Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

শুভেন্দুকে জিজ্ঞাসাবাদ তিন দফায়

সারদা কেলেঙ্কারিতে এ বার জেরা করা হল তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীকে। কাঁথির এই সাংসদকে সল্টলেকে নিজেদের দফতরে নোটিস দিয়ে ডেকে পাঠায় সিবিআই। বুধবার দুপুরে তিনি হাজির হন সেখানে। প্রায় দেড় ঘণ্টা পরে তিনি বেরিয়ে আসেন। পরে তিনি বলেন, ১৬০ ধারা মোতাবেক সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য তাঁকে ডেকে পাঠিয়েছিল সিবিআই।

সিবিআই অফিসের বাইরে শুভেন্দু অধিকারী।  ছবি: শৌভিক দে।

সিবিআই অফিসের বাইরে শুভেন্দু অধিকারী। ছবি: শৌভিক দে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৩২
Share: Save:

সারদা কেলেঙ্কারিতে এ বার জেরা করা হল তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীকে। কাঁথির এই সাংসদকে সল্টলেকে নিজেদের দফতরে নোটিস দিয়ে ডেকে পাঠায় সিবিআই। বুধবার দুপুরে তিনি হাজির হন সেখানে। প্রায় দেড় ঘণ্টা পরে তিনি বেরিয়ে আসেন। পরে তিনি বলেন, ১৬০ ধারা মোতাবেক সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য তাঁকে ডেকে পাঠিয়েছিল সিবিআই।

সিবিআই সূত্রের খবর, এ দিন মোট তিন দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে শুভেন্দুকে। দু’জন তদন্তকারী অফিসার তাঁর বয়ান নেওয়ার পরে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন আইজি-পদমর্যাদার এক অফিসার।

কী নিয়ে প্রশ্ন করা হয় সাংসদকে?

তৃণমূলের আর এক সাংসদ কুণাল ঘোষ ইডি-কে লেখা তাঁর চিঠিতে শুভেন্দুর নাম উল্লেখ করেছিলেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেন কাঁথিতে একটি আবাসন প্রকল্প গড়ার সময়ে শুভেন্দু তাঁর কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন। চিঠিতে কুণাল জানিয়েছিলেন, বিষয়টি নিয়ে সেই সময়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হয়েছিলেন সুদীপ্ত। কুণালের চিঠি অনুযায়ী, মমতা হস্তক্ষেপ করার পরেই সুদীপ্তর কাছ থেকে টাকা নেওয়া বন্ধ করেছিলেন শুভেন্দু।

শুভেন্দু অবশ্য প্রথম থেকেই এই চিঠির বিষয়টি অস্বীকার করে আসছেন। তাঁর বিরুদ্ধে এই ধরনের কথা লেখার জন্য তিনি কুণালের বিরুদ্ধে মানহানির মামলাও দায়ের করেন। এ দিন এক তদন্তকারী অফিসার শুভেন্দুর কাছে এই বিষয়টি নিয়ে জানতে চান। শুভেন্দু তাঁকে জানান, ওই বিষয়টির সঙ্গে তাঁর কোনও যোগাযোগ নেই। এটি সম্পূর্ণ ভাবেই কাঁথি পুরসভার বিষয়। ঘটনাচক্রে তাঁর ভাই ওই পুরসভার চেয়ারম্যান। তবে এ নিয়ে যাবতীয় তথ্য পুরসভায় রয়েছে। তদন্তকারী অফিসারকে তিনি আরও জানান, এই ধরনের বড় আবাসন প্রকল্পের অনুমোদন পুরসভা করে না। করে মিউনিসিপ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিরেক্টরেট (এমইডি)। সেখানেও সব তথ্য রয়েছে বলে তিনি সিবিআইকে জানান।

মঙ্গলবার জেল থেকে জামিনে ছাড়া পেয়েছেন সুদীপ্তর গাড়িচালক অরবিন্দ সিংহ চৌহান। অরবিন্দের দাবি, সিবিআইকে তিনি লিখিত ভাবে জানিয়েছেন, কলকাতা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার দু’দিন আগে শুভেন্দুর সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন সুদীপ্ত। অরবিন্দের বক্তব্য, ৭ এপ্রিল রাতে সল্টলেকের মিডল্যান্ড পার্কে সারদার দফতরে শুভেন্দু এসে বৈঠক করেন সুদীপ্তর সঙ্গে। সিবিআই সূত্রের খবর, এ দিন জিজ্ঞাসাবাদের দ্বিতীয় পর্যায়ে অন্য এক তদন্তকারী অফিসার এই বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করেন শুভেন্দুকে। বিষয়টি অস্বীকার করে শুভেন্দু তাঁকে জানান, পুরো বিষয়টিই কুণালের চক্রান্ত। কারণ সারদার সঙ্গে যোগাযোগের বিষয় নিয়ে কুণালের বিরুদ্ধে একমাত্র তিনিই সরব হয়েছিলেন। পরে কুণালের বিরুদ্ধে তিনি মামলাও করেন।

জিজ্ঞাসাবাদের তৃতীয় পর্যায়ে শুভেন্দুর সঙ্গে কথা বলেন এক জন আইজি পদমর্যাদার অফিসার। তিনি তাঁর কাছ থেকে জানতে চান, সারদার বিভিন্ন মিডিয়া তৃণমূলের হয়ে প্রচার চালিয়েছে। নির্বাচনের সময়ে এই প্রচারের সুফল পেয়েছে তৃণমূল। শুভেন্দু তাঁকে বলেন, এ রাজ্যে নির্বাচন এই ধরনের মিডিয়া প্রচারে হয় না। সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে,শুভেন্দুর পুরো বয়ানই ভিডিও রেকর্ডিং করা হয়েছে। তদন্তকারীরা জানান, পুজোর পরে আবার ডাকা হতে পারে এই সাংসদকে। সিবিআই দফতর থেকে বেরিয়ে এ দিন বিকেলে তপসিয়ার তৃণমূল ভবনে গিয়ে মুকুল রায়ের সঙ্গে দেখা করেন শুভেন্দু। দু’জনের মধ্যে কিছুক্ষণ কথাবার্তা হয়। পরে তাঁকে এ নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে শুভেন্দু অবশ্য বলেন, তিনি সেখানে চা খেতে গিয়েছিলেন।

ইতিমধ্যে এ দিন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) মিডল্যান্ড পার্কে সারদা সম্পত্তির দখল নিয়েছে। এ ছাড়াও দার্জিলিং, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি এবং দক্ষিণ দিনাজপুরের মোট ২৪টি সম্পত্তিও এ দিন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ইডি সূত্রের খবর, এর মধ্যে জমি, ফ্ল্যাট, শপিং মল রয়েছে। সব মিলিয়ে এ দিন বাজেয়াপ্ত করা সারদার সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ২০০ কোটি টাকা বলে ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE