প্রতীকী ছবি।
এক দিকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাদের তিন বেলা আক্রমণ করে যাচ্ছেন। অন্য দিকে, রাজ্যের দুই প্রতিষ্ঠিত বিরোধী শিবির কোমর ভেঙে ঝিমিয়ে পড়েছে!
আর এই দুইয়ের ফাঁক দিয়ে প্রায় ফাঁকা মাঠে গোল করতে নেমে পড়েছে বিজেপি!
নরেন্দ্র মোদীর নোট বাতিলের সিদ্ধান্তকে ঘিরে দেশ জুড়ে যখন বিতর্ক, বঙ্গভূমে তখন ক্রমেই সক্রিয়তা বাড়াচ্ছে গেরুয়া শিবির। এমনিতে এ রাজ্যে বিজেপি সম্পর্কে চালু রসিকতা হল, দলে চার জন নেতা এবং পাঁচটা গোষ্ঠী! সেই সব অভ্যন্তরীণ সমস্যা এবং সাংগঠনিক দুর্বলতা সত্ত্বেও বিজেপি এখন রাজ্য জুড়ে কর্মসূচি নিয়ে প্রবল ভাবে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। এক কালে বামেরা যা করতো, এখন বিজেপি-ও সেই পথে জঙ্গি আন্দোলনে পিছপা হচ্ছে না।
কোথাও গোষ্ঠী-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলে বিধায়ক বা নেতা-নেত্রীদের প্রতিনিধিদল পৌঁছে যাচ্ছে, আবার জেলায় জেলায় একই সঙ্গে কর্মসূচি নিয়ে প্রশাসনকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলা হচ্ছে। সামান্য মিছিল করলেও পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে যাচ্ছেন দলের কর্মীরা। মেরুকরণের রাজনীতির পূর্ণ সুযোগ নিয়ে ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে তৃণমূলের জবরদস্ত প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠার জন্য প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে বিজেপি।
তৃণমূলের জমানায় কালো ও জাল টাকার সমর্থন এবং শিশু পাচারের বিরুদ্ধে বুধবারই যেমন গোটা রাজ্যে জেলাশাসকদের দফতরের সামনে ধর্নার কর্মসূচি নিয়েছিল বিজেপি। রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহ, রাজ্য সাধারণ সম্পাদক শমীক ভট্টাচার্য বা লকেট চট্টোপাধ্যায়— পরিচিত সব নেতা-নেত্রীকেই জেলায় জেলায় দেখা গিয়েছে এ দিন। হাওড়ার কর্মসূচির ফাঁকে সংবাদমাধ্যমের উপরে হামলার অভিযোগও উঠেছে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে। কিন্তু রাস্তায় নেমে বিরোধী রাজনীতির পরিসরে জাঁকিয়ে পা রাখার চেষ্টায় খামতি রাখছে না তারা।
লক্ষ্যণীয় ভাবে, বিতর্ক হবে জেনেও প্রচারের আলো নিজেদের দিকে ঘুরিয়ে রাখতে তৃণমূল নেত্রীর বিরুদ্ধে চাঁছাছোলা আক্রমণে কোনও ছাড় দিচ্ছেন না দিলীপবাবুরা।
রাজ্য সভাপতি যেমন এ দিনই বালুরঘাট ও মালদহে গিয়ে মন্তব্য করেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর শুধু শাড়িই সাদা। দলটা কালো হয়ে গিয়েছে!’’ মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির প্রতি ইঙ্গিত করে কালীঘাটে কালো টাকার খোঁজে তল্লাশি অভিযানের কথাও ফের বলেছেন দিলীপবাবু। বিজেপি-র এক রাজ্য নেতার কথায়, ‘‘তৃণমূল এখন প্রধান শত্রুর মর্যাদা দিয়েছে আমাদের। আমরা এই সুযোগ ছাড়ব কেন?’’
দলের একাংশ অবশ্য এ কথাও মানছে, জেলায় জেলায় একসঙ্গে কর্মসূচি নেওয়া অনেক দিন ধরেই তাঁদের দস্তুর। এখন কেন্দ্রের শাসক দল হওয়ার সুবাদে কিছু ব্যবহারিক সুবিধা তাঁদের আছে। আর বিরোধী হিসাবে বাম ও কংগ্রেস ঝিমিয়ে পড়ায় তাঁদের সাধারণ কর্মসূচিও চোখে পড়ার মতো হয়ে উঠছে। রাজ্য বিজেপি-র এক সম্পাদকের সরস মন্তব্য, ‘‘অন্য বিরোধীরা তো কেউ কোথাও নেই! কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রে মাত্র ৯০০ এজেন্ট দিয়ে আমরা কত শতাংশ ভোট বাড়িয়ে ফেললাম। একেই বলে ঝড়ে বক মরে, ফকিরের কেরামতি বাড়ে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy