বোলপুরে দু’টি কর্মসূচি নিয়েছে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় রিসার্চ ফাউন্ডেশন। বারাসতে তারা জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) প্রসঙ্গে আলোচনাসভা করবে। যেখানে তৃণমূলের এনআরসি-বিরোধী যুক্তিগুলি খণ্ডন করার পাশাপাশি এ রাজ্যেও নাগরিক পঞ্জির প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করা হবে। আর বোলপুরে শিক্ষা, আইনশৃঙ্খলা এবং নারী নিরাপত্তার প্রশ্নে পশ্চিমবঙ্গের ‘দুর্দশা’ নিয়ে আলোচনাসভা করবে ওই ফাউন্ডেশন।

এনআরসি-কাণ্ডের জেরে তৃণমূল এবং বামফ্রন্ট বিজেপিকে ‘বাংলা এবং বাঙালি বিরোধী’ তকমা দিয়ে প্রচারে নামায় বেকায়দায় পড়েছে গেরুয়া শিবির। বিজেপির একাংশের মতে, ওই প্রচারের মোকাবিলা করতে না পারলে লোকসভা ভোটে আশানুরূপ ফল করা কঠিন হবে। যে কারণে গত ১১ অগস্ট কলকাতার মেয়ো রোডের সভায় এনআরসি প্রসঙ্গে বাঙালিকে আশ্বস্ত করতে নানা যুক্তি দিয়েছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। তারই ধারাবাহিকতায় এ বার আমজনতা এবং বিশিষ্টজনেদের কাছে এনআরসি-র পক্ষে যুক্তি দেবে রিসার্চ ফাউন্ডেশন।

ওই সংস্থার অধিকর্তা অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘ভোট গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ওটাই প্রধান বিষয় নয়। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ভূমিকার জন্যই পশ্চিমবঙ্গ ভারতভুক্ত হয়েছে। তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে আমাদেরই দায়িত্ব এ রাজ্যে এনআরসি-র প্রয়োজনীয়তা মানুষকে বোঝানো।’’ আর বোলপুরের কর্মসূচি নিয়ে অনির্বাণের বক্তব্য, ‘‘আমরা শিক্ষায় বাঙালির হারানো গৌরব ফেরাতে চাই। সেই উদ্দেশ্যেই বোলপুরের সভায় শিক্ষাক্ষেত্রে বাংলার বর্তমান দুর্দশার প্রসঙ্গ আলোচনা করা হবে।’’

আরও পড়ুন: আইটি সেলের জন্য দফতর খুঁজছে বিজেপি

বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মনে করেন, এ রাজ্যে রাজনৈতিক পরিবর্তনে বিশিষ্টজনেদের বড় ভূমিকা থাকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১১ সালে রাজ্যের শাসনক্ষমতায় যাওয়ার আগে যেমন ‘পরিবর্তনপন্থী’ বিশিষ্টজনেরা রাস্তায় নেমেছিলেন। তাই দলের রাজ্য নেতৃত্বকে বিশিষ্টজনেদের কাছে টানার পরামর্শ বার বার দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। তাতে যথেষ্ট কাজ না হওয়ায় দলীয় বৈঠকে কয়েক বার ভর্ৎসনাও করেছেন তাঁরা। এই পরিস্থিতিতে রিসার্চ ফাউন্ডেশনকে এই কাজে নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। নভেম্বর বা ডিসেম্বর মাসে কলকাতায় জাতীয়তাবাদী সাহিত্য-শিল্প সম্মেলন করবে ওই ফাউন্ডেশন। অনির্বাণের কথায়, ‘‘দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জাতীয়তাবাদী চেতনার লেখক, শিল্পীরা ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।’’

নাগরিক সমাজের আর একটি সংগঠন সিটিজেন্স ফোরামের তরফে তনভীর নাসরিন জানান, যুবসমাজ এবং সংখ্যালঘুদের উন্নয়নে নরেন্দ্র মোদী সরকারের সাফল্য প্রচার করবেন তাঁরা। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া এবং শিক্ষকদের নিয়ে আলোচনাচক্র করা হবে। কোনও কোনও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বা সাংসদকে ওই সভাগুলিতে আনা হবে। সামাজিক এবং ধর্মীয় হাতিয়ারেও লোকসভা ভোটের জমি চাষ করছে সঙ্ঘ পরিবার। সঙ্ঘ সূত্রের খবর, আসন্ন জন্মাষ্টমী উৎসবকেও কার্যত ভোটের স্বার্থে ব্যবহার করা হবে। জন্মাষ্টমীর অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক দলমত নির্বিশেষে বহু মানুষ প্রসাদ নিতে যাবেন। তখন তাঁদের সঙ্গে ঘরোয়া আড্ডায় এনআরসি-র পক্ষে যুক্তি দেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Election Lok Sabha Forum
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE