গত ১ এপ্রিল থেকে কলকাতা পুর এলাকায় বিভিন্ন গাড়ির পার্কিং ফি বাড়িয়েছে কলকাতা পুরসভা। পুরসভা সূত্রের খবর, ওই ফি বৃদ্ধির বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি। — ফাইল চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ ব্যতিরেকেই কলকাতার মেয়র ফিরহাদ (ববি) হাকিম পুরসভা এলাকায় রাস্তার পার্কিং ফি বৃদ্ধি করেছেন বলে সরাসরি অভিযোগ করলেন তৃণমূলের অন্যতম মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠক ডেকে কুণাল ওই অভিযোগ করেন। যা শুনে ফিরহাদ বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বললে পার্কিং ফি বাড়ানোর নির্দেশ প্রত্যাহার করে নেব। তবে এটা সাংবাদিক বৈঠক ডেকে প্রকাশ্যে না বলে দলের ভিতরে বললেও হত!’’
গত ১ এপ্রিল থেকে কলকাতা পুর এলাকায় মোটরসাইকেল থেকে শুরু করে বিভিন্ন গাড়ির পার্কিং ফি বাড়িয়েছে কলকাতা পুরসভা। পুরসভা সূত্রের খবর, ওই ফি বৃদ্ধির বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি। সেটি ফিরহাদ নিজেও ঘনিষ্ঠদের বলেছেন। মেয়রের ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, পুরসভা এলাকার ফি বাড়ানোর মতো ছোটখাটো বিষয় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে তাঁকে বিব্রত করা উচিত নয়। তা ছাড়া ফিরহাদ কলকাতার মেয়র হওয়ার পাশাপাশি রাজ্যের পুর এবং নগরোন্নয়ন মন্ত্রীও বটে। ফলে তিনি পুরসভা সংক্রান্ত এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। ফিরহাদের ঘনিষ্ঠদের আরও বক্তব্য, কলকাতা শহরের পুর এলাকায় এমনিতেই পার্কিং ফি যতটা হওয়া উচিত, ততটা নয়। দেশের অন্যান্য মেট্রো শহরে ওই পরিমাণ অনেক বেশি। তা ছাড়া এই শহরের বিভিন্ন শপিং মলেও পার্কিং ফি ঘণ্টাপ্রতি এর চেয়ে বেশি।
তবে ওই সিদ্ধান্ত ঘিরে দলের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছেন মেয়র ফিরহাদ। শুক্রবার কুণাল জানান, পুরসভার সিদ্ধান্তে খুশি নন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনিই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। এর পরেই মমতা মেয়রকে জানিয়ে দিয়েছেন, জনতার উপর খরচের বোঝা চাপানো চলবে না। দল ও সরকারের এটাই নীতি। তাই পার্কিং ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে। কুণালের বক্তব্য, পার্কিং ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত মুখ্যমন্ত্রীর অনুমতিক্রমে হয়নি।
কুণালের ওই বক্তব্য জানার পর ফিরহাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী আমাকে নির্দেশ দিলে অবশ্যই ওই নির্দেশ প্রত্যাহার করে নেব। কিন্তু এই কথাটা আমাকে দলের ভিতরেও বলা যেত। মুখ্যমন্ত্রীও বলতে পারতেন। তা না-করে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে বলা হল! তবে আমি দলের অনুগত সৈনিক। দলের নির্দেশ সব সময়ই মেনে চলব।’’ দলের ‘অনুগত সৈনিক’ হলেও ফিরহাদের বক্তব্যে স্পষ্ট যে, সাংবাদিক বৈঠক ডেকে তাঁ সিদ্ধান্ত সম্পর্কে মতপ্রকাশ করাটা তিনি ভাল ভাবে নেননি।
গত শনিবার থেকে শহরে গাড়ি পার্কিংয়ের খরচ বেড়েছে। দু’চাকা, চারচাকা থেকে বাস, পণ্যবাহী গাড়ি— সব ক্ষেত্রেই বর্ধিত হারে পার্কিং ফি দিতে হচ্ছে। কলকাতা পুরসভার ২০২৩-’২৪ অর্থবর্ষের বাজেটে পার্কিং ফি বৃদ্ধির প্রস্তাবটি পাশ হয়। কিন্তু কুণাল বলেন, ‘‘পার্কিং ফি যে বৃদ্ধি করা হয়েছে, এটা মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর অনুমতি সাপেক্ষে হয়নি। তিনি জানতেন না, এই ধরনের একটি চাপ মানুষের উপর পড়তে চলেছে এমন একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’ একইসঙ্গে কুণাল বলেন, ‘‘সিদ্ধান্ত যে স্তরেই নেওয়া হয়ে থাক, কোনও অবস্থায় সরকার বা দল এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টি জানতেন না এবং তাঁর নীতি, সাধারণ মানুষ বা আমজনতার উপর কোনও বাড়তি চাপ না চাপানো। মুখ্যমন্ত্রী মহানাগরিককে জানিয়ে দিয়েছেন, যে সিদ্ধান্ত কলকাতা পুরসভা নিয়েছিল তা প্রত্যাহার করা হবে। এটা দলের সিদ্ধান্ত এবং দলের শীর্ষ নেতৃত্বের তরফ থেকে মাননীয় মহানাগরিককে সেই বার্তা দিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং সম্ভবত আজকের (শুক্রবার) মধ্যেই পুরসভাকে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিতে হবে যে, পার্কিংয়ের ক্ষেত্রে মানুষের উপর বাড়তি যেন কোনও চাপ না পড়ে।’’
কলকাতা পুর এলাকায় আগে প্রতি ঘণ্টায় দু’চাকার গাড়ির ক্ষেত্রে পার্কিং ফি দিতে হত ৫ টাকা। পয়লা এপ্রিল থেকে প্রথম ২ ঘণ্টার জন্য দিতে হচ্ছে ১০ টাকা। ৩ ঘণ্টা রাখলে গুনতে হচ্ছে ৪০ টাকা। ৪ ঘণ্টার জন্য পার্কিং ফি ৬০ টাকা। ৫ ঘণ্টার জন্য দিতে হচ্ছে ৮০ টাকা। ৫ ঘণ্টা পার হলেই ঘণ্টাপিছু দিতে হচ্ছে ৫০ টাকা। চার চাকার গাড়ির ক্ষেত্রে প্রতি ঘণ্টায় দিতে হত ১০ টাকা। শনিবার থেকে দিতে হচ্ছে ২০ টাকা। ২ ঘণ্টার জন্য পার্কিং ফি ৪০ টাকা। ৩ ঘণ্টার জন্য পার্কিং ফি ৮০ টাকা। ৪ ঘণ্টার জন্য দিতে হচ্ছে ১২০ টাকা। ৫ ঘণ্টা পার হলে পার্কিং ফি ১৬০ টাকা। ৫ ঘণ্টা পার হলে ঘণ্টাপিছু দিতে হচ্ছে ১০০ টাকা।
বাস, লরি-সহ পণ্যবাহী গাড়ির ক্ষেত্রেও পার্কিং ফি বৃদ্ধি করা হয়। আগে বাস, লরি পার্কিংয়ের জন্য ২০ টাকা দিতে হত। নতুন ফি কাঠামোয় টাকার অঙ্ক বেড়ে হয়েছে ৪০। ৪ ঘণ্টা পার্কিং করলে দিতে হচ্ছে ২৪০ চাকা। ৫ ঘণ্টার বেশি সময় হলেই গুনতে হচ্ছে ৩২০ টাকা। ৫ ঘণ্টা সময় পার করলেই ঘণ্টাপিছু দিতে হচ্ছে ২০০ টাকা। অতিরিক্ত সময় পার্কিং এলাকায় গাড়ি রাখার প্রবণতা কমাতেই এই পদক্ষেপ করা হয়েছিল বলে পুরসভা সূত্রে খবর।
ওই ঘটনা সম্পর্কে কলকাতার প্রাক্তন মেয়র বিকাশ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বা কুণাল ঘোষ— কারওরই এ নিয়ে কথা বলার অধিকার নেই। সংবিধানসম্মত পুরসভা একটি তৃতীয় স্তরের সরকার। সেই সরকার আইনসিদ্ধ ভাবে যে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সেই সিদ্ধান্তে রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপ করার অধিকার নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy