Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সারদায় টাকাও কমিয়ে দেখায় সিট: সিবিআই

সিবিআইয়ের এক তদন্তকারীর কথায়, আমানতকারীদের কাছ থেকে সারদা গোষ্ঠী ২৪৬০ কোটি টাকা তুলেছিল বলে ২০১৪ সালের ২৫ মার্চ আদালতে পেশ করা এক হলফনামায় জানিয়েছিল রাজ্য সরকার। রাজ্য সরকারের গঠিত স্পেশ্যাল ইনভেস্টিগেশন টিম বা সিটের তদন্তকারীদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই ওই হলফনামা প্রস্তুত করা হয়েছিল।

শুভাশিস ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৮ ০৫:২৯
Share: Save:

সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারির মামলায় রাজ্য সরকারের গড়া সিট বা বিশেষ তদন্তকারী দলের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগ তো আছেই। সেই সঙ্গে টাকার পরিমাণও কম করে দেখানো হয়েছে বলে দাবি করছেন সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা।

সিবিআইয়ের এক তদন্তকারীর কথায়, আমানতকারীদের কাছ থেকে সারদা গোষ্ঠী ২৪৬০ কোটি টাকা তুলেছিল বলে ২০১৪ সালের ২৫ মার্চ আদালতে পেশ করা এক হলফনামায় জানিয়েছিল রাজ্য সরকার। রাজ্য সরকারের গঠিত স্পেশ্যাল ইনভেস্টিগেশন টিম বা সিটের তদন্তকারীদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই ওই হলফনামা প্রস্তুত করা হয়েছিল। সিবিআই অফিসারদের বক্তব্য, প্রায় চার বছর তদন্ত করার পরে বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে তারা জেনেছে, পশ্চিমবঙ্গ-সহ বিভিন্ন রাজ্য থেকে ২৪৬০ কোটির প্রায় চার গুণ টাকা তোলা হয়েছিল। অর্থাৎ সারদা-কাণ্ডে অন্তত আট হাজার কোটি টাকা নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে।

সিবিআই জানাচ্ছে, এই বিপুল পরিমাণ অর্থ নয়ছয়ের ঘটনায় সিটের বড় কর্তা ছাড়াও নিচু তলার অন্তত আট জন পুলিশ অফিসারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার। সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন এবং অন্যতম ডিরেক্টর দেবযানী মুখোপাধ্যায়কে জেরা করে বিভিন্ন রাজ্য থেকে কত টাকা তোলা হয়েছিল, তার একটি হিসেবও তৈরি করা হয়েছে। দেবযানী মূলত সারদার ব্যাঙ্ক বিভাগ দেখতেন। সুদীপ্ত-দেবযানীকে মুখোমুখি বসিয়ে একাধিক বার জেরার পরে প্রায় আট হাজার কোটি টাকা তোলা হয়েছিল বলেই হিসেব পাওয়া গিয়েছে।

ভিন্‌ রাজ্য থেকে আসা টাকার হিসেবের সব নথি মূলত মিডল্যান্ড পার্কের অফিসেই রাখা হয়েছিল বলে জেরায় জানান দেবযানী। প্রাথমিক পর্যায়ে ওই অফিসে তল্লাশি অভিযান চালিয়েছিলেন সিটের তদন্তকারীরা। প্রায় সব ক্ষেত্রেই দেবযানীকে নিয়েই তল্লাশি অভিযান চালান তাঁরা। ওই অফিস থেকে প্রচুর নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। শুধু দেবযানী নয়, একবালপুরের বাসিন্দা সারদা গোষ্ঠীর এক মহিলা অ্যাকাউন্ট্যান্টকেও জেরা করা হয়েছে। ওই মহিলাকে নিয়েও সারদা বিভিন্ন অফিসে তল্লাশি অভিযান চালিয়েছিল সিট। দেবযানীর বক্তব্যের সঙ্গে ওই মহিলা অ্যাকাউন্ট্যান্টের বয়ান মিলে যাচ্ছে বলে সিবিআই তদন্তকারীদের দাবি।

সিবিআই জানাচ্ছে, সারদা-কাণ্ডে মূলত বিধাননগর কমিশনারেটের কমিশনার রাজীবকুমারের নেতৃত্বেই তদন্ত হয়েছিল। ওই তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছিলেন গোয়েন্দা বিভাগের এক ডেপুটি কমিশনার। তিনি এখন একটি জেলার পুলিশ সুপার। তথ্য লোপাট হয়েছে সিটের তৎপরতার সময়েই। তখনই তছরুপের টাকার পরিমাণ কম করে দেখানো হয়। প্রায় আট হাজার কোটি টাকা নয়ছয় হয়েছে বলে জানা গিয়েছে সিবিআইয়ের তদন্তে।

এক সিবিআই-কর্তা জানান, একাধিক বার তলব করার পরেও সিটের বড় কর্তারা সারদা-কাণ্ডের তদন্তকারীদের মুখোমুখি হতে চাইছেন না। এ বার রাজ্য পুলিশের ডিজিকেও ই-মেল করা হয়েছে। সিটের কর্তারা এ বারেও যদি গরহাজির থাকেন, তা হলে সুপ্রিম কোর্টে সব নথি জমা দেওয়া হবে। পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে শীর্ষ আদালতের নির্দেশ মেনেই। ‘‘আমরা আদালতের কাছে কড়া আইনি পদক্ষেপের আবেদন করব,’’ বললেন এক সিবিআই-কর্তা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Saradha Scam CBI SIT Investigation Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE